Blog Page 2758

ফিলিপাইনে শক্তিশালী টাইফুন আঘাত হানছে

সুপ্রভাত ডেস্ক :

করোনা ভাইরাস মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মধ্যেই ফিলিপাইনে শুক্রবার প্রচন্ড শক্তিশালী টাইফুন আঘাত হানতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই ১ লাখ ৪০ হাজার লোক আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
টাইফুন ভংফং উপকূলের দিকে এগিয়ে আসতে থাকায় বৃহস্পতিবার থেকেই ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে, উপকূলীয় হাজার হাজার মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে ঘরে থাকা লাখ লাখ ফিলিপিনো এই তান্ডবের মধ্যে বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে। তবে, ১ লাখ ৪১ হাজার ৭০০ লোক এলাকা ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে।
স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা কালিটো এভরিজ এএফপিকে বলেন, ‘আমরা মাস্ক পড়ি এবং সব সময় সামাজিক দুরত্ব মেনে চলি।’ তবে, সরিয়ে আনা লোকদের মধ্যে এটি বজায় রাখা কঠিন। তবুও আমরা আমাদের সর্বোত্তম প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।

কতৃপক্ষ বলেছে, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক করে লোক তারা কেন্দ্রগুলোতে রাখার চেষ্টা করবে, যাতে জনঘনত্ব কমে, যাদের মাস্ক নাই, তাদের সকলকে মাস্ক দেয়া হবে এবং পরিবারগুলোকে আলাদা আলাদা রাখা হবে।

অনেক আশ্রয়কেন্দ্র ইতোমধ্যে করোনার কোয়ারেন্টিন সেন্টারে পরিণত করা হয়েছে।
ফিলিপাইনের মধ্যঅঞ্চল দিয়ে প্রথম ঝড়টি আঘাত হানছে, এই অঞ্চল দেশটির অন্যতম করোনা আক্রান্ত এলাকা, এখানে ১১ হাজার ৮০০ লোক করোনা আক্রান্ত এবং ৭৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
একাধিক বিপর্যয়ে ঢেকে ফেলা ফিলিপাইনে টাইফুনের আঘাতের আগে দেশটির সক্রিয় মেয়ন আগ্নেয়গিরি এলাকা থেকে ২২ হাজার লোক সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
ফিলিপাইন দ্বীপমালা প্রতিবছর টাইফুনের আঘাতে বিপর্যস্ত হয়ে থাকে, বছরে গড়ে অন্তত ২০টি টাইফুনের মুখোমুখি হতে হয় দেশটিকে।

করোনা ভাইরাস : সংক্রমণ ঠেকাতে প্রযুক্তির সাহায্য নিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া

সুপ্রভাত ডেস্ক :

দক্ষিণ কোরিয়ায় দ্বিতীয় দফা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সামাজিক সংক্রমণের পর্যায়ে যাওয়ার আগেই প্রযুক্তির সাহায্যে উপসর্গহীন বাহকদের খুঁজে বের করছে দেশটি।

দ্য কোরিয়া হ্যারাল্ড জানায়, সিউলের ব্যস্ততম এলাকা ইতায়েওয়ানের ক্লাব ও বারগুলোই দেশটির করোনা সংক্রমণের সবচেয়ে বড় ক্লাস্টার। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, নতুন আক্রান্তদের ১৩৩ জনের ক্ষেত্রেই ইতায়েওয়ানের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ৮৩ জন সশরীরে সেখানে গিয়েছিলেন। বাকিরা অন্যদের সংস্পর্শ থেকে আক্রান্ত হয়েছেন।

সংক্রমণ এড়াতে এই ক্লাস্টারকে ঘিরে মহামারি অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ব্যাপক হারে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ইতায়েওয়ান ক্লাস্টারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৩৫ হাজার মানুষের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে।

কেসিডিসির উপ-পরিচালক কেয়ান জুন উক জানান, কিউআর কোড ও ব্লুটুথের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে কারা সেখানকার বার ও ক্লাবে গিয়েছিলেন সেসব তথ্য খুঁজে বের করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘কারো গোপনীয়তা লঙ্ঘন না করে, আইনি কাঠামোর মধ্যেই আমরা অস্থায়ীভাবে কয়েকজনের নির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করে অনুসন্ধান করেছি।’

