সুপ্রভাত ডেস্ক >
আগের আটবার মুখোমুখি হলেও ওয়ানডে সিরিজে শ্রীলঙ্কাকে কখনোই হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। নবমবারের চেষ্টায় অবশেষে ইতিহাস গড়লো স্বাগতিকরা। দ্বিতীয় ওয়ানডে ১০৩ রানে (ডি/এল মেথডে) জিতে প্রথমবার লঙ্কানদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের স্বাদ পেয়েছে তামিম ইকবালের দল। আর সেটি হয়েছে এক ম্যাচ হাতে রেখেই। এ জয়ের ফলে ৫০ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ উঠল আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগের চূড়ায়। অবশ্য মিরপুর স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইতিহাস গড়ার দিনে বৃষ্টি বাগড়া দিয়েছে তিনবার। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে শঙ্কা ছিল এই ম্যাচ হওয়া নিয়েও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তেমন কিছুই হয়নি। শেষ দিকে ৩৮ ওভারে ১২৬ রানে শ্রীলঙ্কার ৯ উইকেট তুলে নেওয়ার পর বাংলাদেশকে কিছুক্ষণ অপেক্ষায় রেখেছিল বৃষ্টি। তৃতীয়বারের বৃষ্টির হানার পর নতুন করে লক্ষ্য নির্ধারিতও হয়ে শ্রীলঙ্কার। ৪০ ওভারে ২৪৫। অর্থাৎ শেষ দুই ওভারে প্রয়োজন ছিল ১১৯! কিন্তু এর আগেই ম্যাচ থেকে ছিটকে পেড়েছিল শ্রীলঙ্কা। সফরকারীরা ৪০ ওভারে করতে পারে ৯ উইকেটে ১৪১ রান। শুরুতে অবশ্য দেখে শুনে ব্যাট করছিলেন দুই ওপেনার দানুশকা গুনাথিলাকা ও কুশল পেরেরা। কিন্তু অভিষিক্ত পেসার শরিফুলের গতির কাছে থিতু হতে পারেননি না পেরেরা। অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা এই পেসারের বলে ক্যাচ উঠিয়ে দিয়েছেন। পেরেরা ফিরেছেন ১৪ রানে। খবর বাংলাট্রিবিউন।
এর পর গুনাথিলাকা ও পাথুম নিসাঙ্কা জুটি গড়ে সেই ধাক্কা সামাল দিতে থাকেন। মোস্তাফিজের আঘাতে বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি এই জুটি। ১৪তম ওভারে কাটার মাস্টারের বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ২৪ রান করা গুনাথিলাকা।
এর পর পাথুম নিসাঙ্কার উইকেট তুলে নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে চাপে ফেলে দেন সাকিব। পুল করতে গিয়ে তামিমের তালুবন্দি হয়ে ফিরেছেন তিনি ২০ রানে।শ্রীলঙ্কার বিপদ আরও বাড়িয়ে দেন মেহেদী মিরাজ। লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন কুশল মেন্ডিসকে। মূলত এই দুই স্পিনারই বিপদ ডেকে আনে শ্রীলঙ্কার। মেন্ডিসকে ফেরানোর পর সাকিব আবার আঘাত হানলে নড়বড়ে হয়ে পড়ে লঙ্কানদের ব্যাটিং। ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ হওয়া সাকিব ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে (১০) ফিরিয়েছেন এলবিডাব্লিউতে। এমন পরিস্থিতিতে দাসুন শানাকা মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ছিলেন। মেরেছেন ছক্কাও। কিন্তু মিরাজকে উঠিয়ে মারতে গিয়ে শেষ রক্ষা হয়নি তার। ১১ রানে ক্যাচ হন মাহমুদউল্লাহর। এর পর শুধু আসা-যাওয়া করেছেন লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। আগের ম্যাচে হুমকি হয়ে দাঁড়ানো ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা এদিন তেমন কিছু করতে পারেননি। ৬ রান করেই বোল্ড হন মেহেদী মিরাজের। আশেন বান্দারা (১৫) ও লাকশান সান্দাকানকে ফিরিয়ে জয়টাকে আরও কাছে নিয়ে আসেন মোস্তাফিজুর রহমান। এর পরেই শেষবারের মতো নামে বৃষ্টি। ১৬ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজ। ২৮ রানে সমসংখ্যক উইকেট নেন মিরাজও। ব্যাট হাতে ব্যর্থ হলেও সাকিব ৩৮ রানে নিয়েছেন দুটি উইকেট। আর একটি নিয়েছেন অভিষিক্ত পেসার শরিফুল ইসলাম।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করে সবকটি উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ সংগ্রহ করেছিল ২৪৬ রান। টপ অর্ডারের ব্যর্থতায় স্বাগতিকরা ৭৪ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল। সেখান থেকে দলকে টেনে তুলেছেন গত ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৮৭ রান আসা এই জুটির কল্যাণেই পরে ভালো সংগ্রহ পেয়েছে স্বাগতিকরা। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের (৪১) বিদায়ে গুরুত্বপূর্ণ জুটি ভাঙলেও নিজ লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন মুশফিক। মাঝে পর পর আফিফ হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজ ফিরলেও মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটেনি তার। বৃষ্টি বিরতির পর তুলে নেন ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি। তাও প্রায় দুই বছর পর! আর তার সেই ইনিংসে ভর করেই চ্যালেঞ্জিং স্কোর পায় স্বাগতিকরা। শেষ উইকেটে মুশফিক বিদায় নেওয়ার আগে ১২৭ বলে করেছেন ১২৫ রান। তার বিদায়েই বাংলাদেশ অলআউট হয়ে যায় ৪৮.১ ওভারে। ম্যাচসেরাও হন মুশফিক।