নিজস্ব প্রতিবেদক »
সেরা স্কুলের তালিকায় এগিয়ে থাকলেও চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল এবার বোর্ড র্যাংকিংয়ে হয়েছে ৭২তম। একজন শিক্ষার্থী অসম্পূর্ণ পরীক্ষা দেওয়ায় সেরাদের তালিকা থেকে ছিটকে পড়তে হয়েছে এ স্কুলকে।
তবে সেরা হওয়া স্কুলদের তুলনায় বেশি এ প্লাসের (জিপিএ-৫) হার এ স্কুলের। তাই চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের র্যাংকিং কোনোভাবে মানতে রাজি হননি স্কুলটির প্রধান শিক্ষক। বরং লটারিতে শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগকে নেতিবাচক মনে করেছেন তিনি।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবারের মাধ্যমিক স্কুল পরীক্ষায় (এসএসসি) শতভাগ পাস করেছে ৭১টি স্কুলের পরীক্ষার্থীরা। এরমধ্যে প্রথম হওয়া বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫০১ জন, যা মোট অংশগ্রহণ করা পরীক্ষার্থীর হিসেবে ৮৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ। দ্বিতীয় হওয়া ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৬৬ জন, যা মোট অংশগ্রহণ করা পরীক্ষার্থীর হিসেবে ৯৭ দশমিক ২৯ শতাংশ। অন্যদিকে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয় ৪৯৪ জন শিক্ষার্থী। এরমধ্যে একজন শিক্ষার্থী পাস করেনি। তবে এ স্কুল থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করে ৪৮৩ জন, যা মোট অংশগ্রহণ করা পরীক্ষার্থীর হিসেবে ৯৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের এসএসসি ২০২২ এর ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জিপিএ-৫ অর্জনের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল। এ তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। এ স্কুলে ৪৭৯ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৬৬ জন। ৬১০ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে ৫০১ জন জিপিএ-৫ পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। ৪৬৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪৪০ জন জিপিএ-৫ পেয়ে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে মুসলিম হাই স্কুল। আর পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। শতভাগ পাসের হার নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৫৫ জন।
এ নিয়ে কথা হয় চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে। শতভাগ পাসের হারে না থাকায় র্যাংকিংয়ে পিছিয়ে পড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের স্কুল ৭২ তম হয়েছে। এটা একেবারে অসম্ভব। স্কুলের আলাদা সুনাম রয়েছে। প্রতিবছর প্রথম স্থান অধিকার করে। ৭২ তম স্থান বিশ্বাস করিনা। এছাড়া আমাদের ছাত্র চট্টগ্রাম বোর্ডে এবার ১ হাজার ২৮২ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। জিপিএ-৫ দিকেও কম নেই। মাত্র ১০ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পায়নি। সবাই ভালো রেজাল্ট করেছে। এই তালিকা ভুল। এত ভালো ফলাফল পেয়ে কিভাবে ৭২তম স্থানে গেলাম।’
একজন শিক্ষার্থীর পাস না করা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ছাত্রটির নাম সিফাত মিয়া। সে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলো। সে ছাত্রকে পরীক্ষা দিতে বারণ করি। কারণ তার প্রস্তুতির ঘাটতি ছিলো। ছেলেকে না জানিয়ে অভিভাবক স্কুলে আসেন। তারপর নানা অনুরোধ করতে থাকেন তারা। এক পর্যায়ে পরীক্ষা না দিতে পারলে ছেলে আত্মহত্যা করবে এমন হুমকিও প্রদান করেন। পরে পরীক্ষা দিতে দেই। যখনই পরীক্ষা শুরু হয়, ওই ছাত্র বাংলা ১ম পেপার এবং দ্বিতীয় পেপার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। সেখানে কিছু লিখতে না পেরে হল থেকে পালিয়ে যায়। শুধু তাই নয়, সে বাড়ি থেকেও নাকি পালিয়ে যায়। এক ছাত্রের জন্যই এমন অবস্থা স্কুলের।’
শিক্ষার্থীর প্রস্তুতির ঘাটতি থাকার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রথমত ওই ছাত্র লটারিতে ভর্তি হয়। শ্রেণিকক্ষে অনুপস্থিত থাকতো, পড়ায় মনোনিবেশ করতো না। যার কারণে ছাত্রকে গাইড দিতে পারিনি। কলেজিয়েট স্কুল থেকে এই প্রথম ৪৮৩ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। আগে কোন বছর পায়নি। কোন দিক দিয়ে পিছিয়ে নেই।’