তিনি আরও জানান, এ সপ্তাহের শেষে দেশটি জটিল সময় পার করতে যাচ্ছে। কয়েকটি অঞ্চলে সামাজিক সংক্রমণের দিকে মোড় নিতে পারে।

দেশটিতে নতুন আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশেরই কোনো ধরনের উপসর্গ দেখা যায়নি। ফলে, উপসর্গহীন বাহকদের মাধ্যমে ঝুঁকিতে থাকা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ ঘটতে পারে বলে মনে করছে কেসিডিসি।

সংক্রমণ ঠেকাতে দেশটির ১৫টি শহর ও প্রদেশে জনসমাবেশসহ চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

 

করোনা ভাইরাস : অর্থনীতির ক্ষতি হবে ৮.৮ ট্রিলিয়ন ডলার: এডিবি

সুপ্রভাত ডেস্ক :

করোনা মহামারীর কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ৫ লাখ ৮০ হাজার কোটি থেকে ৮ লাখ ৮০ হাজার কোটি ডলার ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এমন একটি পূর্বাভাস দিয়েছে। গত মাসে তারা যে পূর্বাভাস দিয়েছিল এটি তার দ্বিগুণের বেশি। এবং এই ক্ষতির পরিমান মোট বৈশ্বিক উৎপাদনের ৬ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ।

নতুন পূর্বাভাসে ক্ষতির পরিমান বাড়িয়ে দেখানোর কারণ হিসেবে এডিবি বলছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তারের গতি কমিয়ে আনতে বিভিন্ন দেশ নানা নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে। এতে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছে। বিশ্বের অভিভাবক প্রতিষ্ঠানগুলোও মহামারীর প্রভাবে অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এমন চরম হতাশাজনক হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছে।

এডিবির প্রধান অর্থনীতিবিদ ইয়াসুয়ুকি সোয়াদা বলেন, এই নতুন বিশ্লেষণ বিশ্ব অর্থনীতিতে কভিড-১৯ মহামারীর খুবই সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে আরো বিস্তারিত ধারণা দিয়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নীতি কৌশলের গুরুত্বও এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

এডিবি বলছে, অর্থনীতির সম্ভাব্য ক্ষতির সর্বোচ্চ যে অংক দেয়া হয়েছে সেটি মূলত মানুষের চলাচল এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রম ছয় মাস পর্যন্ত বন্ধ থাকবে- এটা ধরে নিয়ে। আর সর্বনিম্ন হিসাবটা এসেছে এসব বিধিনিষেধ তিন মাস থাকবে ধরে নিয়ে।

এদিকে অর্থনীতি রক্ষায় বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাপকভাবে সুদ হার কমাতে শুরু করেছে এবং বিপুল পরিমান প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করছে। অর্থ বাজার ও বৈশ্বিক অর্থনীতির মহামন্দার কথা বিবেচনা করে অর্থ জোগানের উৎসের কথা অতোটা বিবেচনায় না নিয়েও আগ্রাসী পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে অনেক দেশে।

অবশ্য এরই মধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটি আঘাত হানার চিত্র গতকাল প্রকাশ পেল। ‍যুক্তরাষ্ট্রে এক সপ্তাহে বেকার মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখে পৌঁছে গেছে। দেশটির প্রায় এক চুতর্থাংশ কর্মজীবী প্রণোদনা দাবি করছে।

 

চীনের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার হুমকি ট্রাম্পের

সুপ্রভাত ডেস্ক :

মহামারি করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে চীনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেইজিংয়ের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করান হুমকি দিয়েছেন। কোভিড-১৯ ভাইরাসে বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩ লাখ ছাড়ানোর পর তিনি এমন হুমকি দিলেন। খবর এএফপি’র।

এদিকে দ্বিতীয় ধাপে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকা সত্ত্বেও স্থবির হয়ে পড়া অর্থনীতির চাকা ফের সচল করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও স্থানীয় সরকার লকডাউন শিথিল করছে।

