কোভিড-১৯ এর প্রথম ৩ মাসের বিপর্যস্ত অবস্থা আমরা ভুলে যাইনি। আমরা সকলেই প্রথমে ভয় পেয়েছি, আমাদের স্বাস্থ্যসেবা ছিল একেবারেই অপর্যাপ্ত। সেই সাথে ছিলো নানা অব্যবস্থাপনা, রোগীদের এ হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতাল ছুটাছুটি, তারপরও চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যু-এসব বিষাদ চিত্র আমরা দেখেছি। দেশের কোভিড-১৯ এ মৃত্যু সাড়ে ৫ হাজার ছাড়িয়েছে, শনাক্তের হার ৩ লাখ ৯০ হাজার অতিক্রম করেছে। চট্টগ্রামেও করোনা শনাক্ত হয়েছে ২০ হাজারেরও বেশি, মৃত্যু তিনশয়ের মতো। এখন সারা দেশে মৃত্যু কমলেও সংক্রমণ তেমন একটা কমেনি। এরই মধ্যে আসন্ন শীতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইউরোপ-আমেরিকায় করোনার দ্বিতীয় আঘাত চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার এই দ্বিতীয় ঢেউ এর ব্যাপারে জনগণকে সাবধান করেছেন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছেন। বিশেষ করে মাস্ক ছাড়া ঘরের বাইরে যেতে তিনি সবাইকে নিষেধ করেছেন।
দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, সামগ্রিক জীবনযাত্রার কথা বিবেচনা করে জুন-জুলাই থেকে শিল্পপ্রতিষ্ঠান, কল কারখানা-অফিস আদালত খুলে দিতে হয়েছে। একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য সবকিছু স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে জনগণের মধ্যে ঢিলেঢালা ভাব ও উদাসীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কি গ্রামে, কি শহরে অধিকাংশ মানুষ বাইরে বেরোবার সময় মাস্ক ব্যবহার করছেন না, স্যানিটাইজার ব্যবহার একেবারেই কমে গেছে। মানুষের মধ্যে অসচেতনতা পরিলক্ষিত হচ্ছে যা ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনতে পারে। বাসে গাদাগাদি করে যাত্রী তোলা হচ্ছে। হাটে বাজারে, শপিংমলে রীতিমত ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তরুণরা দলে দলে আড্ডায় মেতে উঠেছে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই।
এ অবস্থা চলতে পারে না। সরকার থেকে প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাবলিক প্লেস এ মাস্ক পরা ছাড়া কিছুতেই যাওয়া যাবেনা- এ বিষয়ের ওপর সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব জোর দিয়েছেন। সামনে দুর্গাপূজার সময় মাস্ক ছাড়া কেউ যাতে না যান তা নিশ্চিত করা হবে বলেও সরকার থেকে জানানো হয়েছে। হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলতেও আমরা অভ্যস্ত হতে পারিনি। অথচ এর মাধ্যমে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। এ থেকে পরিত্রাণের পথ, সকলের মাস্কপরা।
দেশে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীর সংখ্যা কমে গেছে। তবে তার অর্থ এই নয় যে, করোনা নিয়ন্ত্রণে এসে গেছে। করোনার সংক্রমণ থাকলেও অনেকে পরীক্ষা করাচ্ছেন না। হাসপাতালে নানা অব্যবস্থাপনার কারণে অনেকে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে করোনার সংক্রমণ বেড়ে গেলে পরিস্থিতির যে কোন সময় অবনতি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডাক্তার শেখ ফজলে রাব্বি সংবাদ মাধ্যমে বলেন, করোনা চিকিৎসরা আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত, তবে তার অর্থ এই নয় যে, হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হলে আমরা সকলকে চিকিৎসা দিতে পারবো। সুতরাং করোনার অভিঘাত সামাল দিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও সচেতনতা ছাড়া বিকল্প নেই। স্বাস্থ্যসেবা জেলা শহরে কিছুটা থাকলেও উপজেলা-গ্রামে একেবারেই অপ্রতুল। মানুষকে তাই সচেতন করা এবং মাস্ক ব্যবহারে বাধ্য করতে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালানো প্রয়োজন যা ইদানিং লক্ষ করা যাচ্ছে না। বাজার, মসজিদ, জনসমাগমের স্থানে সতর্কবার্তা এবং করণীয় উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি দেয়া উচিত। আমাদের মনে রাখতে হবে করোনার টিকা বা ওষুধ এখনো আবিষ্কার করা যায়নি। তাই সচেতনতা এবং প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাদি পালন করা ছাড়া গত্যন্তর নেই।
মতামত সম্পাদকীয়