নিজস্ব প্রতিনিধি, টেকনাফ »
নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরার আকুতি জানিয়ে আবারও আওয়াজ তুলেছে বাংলাদেশে আশ্রিত লাখো রোহিঙ্গা। তাদের দাবি, জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় দ্রুতসময়ের মধ্যে যেন তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করা হয়। এজন্য প্রত্যাবাসন ইস্যুতে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ করতে হবে। তা না হলে তারা স্বেচ্ছায় মিয়ানমারের উদ্দেশে যাত্রা করার হুঁশিয়ারি দেন।
মিয়ানমারে চলমান জান্তা ও বিদ্রোহীদের সংঘাতের বিষয়টিও সমাবেশে আলোচনা হয়। এ সংঘাত থেকে আর কোনো রোহিঙ্গা যেন ধৈর্যহারা হয়ে নিজ দেশ ছেড়ে না যায়, সেজন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
শুক্রবার সকাল থেকে উখিয়ার লম্বাশিয়া ক্যাম্পে জড়ো হতে থাকে আশপাশের ক্যাম্পে আশ্রিতরা। সবার পরনে ছিল সাদা শার্ট ও লুঙ্গি। সকাল ৯টার দিকে শুরু হয় সমাবেশ। তিন ঘণ্টার সমাবেশ শেষে মোনাজাত করা হয়। এ সময় আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায় রোহিঙ্গারা।
আয়োজক সূত্রে জানা যায়, সমাবেশে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গারা মিলিত হয়। তাদের মধ্যে সাধারণ রোহিঙ্গা ছাড়াও ছিল ক্যাম্পের হেড মাঝি, সাব মাঝি, ধর্মীয় নেতা ও নারীরা। প্রত্যাবাসন দাবিতে রোহিঙ্গাদের এত বড় সমাবেশ করতে দেখা গেছে গত বছরের ২৫ আগস্ট। একযোগে উখিয়া ও টেকনাফের ১৭টি ক্যাম্পে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এবার সমাবেশ থেকে একযোগে রোহিঙ্গাদের স্লোগান ছিল, অনেক হয়েছে আর নয়, এবার স্বদেশ মিয়ানমারে ফিরতে চাই।
ক্যাম্প-১৩-এর বাসিন্দা হামিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের দেশ আছে। মিয়ানমারের আরাকান আমাদের দেশ। আমরা দেশে ফিরে যেতে চাই।’
ক্যাম্প-২৬-এর বাসিন্দা মো. আমিন বলেন, ‘এক বছর দুই বছর করে ৭ বছর পার করছি পরদেশে। এখানে আর থাকতে চাই না, নিজেদের অধিকার নিয়ে স্বদেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই।’
রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন আরওএফডিএমএনআরসির সংগঠক সৈয়দ উল্লাহ বলেন, ‘মিয়ানমারের আরাকানে আমাদের যারা আত্মীয়স্বজন, মা-বাবা ও ভাই বোন আছে, তাদের ওপর অনেক নির্যাতন হচ্ছে। তাদের প্রতি আহ্বান থাকবে, তারা যেন কোনো দিনও দেশ ছেড়ে চলে না আসে।’
আরওএফডিএমএনআরসির প্রতিষ্ঠাতা মো. কামাল হোসাইন বলেন, ‘সমাবেশে মা-বাবা, ভাই-বোন যারা এসেছে তাদের দায়িত্ব যদি যুবকরা কাঁধে নেয়, তাহলে এক বছরের মধ্যে আমাদের দেশে আমরা ফিরে যেতে পারব।’
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নির্যাতন ও গণহত্যার শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা দেশ ছেড়ে কক্সবাজারের উপকূলবর্তী শরণার্থী শিবির গড়ে আশ্রয় নেন। ইতিহাসের সর্ববৃহৎ এই ঢলে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ মানবিক বিবেচনায় আশ্রয় দেয়। এর আগে থেকে দেশে আরও চার লাখের রোহিঙ্গা বসবাস করে আসছিল। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে এখন ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
অনেকদিন ধরেই রোহিঙ্গাদের তাদের জন্মভূমি মিয়ানমারে পাঠানোর জন্য উদ্যোগ নেওয়া হলেও নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে তা আর বাস্তবায়ন হয়নি। এখনও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি ঝুলে আছে। রোহিঙ্গাদের দাবি, তাদের নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই প্রত্যাবাসন সম্পন্ন করতে হবে মিয়ানমারকে।
এবার মিয়ানমারে ফিরতে চাই
উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের সমাবেশ