তবে, এক্ষেত্রে শুক্রবার সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে, বিশ্বের অতি দরিদ্র কিছু দেশের মানুষ অধিক করোনা ঝুঁকির মুখে রয়েছে। করোনা ভাইরাস আরো ছড়িয়ে পড়া রোধে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের প্রায় ২৫ কোটি মানুষ কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে বলে ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে।

খবরে বলা হয়, চীনের উহান নগরী থেকে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর কেবলমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই কোভিড-১৯ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে এ পর্যন্ত প্রায় ৮৬ হাজারে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের যেকোন দেশের মৃতের সংখ্যার তুলনায় এ সংখ্যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এছাড়া করোনা ভাইরাসে বিশ্বের মোট আক্রান্তের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ যুক্তরাষ্ট্রের।

বৃহস্পতিবার প্রচারিত এক সাক্ষাতকারে ট্রাম্প গত বছরের শেষের দিকে উহানে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর এ সংকটের প্রকৃত ভয়াবহতার কথা গোপন করায় বেইজিংকে ফের দায়ী করেন।
তিনি বলেন, এক্ষেত্রে ‘আমি চীনের ব্যাপারে খুবই ক্ষুব্ধ। এ মুহূর্তে এটাই আমি আপনাদের বলবো।’
এ ব্যাপারে চীনের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র কি করতে পারে জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা চীনের সাথে সম্পর্ক একেবারে বিচ্ছিন্ন করতে পারি।’ ট্রাম্প করোনাভাইরাসকে ‘চীনের প্লেগ’ হিসেবে অভিহিত করেন।

বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীন পরস্পরের মধ্যে প্রতি বছর কয়েকশ’ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য করে থাকে।

কক্সবাজারে একদিনেই ১৮৪ টেস্টে ২১ করোনা রোগী শনাক্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার :

কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজের ল্যাবে ৩ রোহিঙ্গাসহ ২১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

শুক্রবার (১৫মে) ১৮৪ জনের স্যাম্পল টেস্টের মধ্যে তাদের রিপোর্ট ‘পজেটিভ’ পাওয়া গেছে। এছাড়া রামু’র ২ জন পুরাতন করোনা রোগীর ফলোআপ রিপোর্ট ‘পজেটিভ’ হয়েছে।

কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারি অধ্যাপক (ট্রপিক্যাল মেডিসিন ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ) ডা. মোহাম্মদ শাহজাহান নাজির এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

শুক্রবার (১৫ মে) ‘পজেটিভ’ শনাক্ত হওয়া ২১ জনের মধ্যে কক্সবাজার সদর উপজেলায় ১ জন, চকরিয়া উপজেলায় ১৫ জন, পেকুয়া উপজেলায় ১ জন, কুতুবদিয়ায় ১ জন এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী ৩ জন।

এ নিয়ে কক্সবাজার জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হলো ১৫০ জন।

সেখানে চকরিয়া উপজেলায় ৫২ জন, কক্সবাজার সদর উপজেলায় ৩৬ জন, পেকুয়া উপজেলায় ২১ জন, মহেশখালী উপজেলায় ১২ জন, উখিয়া উপজেলায় ১৪ জন, টেকনাফ উপজেলায় ৭ জন, রামু উপজেলায় ৪ জন, কুতুবদিয়া উপজেলায় ১ জন এবং রোহিঙ্গা শরনার্থী ৪ জন। কুতুবদিয়া উপজেলায় ১ জন করোনা ভাইরাস জীবাণু শনাক্ত করা হলো।

কক্সবাজারে করোনা শনাক্ত একজন মারা গেছেন। তিনি রামু উপজেলার কাউয়ার খোপ ইউনিয়নের পূর্ব কাউয়ার খোপ গ্রামের মোহাম্মদ আবদুল্লাহর স্ত্রী।

সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৩ জন করোনা রোগী।

চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান

বাসস :

