ভূঁইয়া নজরুল >>
চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে বাড়ছে কনটেইনারের চাপ। ৪৯ হাজার ১৮ কনটেইনার রাখার ধারণ ক্ষমতার ইয়ার্ডে এখন জমা আছে ৪২ হাজার ৩৮৬ কনটেইনার। কিন্তু আমদানিকারকগণ নিয়মিত ডেলিভারি না নেয়ায় প্রতিদিন বাড়ছে এই স্তূপ। আমদানি পণ্যের বেশিরভাগই পোশাক কারখানার কাঁচামাল। কিন্তু পোশাক কারখানার মালিকরা বলছে তাদের কারখানা বন্ধ থাকায় পণ্য ডেলিভারি নিতে পারছে না। তাহলে এর সমাধান কি?
পোশাক কারখানা বন্ধ থাকায় পণ্য ডেলিভারি নেয়া সম্ভব হচ্ছে না উল্লেখ করে পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার লকডাউন দেয়ায় পোশাক কারখানা খুলতে পারছি না। তাই বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি নিয়ে গোডাউনে রাখার কোনো সুযোগ নেই। সীমিত পরিসরে কারখানা চালুর সুযোগ দিলে বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি নিয়ে নিতাম।’
পণ্য ডেলিভারি নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরকে এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে তা আগেই অনুধাবন করেছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান। আর তাই অফডক থেকে খালি কনটেইনারগুলো ফোর্স শিপমেন্টের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। আর এতে অফডকগুলোতে এখন অনেক স্পেস রয়েছে। একইসাথে অফডকগুলো থেকে রপ্তানিযোগ্য কনটেইনারগুলো প্রতিনিয়ত শিপমেন্ট (জাহাজিকরন) হওয়ায় অফডকে খালি স্পেস তৈরি হচ্ছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, ‘ আমদানিকারকরা যদি কনটেইনার ডেলিভারি না নেয় তাহলে সব পণ্য অফডকগুলোতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেবো। ইতিমধ্যে রাজস্ব বোর্ড ও নৌ মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। হয়তো কিছুদিন পর সেই সিদ্ধান্ত আসতে পারে। আর যদি সেই সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় তাহলে প্রায় ২০ হাজার কনটেইনার অফডকগুলোতে পাঠিয়ে দেয়া যাবে।
অফডকগুলোতে সব ধরনের পণ্য পাঠানো ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের সামনে আর কোনো রাস্তা নেই উল্লেখ করে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ‘বর্তমানে ৩৭ ধরনের পণ্য অফডকগুলোতে পাঠানোর আদেশ রয়েছে। গত বছরের মতো একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সব ধরনের পণ্য অফডকগুলোতে পাঠানোর আদেশ জারি করা গেলে বন্দরের ইয়ার্ডের জট কমানো যাবে। অন্যথায় বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হবে।’
গত বছর লকডাউনে বিভিন্ন শিল্পকারখানা ও পোশাক শিল্পের কারখানা বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারির কার্যক্রম থমকে গিয়েছিল। তখন বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে অফডকগুলোতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সব ধরনের পণ্য রাখার আদেশ জারি করেছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। তখন প্রায় ২০ হাজার কনটেইনার অফডকগুলোতে পাঠিয়ে দিয়েছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এবার অফডকে পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে বেসরকারি অফডকগুলোর সংগঠন বিকডার প্রেসিডেন্ট নুরুল কাইয়ুম খান বলেন, ‘১৭টি অফডকে এখনো ৩০ হাজার কনটেইনার রাখতে পারবো। ঈদের আগে রপ্তানি কনটেইনার ছিল প্রায় ১৯ হাজার। এখন তা কমে এসেছে ১২ হাজার ৮৯৭ একক কনটেইনারে। আগামী কয়েকদিনে তা আরো কমে সাত হাজারে নেমে আসবে। এতে অফডকগুলোতে কনটেইনার রাখার জায়গা আরো বাড়বে।’
উল্লেখ্য, প্রতি বছর ঈদের সময় চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারের চাপ বাড়ে। কিন্তু এবার ঈদের ছুটির পাশাপাশি লকডাউনে পোশাক কারখানা বন্ধ থাকায় পণ্য ডেলিভারি হচ্ছে না। আর এতেই বাড়ছে জট। গত ২৩ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে এই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ সময় সকল শিল্প কারখানা বন্ধ রাখারও আদেশ রয়েছে।