রাজিব শর্মা »
সবজির ‘সরবরাহ কম’ এমন ইস্যু তৈরি করে গত দুইদিনের ব্যবধানে সালাদ তৈরির সবজির দাম বেড়েছে তিন থেকে চার গুণ। তার সাথে পাল্লা দিয়ে গ্রীষ্মকালীন সবজির দামও বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা। নিত্যপণ্যের চড়া বাজারে সবজির এমন দাম বৃদ্ধিতে অস্বস্তিতে নগরবাসী। এমন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি, পাইকারি ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট বাণিজ্য বলে মনে করছেন খোদ খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতারাও।
গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে নগরীর রেয়াজউদ্দিন, বকসিরহাট ও কর্ণপুলী মার্কেট কাঁচাবাজারের গোড়াউনসহ বেশকিছু খুচরা বাজার ঘুওে দেখা যায় সবজির অস্বাভাবিক দাম।
গতকাল বাজারে দেখা যায়, যে মানের কাঁচা মরিচ গত পাঁচ দিন আগে বিক্রি হয়েছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকায় তা গতকাল বিক্রি হয়েছে কেজিতে ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা। যা এ কয়েকদিনের ব্যবধানে বেড়েছে তিন থেকে চারগুণ। এছাড়া টমেটোর বাজারও বেশ চড়া। প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হয়েছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা। তাছাড়া শসা বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা। ধনিয়া পাতা বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ২০০ টাকায় যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০ টাকা। গাজর ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। অন্যদিকে সালাদ হিসেবে ব্যবহৃত হয় পেঁয়াজ। গতকাল খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম প্রতিকেজি ৭০-৮০ টাকা বিক্রয় হলেও আমদানি পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
গতকাল রেয়াজউদ্দিন বাজারে সবজি কিনতে আসা, মো. আলমগীর নামের এক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সবজির বাজার হঠাৎ দাম বেড়ে গেল। ৭০ টাকার কাঁচামরিচ হয়ে গেল ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা। ৪০ টাকা টমেটো হয়ে গেল ১৫০ টাকা। যেন দিনদুপুরে ক্রেতাদের পকেট কাটা হচ্ছে।’
বকসিরহাটে সবজি কিনতে আসা মো. আসলাম বলেন, ‘বাজারে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে এখন আর কিছু নেই। ২৫০ গ্রাম মরিচ কিনেছি। ব্যবসায়ীদের এভাবে সুযোগ বুঝে দাম বাড়ানোটা ঠিক হচ্ছে না। সরকারের এ বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত।’
রফিকুল বাহার নামের আরেক সবজি বিক্রেতা বলেন, এখন সবকিছু সিন্ডিকেট কারবারিদের দখলে। চারশো টাকা ছাড়ালো কাঁচামরিচ। অথচ প্রশাসন যেন কিছুই জানে না।’
এদিকে সবজির বাজারে অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিকে খুচরা ব্যবসায়ীরা দায়ী করছেন পাইকার ও আড়তদারদেরকে।
বকসিরহাটের সবজি বিক্রেতা মো. রুবেল বলেন, সবজির বাজারে আগুন। পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা মিলে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়েছে। এখন বাজার করতে এসে মানুষ আমাদেও সঙ্গে তর্ক করছে, বিভিন্ন ধরনের কথা বলছে। ৩৮০ টাকা কাঁচামরিচের দর বলতেও নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। প্রশাসনের এসব নজরদারি প্রয়োজন।
বাজারে বিভিন্ন পাইকার ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কোরবানের কারণে সবজি পরিবহন গাড়িগুলো পশুপরিবহনে ব্যস্ত। যার ফলে দুয়েকটি ট্রাক বাজারে আসলেও তার ভাড়া দিতে হয়েছে দ্বিগুণের চেয়ে বেশি। বাজারে সবজির যোগান কম থাকাতেই গত দুইদিন ধরে কাঁচামরিচ, গাজর, টমেটোর মতো সবজির দাম বেড়েছে।
কাঁচা মরিচের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে রেয়াজউদ্দিন বাজারের বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. হানিফ বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে বাজারে তেমন সবজি আসেনি। সবজি পচনশীল পণ্য। উত্তরবঙ্গ থেকে সবজি বাজারে না আসায় কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে দাম বাড়ছে।
এদিকে সালাদ সবজির সাথে পাল্লা দিয়ে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ দাম বেড়েছে গ্রীষ্মকালীন সবজিরও। গতকাল বাজারে চিচিঙ্গা, বরবটি, ঢেঁড়স বিক্রি হয়েছে কেজিতে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এছাড়া আলু কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। পেঁপে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি, করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।