আজিমপুর কবরস্থানে চির নিদ্রায় শায়িত হলেন জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আজিমপুর কবরস্থানে বাবার কবরে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের প্রতি গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
দাফনের আগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় তার ছেলে আনন্দ জামান, ভাই আক্তারুজ্জামানসহ পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়রা অংশগ্রহণ করেন।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
বাংলা একাডেমির আজীবন সভাপতি অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। হৃদরোগ, কিডনি ও ফুসফুসে জটিলতা, পারকিনসন্স ডিজিজ এবং প্রোস্টেটের সমস্যার পাশাপাশি শেষ দিকে তার রক্তেও ইনফেকশন দেখা দিয়েছিল।

অসুস্থতা বাড়তে থাকায় গত ২৭ এপ্রিল তাকে রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ৯ মে তাকে নেয়া হয়েছিল ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে।
ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান দেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদ, লেখক ও গবেষক, ভাষাসংগ্রামী, মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী, সংবিধানের অনুবাদক, দেশের সব প্রগতিশীল আন্দোলনের অগ্রবর্তী মানুষ।
জাতির বিবেকসম এ মানুষটি ১৯৩৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার বশিরহাটে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইমেরিটাস অধ্যাপক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন আনিসুজ্জামান। ১৯৮৫ সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন।

এই ভূখন্ডে ধর্মান্ধতা ও মৌলবাদবিরোধী নানা আন্দোলনে তার সক্রিয় ভূমিকা ছিল। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গঠিত গণআদালতে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ড. কুদরাত-এ-খুদাকে প্রধান করে গঠিত জাতীয় শিক্ষা কমিশনের তিনি সদস্য ছিলেন। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস নিয়ে তার গবেষণা বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য।

আনিসুজ্জামান শিক্ষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য একাধিক পুরস্কার লাভ করেছেন। প্রবন্ধ গবেষণায় অবদানের জন্য ১৯৭০ সালে তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। শিক্ষায় অবদানের জন্য তাকে ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। শিক্ষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য তাকে ভারত সরকার কর্তৃক প্রদত্ত তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মভূষণ পদক প্রদান করা হয়। সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করে।

এছাড়া, তিনি ১৯৯৩ ও ২০১৭ সালে দুইবার আনন্দবাজার পত্রিকা কর্তৃক প্রদত্ত আনন্দ পুরস্কার, ২০০৫ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি. লিট. ডিগ্রি এবং ২০১৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জগত্তারিণী পদক লাভ করেন। ২০১৮ সালের ১৯ জুন বাংলাদেশ সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়।
আনিসুজ্জামানের রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক। উল্লেখযোগ্য রচনাবলির মধ্যে রয়েছে- ‘মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য’, ‘স্বরূপের সন্ধানে’, ‘পুরোনো বাংলা গদ্য’, ‘আঠারো শতকের বাংলা চিঠি’, ‘কালনিরবধি’, ‘বিপুলা পৃথিবী’, ‘আমার একাত্তর’, ‘স্মৃতিপটে সিরাজুদ্দীন হোসেন’, ‘শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ স্মারকগ্রন্থ’, ‘নারীর কথা’, ‘মধুদা, ফতোয়া’, ‘ওগুস্তে ওসাঁর বাংলা-ফারসি শব্দসংগ্রহ’ ও আইন-শব্দকোষ।
বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি অলক্ত পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার ও ডিগ্রিতে ভূষিত হয়েছেন।

জেনারেল হাসপাতালে পুলিশ ও বৃদ্ধের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক :
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পুলিশ সদস্য নাইমুল হক (৪১) ও সলিল বিশ্বাস (৭৫) মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত নাইমুল করোনা উপসর্গ নিয়ে এবং সলিল বিশ্বাস কোভিড-১৯ পজেটিভ আসায় জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক জামাল মোস্তফা।
তিনি বলেন, ‘আজ (শুক্রবার) দুপুরে একজন পুলিশ সদস্য এবং বৃহস্পতিবার দিনগত রাত ১টার দিকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সলিল বিশ্বাস নামে ৭৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি মারা গেছেন। সলিল বিশ্বাসের কোভিড-১৯ পজিটিভ আসায় তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এছাড়া পুলিশ সদস্যটি গতকাল (বৃহস্পতিবার) জ্বর-সর্দিসহ করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি হন। আজ সকালে তার অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউতে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেই দুপুর ১২ টার দিকে তার মৃত্যু হয়েছে। আমরা তার নমুনা সংগ্রহ করে বিআইটিআইডিতে ( াংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস) পাঠিয়েছি।’
চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩০ জন নারী-পুরুষ। এছাড়া উপসর্গ নিয়ে মৃতের সংখ্যা ২০ জনের বেশি। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১২৪ জন রোগী।

