নিজস্ব প্রতিবেদক, রাঙামাটি »
হ্রদ পাহাড়ের শহর রাঙামাটি। যে শহর হতে পারত দেশের পর্যটনের প্রধান পার্বত্যতীর্থ, সেই শহরের পর্যটন এখন আশা-নিরাশার দোলাচলে ঝুলছে। স্বাধীনতার পর আশির দশকে শহরের শেষপ্রান্তে যে ঝুলন্তসেতু কেন্দ্রিক পর্যটনকেন্দ্র হড়ে উঠেছিলো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়, তারপর বলার মতো আর কিছুই হয়নি এই শহরে কিংবা দূর পাহাড়ে, সরকারি উদ্যোগে। বরং শত সীমাবদ্ধতাকে জয় করে ব্যক্তি পর্যায়েই গড়ে উঠছে ছোট বড় হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট কিংবা পর্যটনকেন্দ্র।
জানা গেছে, পর্যটন শহর হিসেবে রাঙামাটির খ্যাতি থাকলেও এই শহর এখনো নানা কারণে পর্যটকবান্ধব হয়ে উঠতে পারেনি। শহরে চলাচলকারী একমাত্র বাহন অটোরিকশার বিকল্প যান না থাকায় রিজার্ভগাড়িতেই ঘুরাফেরা করতে হয় পর্যটকদের। অটোরিকশা চালকদেরও পর্যটকদের সাথে কেমন ব্যবহার করা উচিত, সেই সম্পর্কিত কোন প্রশিক্ষণ বা গাইডলাইন নেই। ফলে পর্যটকদের সাথে ভাড়া নিয়ে প্রায়ই তর্কে লিপ্ত হন তারা। বেশিরভাগ হোটেলও এখনো পেশাদার হয়ে উঠতে পারেনি। পর্যটকবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারছেনা তারা। ফলে একটি পর্যটন শহরের যে চরিত্র তা এখনো গড়ে উঠেনি শহরে।
রাঙামাটির সবচেয়ে দূরের গন্তব্য আলোচিত পর্যটন স্পট সাজেক। কিন্তু এই সাজেকে যাওয়ার পথ রাঙামাটি হয়ে নয়, খাগড়াছড়ি হয়েই। রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত এই পর্যটন স্পটের উদ্যোক্তাদের বড় অংশটিও তাই রাঙামাটির নয়। এখানে গড়ে উঠেছে ছোটবড় শতাধিক কটেজ ও রিসোর্ট। এসব কটেজের ভাড়া ১ হাজার থেকে ৮ হাজার পর্যন্ত। তবে ভাড়া যাই হোক না কেনো নয়নাভিরাম এই স্থানে কটেজের বুকিং পাওয়াটাই দূরহ কিছু কিছু সময়ে। পর্যটক মৌসুমে উপচেপড়া ভিড় এই স্থানটির পর্যটনে গতি আনলেও তা থেকে রাঙামাটিবাসীর অর্থনৈতিক উপকার খুব কমই হয়, কারণ সাজেককেন্দ্রিক পর্যটনের উপকারভোগী মূলত প্রতিবেশী পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িই। তাই সাজেক যেনো রাঙামাটির দূর আকাশের তারা।
এদিকে রাঙামাটিতে পর্যটনের সবচেয়ে আশার দিক এখানকার পর্যটনে নিরাপত্তা কখনই বড় কোন ইস্যু ছিলোনা, নেইও। তবে স্থানীয় রাজনীতির উত্থানপতন কিংবা হানাহানির প্রভাবতো পড়েই এখানকার পর্যটনে। আঞ্চলিক দলগুলোর সশস্ত্র সংঘাতের খবরে পর্যটকের প্রবাহ যেমন কমে, তেমনি প্রভাব পড়ে পর্যটনেও। যদিও সর্বশেষ দুই দশকে জেলায় পর্যটকদের উপর হামলা কিংবা অপহরণের কোন ঘটনা নেই। কিন্তু পর্যটকদের গাড়িবহরে হামলার পর নিরাপত্তার কারণে সাজেকে আইনশৃংখলাবাহিনীর প্রহরায় পর্যটকদের আনা-নেয়ার বিষয়টি অস্বস্তিকরতো বটেই। এর বাইরে রাঙামাটিতে পর্যটনে খুব বেশি নিরাপত্তার ঘাটতি নেই, নেই কোন অঘটনও।
উদ্যোক্তা ও পর্যটন বিষয়ক লেখক ললিত চন্দ্র চাকমা বলছেন, ‘প্রাকৃতিকভাবে এই জনপদ শতভাগ পর্যটকবান্ধব, কিন্তু সুযোগ সুবিধা, ব্যবস্থাপনায়, অবকাঠামোতে একেবারেই শূন্য। যা কিছুটা হচ্ছে সবই বেসরকারিভাবে। সরকারিভাবে এসব নিয়ে সুপরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে। যারা এসব ব্যবসায় এগিয়ে আসছেন তাদের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দিতে হবে। প্রকৃতিকে কোন প্রকার আঘাত না করে, স্থানীয়দের সম্পৃক্ত করেই এখানকার পর্যটনকে এগিয়ে নিতে হবে।’
রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশন এর ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া বলেন, ‘দীর্ঘদিনের ক্ষতি তো আর মুহূর্তেই স্বাভাবিক হবে না। তবে ধীরে ধীরে সবকিছু স্বাভাবিক হচ্ছে। পর্যটকদের আগমন বাড়ছে। বুকিং বেড়েছে। আশা করছি আগামী পর্যটন মৌসুমেই মোটামুটি স্বাভাবিক হয়ে যাবে সবকিছুই।’
রাঙামাটির পর্যটন নৌ ঘাটের ইজারাদার রমজান আলী বলেন, ‘প্রথম কদিনের তুলনায় এখন বলা যায় অনেক ভালো আছি। ঝুলন্ত সেতু পানিতে ডুবে যাওয়ায় একটু বিপাকে পড়েছি। পানি শীঘ্রই কমে যাবে। তবে পর্যটকের আগমন বেশ বেড়েছে।’