নিম্নচাপে পরিণত হলো লঘুচাপটি

নিজস্ব প্রতিবেদক :
নিম্নচাপে পরিণত হলো সেই লঘুচাপ। দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং দক্ষিণ আন্দামান সাগর এলাকায় সৃষ্ট লঘুচাপটি আজ সকালে নিম্নচাপে রুপ নিয়েছে। এর প্রভাবে গভীর বঙ্গোপসাগরে ঝড়ো হাওয়া বইছে এবং এটি ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক নম্বর বিশেষ বুলেটিনের তথ্যমতে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি আরো ঘনীভূত হচ্ছে। আজ দুপুর ১২টায় নিম্নচাপটি চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ১৩৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার থেকে ১২৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা থেকে ১৩৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা খেকে ১২৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। নিম্নচাপটি ধীরে ধীরে ঘনীভূত হচ্ছে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে বলে দেশের সমুদ্র বন্দরগুলোকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
এদিকে চলতি মাসের আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বঙ্গোপসাগরে এক বা একাধিক নিম্নচাপ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। এসব নিম্নচাপ থেকে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনাও বলা হয়েছে। বছরের এসময়ে সাগরে নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়ে থাকে। এপ্রিল-মে ও সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুম।

করোনাভাইরাস: দেশে আক্রান্ত বিশ হাজার ছাড়ালো, মৃত্যু ২৯৮ জন

আনোয়ারায় করোনা আক্রান্তের দাফন করা হচ্ছে

সুপ্রভাত ডেস্ক

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১ হাজার ২০২ জন নতুন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন, যা এ পর্যন্ত দিনের হিসেবে সর্বোচ্চ।

আর এ সময়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ১৫ জন, ফলে মোট মৃত্যুর সংখ্যা এখন ২৯৮।

নিহতদের মধ্যে পুরুষ সাত জন ও মহিলা আটজন।

অন্যদিকে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এখন ২০ হাজার ৬৫।

নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

গত ২৪ ঘন্টায় ২৭৯ জন সুস্থ হয়েছে এবং এ নিয়ে মোট সুস্থ হলেন ৩ হাজার ৮৮২ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় ৮ হাজার ৫৮২ টি নমুনা পরীক্ষা করে রোগী শনাক্তের এসব ফলাফল পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা।

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৪১টি প্রতিষ্ঠানে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় দিনে ১০,০০০ নমুনা পরীক্ষার টার্গেট করা হলেও তা এখনও বাস্তবায়ন করা যায়নি।

কর্মকর্তারা বলেছেন, নমুনা সংগ্রহ থেকে শুরু করে লোকবলের সমস্যার কারণে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিলম্ব হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলেছেন, বাংলাদেশে এই পরীক্ষা শুরুর পর দুই মাসেও এর সংখ্যা বাড়াতে না পারলে সংক্রমণের সঠিক পরিস্থিতি বোঝা যাবে না।

বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস রোগী শনাক্তের কথা জানানো হয় ৮ই মার্চ। তবে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর কথা ঘোষণা করা হয় ১৮ই মার্চ।

 

ধপ করে চারিদিকে অন্ধকার

আবদুল মান্নান

১৪ মে বুহষ্পতিবার । 4:55 pm!! RIP Abba! সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও আমার মোবাইলে আনন্দের ক্ষুদে বার্তা। আনন্দ জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের একমাত্র ছেলে । বাবার মৃত্যু সংবাদটা এই ভাবেই দিল। মনে হল ধপ করে সব বাতিগুলো নিভে গেল, চারিদিকে সব অন্ধকার । দেশে ও দেশের বাইরে বাংলা ভাষাভাষি মানুষ যেখানেই থাকুন না কেন তারা প্রফেসর আনিসুজ্জামানকে চিনেন না তেমন কাউকে পাওয়া যাবে না । দীর্ঘদিন ভুগছিলেন বার্ধক্য জনিত রোগে । কবে বৃহষ্পতিবার রাতে জানা গেল স্যার করোনা পজিটিভ ছিল । ভর্তি হয়েছিলেন একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে । প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ও পারিবারিক ইচ্ছায়  কয়েক দিন আগে তাঁকে সিএমএইচএ ভর্তি করানো হয় । প্রধানমন্ত্রী তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডাঃ আবদুল্লাহকে নিয়োজিত করেছিলেন তাঁর চিকিৎসার জন্য । প্রফেসর আনিসুজ্জামান প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি শিক্ষকও ছিলেন । শুধু প্রধানমন্ত্রী কেন বলি তিনি জাতির প্রগতিশীল অংশের প্রতিটি মানুষের শিক্ষক ছিলেন প্রফেসর আনিসুজ্জামন। প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধা  করতেন তাঁর শিক্ষককে অসম্ভব রকমের ।  সব কিছু ছেড়ে তাঁর হাজারো গুণমুগ্ধকে ছেড়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তিনি ছিলেন বাংলার একজন বাতিঘর। সেই বাতিঘর চিরতরে নিভে গেল । ক’দিন আগে আর এক বাতিঘর প্রফেসর জামিলুর রেজা চৌধুরী আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন । দেশটা এখন বামানে ভরে যাচ্ছে ।

প্রফেসর আনিসুজ্জামানের সাথে আমার প্রথম পরিচয় ১৯৬৯ সালে তাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি’র এক অনুষ্ঠানে । তখন আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র । একই সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন রিডার হিসেবে (সহযোগী অধ্যাপক)। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর যোগ দেয়ার পিছনে কারণ ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রমোশন পাওয়ার সহজে সুযোগ হচ্ছিল না কারণ কোন পোস্ট ছিল না । তখন একটা পোস্ট সৃষ্টি করা কত দুরুহ ছিল তা আজকের প্রজন্মকে বুঝানো যাবে না । আর আপগ্রেডেশন শব্দটি ছিল অজানা । ১৯৭৩ সালে আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিলে তাঁর সাথে আমার  ঘনিষ্ট হওয়ার সুযোগ হয় । তিনি এত সিনিয়র হওয়া সত্ত্বেও আমাদের মতো এত জুনিয়রদের কাছে টেনে নিতে পারতেন তা না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না । চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর আনিসুজ্জামান যোগ দেয়ার পর তিনি শুধু এই বিশ্ববিদ্যালয়কেই আলোকিত করেন নি তিনি চট্টগ্রামের সাহিত্য ও সাংষ্কৃতিক জগৎকেও সমৃদ্ধ করেছিলেন, আরোকিত করেছিলেন  । সেই সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন প্রফেসর আনিসুজ্জামান ছাড়াও সৈয়দ আলি হাসান, আবু হেনা মোস্তাফা কামাল, এখলাসউদ্দিন আহমদে, শামসুল হক (পদার্থ বিজ্ঞান), আবদুল করিম, আলমগির মোহাম্মদ সিরাজুদ্দিন, মোঃ ইউনুস, রশিদ চৌধুরী, মুরতাজা বশির, দেবদাস চক্রবর্তি, মোহাম্মদ আলি, আলি ইমদাদ খান প্রমূখরা । এঁদের অনেকেই আজ আমাদের মাঝে নেই কিন্তু তাঁরা আমাদের প্রজন্মের জন্য এক একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র । ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি সহ আরো বেশ ক’জন সিনিয়র শিক্ষক ক্যাম্পাস ছেড়ে সপরিবারে ভারতে চলে যান । পথে তাঁরা এক রাতের জন্য আশ্রয় নিয়েছিলেন গহিরা গ্রামের দানবীর নূতন চন্দ্র সিংহের বাড়িতে । । চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এক রাতের আশ্রয় দেয়ার অজুহাতে রাউজানের কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধি সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী নিজ হাতে নূতন চন্দ্র সিংহকে  গুলি করে হত্যা করে । প্রফেসর আনিসুজ্জামান মানবতা বিরোধী অপরাধ  ট্রাইবুনালে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিচার চলাকালিন সময়ে সেখানে সাক্ষ্য দিতে গিয়েছিলেন । মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময় তিনি প্রবাসী সরকারের পরিকল্পনা কমিশনে একজন সদস্য হিসেবে যোগ দেন, দেশ ত্যাগী শিক্ষকদের একটি জোট গঠন করার জন্য চেষ্টা করেন।

দেশ স্বাধীন হলে প্রফেসর আনিসুজ্জামান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার শিক্ষক হিসেবে ফিরে আসেন । তখন হতেই তিনি হয়ে উঠেন সকলের আনিস স্যার । কোন অনুষ্ঠান হলে হতে পারে তা সাহিত্য বিষয়ক অথবা কোন সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান, আনিস স্যার অবধারিত ভাবে তাতে প্রধান অতিথি । তিনি আমাকে অসম্ভব স্নেহ করতেন । মনে করতেন কোন একটি কাজ অন্যকে দিয়ে না হলেও আমাকে দিয়ে হতে পারে । হোক না তাঁর গুরু প্রফেসর আবদুর রাজ্জাক স্যারের জন্য শুঁটকি কেনা অথবা রেল ষ্টেশনে গিয়ে কোন একটা জরুরী চিঠি রেল ডাক সার্ভিসে দিয়ে আসা । একবার জানালেন তিনি জাতিসংঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে একটি আন্তজার্তিক সেমিনার করবেন । আমাকে ডেকে বললেন চট্টগ্রামেতো এই রকম সেমিনার করার কোন অডিটোরিয়াম নেই, কোথায় করা যেতে পারে? বললাম চট্টগ্রামের আমেরিকান সেন্টারে একটি আধুনিক অডিটোরিয়াম আছে, তিনি অনুমতি দিলে আমি কথা বলে দেখতে পারি । পরিচালকের সাথে আমার ভাল জানা শোনা আছে । তাঁর অনুমতি নিয়ে পরিচালকের সাথে কথা বলতেই তিনি রাজি হয়ে গেলেন । আরো কিছু জুনিয়র শিক্ষকদের নিয়ে সেই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল অত্যন্ত সুচারু ভাবে ।  বাংলা বিভাগ আর আমাদের বিভাগ ছিল পাশাপাশি । হঠাৎ দেখি সেমিনার শেষ হওয়ার পর দিন  বেলা দশটার দিকে স্যার আমাদের কক্ষে এসে হাজির । আমি কিছুটা অবাক । তিনি  বললেন ‘মান্নান সম্মেলনের আয়োজন ও সব কিছু দেখে সকলে খুশি । আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে এসেছি’। এক অজ্ঞাত কারণে তিনি আমাকে সব সময় আপনি করে কথা বলতেন । অনেকবার বলেছি আমাকে তুমি বলতে কারণ আমি তাঁর আপনি সম্বোধনে অস্বস্তি বোধ করতাম । তিনি কখনো আমাকে তুমি বলতে রাজি হন নি ।

১৯৮৫ সালে খবর রটলো স্যার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাচ্ছেন । বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা ছোট খাট একটি আন্দোলন গড়ে তুললেন  এই সিদ্ধানেতর বিরুদ্ধে ।  স্যারকে কিছুতেই ঢাকা যেতে দেবেনা  না । পরবর্তিকালে এই আন্দোলনে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরাই  না যোগ দিল শিক্ষক আর বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও । যাবার দিন ক্ষণ যখন ঘনিয়ে এলো তখন আন্দোলন তাঁর ক্যাম্পাসের বাস ভবন পর্যন্ত পৌঁছে গেল । একদিন এক ছাত্র বোতল ভর্তি কেরোসিন নিয়ে স্যারের বাসার সামনে গিয়ে বললেন স্যার মত না পাল্টালে সে আত্মহুতি দেবে । স্যার ভীতর হয়ে এসে তাকে নিভৃত করলেন ।

আমার যদি ভুল না হয়ে থাকে ১৯৮৫ সালের ১৭ আগষ্ট তিনি রাতের ঢাকা মেইল যোগে ঢাকা যাবেন বলে  যখন সপরিবারে চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে উপস্থিত হয়েছেন তখন স্টেশনে তাঁর ছাত্র-ছাত্রী, গুণগ্রাহী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপচে পড়েছে । আমরা কয়েকজন তাঁর মালপত্র তাঁর বগিতে তুলে দিতে সাহায্য করলাম । তিনি তখন স্টেশনে সকলের কাছ হতে বিদায় নিচ্ছেন । বললেন তিনি নিয়মিত আসবেন । কেউ কেউতো অনেকটা বিলাপ করে কাঁদছেন । এমন দৃশ্য কদাচিৎ দেখা যায় । সময় ঘনিয়ে এলে ট্রেনের হুইসেল বাজলো । স্যার ট্রেনে উঠলেন । আমি ছিলাম সেই চলন্ত ট্রেন হতে নামা শেষ ব্যক্তি । এক সময় ট্রেনখানি রাতের অন্ধকারে মিলিয়ে গেল । নিরবে আমার চোখ হতে দু’ফোটা অশ্রুবিন্দু গড়িয়ে পরলো ।

১৯ আগস্ট ১৯৮৫ সালে আনিস স্যার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রফেসর হিসেবে যোগ দেন । এর পর যখনই ঢাকা এসেছি তখনই স্যার ও ভাবির সাথে দেখা করেছি। ভাবির পিড়াপিড়িতে অনেক দিন খেয়ে এসেছি । তখন তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কোয়ার্টারে থাকতেন । ২০০৩ সালের ৩০ জুন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে অবসর নিয়ে প্রথমে গুলশানে পরে মহাখালিতে বসবাস শুরু করেন । অন্তত প্রতিমাসে একবার স্যারের বাসায় যাওয়া হোত । মাঝে মধ্যে তিনি কোন একটা কিছু তথ্যের জন্য আমাকে ফোনও করতেন । হাসপতালে  হওয়ার ক’দিন আগেও তাঁর বাসায় গিয়েছি । বেশ দুর্বল । ভাবি জানালেন কিছু খেতে পারেন না । স্যারের একটা অভ্যাস নিয়ে ভাবিতো বলতেনই, আমিও অনেক সময় বলতাম । স্যার কোন অনুষ্ঠানে কেউ ডাকলে না করতে পারতেন না । বলতেন এতদিন না করি নি এখন কি ভাবে না করি?

আনিসুজ্জামান স্যারের অসংখ্য ছাত্রছাত্রি ও গুণগ্রাহীকে কাঁদিয়ে তিনি আজ না ফেরার দেশে চলে গেলেন । প্রধানমন্ত্রী তাঁর আর একজন বিশ্বস্ত অভিভাবককে কয়েকদিনের ব্যবধানে হারালেন । আর দেশের প্রগতিশীল মানুষ হারালো আর একজন সদা উজ্জ্বল বাতিঘরকে । স্যার আপনি যেখানেই থাকুন ভাল থাকুন । এই দেশ ও তার মানুষ আপনার কাছে অনেক কারণে ঋণী ।

 

লেখক: বিশ্লেষক ও গবেষক । ১৪ মে ২০২০

এ মুহূর্তের সংবাদ

মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যার আসামি নান্নু না.গঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার

মশাবাহিত রোগ বাড়ছে

চমেক হাসপাতাল : হৃদরোগ চিকিৎসায় অবহেলা নয়

চট্টগ্রামে কাভার্ডভ্যানে অবৈধভাবে গ্যাস পরিবহনের সময় লিক

সাবেক এমপি নদভীর পিএস গ্রেপ্তার

সাবেক চেয়ারম্যানকে ধরে পুলিশে দিল বৈষম্যবিরোধীরা

সর্বশেষ

মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যার আসামি নান্নু না.গঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার

পাহাড় ও টিলায় নির্মাণ হচ্ছে বেসমেন্টসহ বহুতল ভবন

মশাবাহিত রোগ বাড়ছে

চমেক হাসপাতাল : হৃদরোগ চিকিৎসায় অবহেলা নয়

চট্টগ্রামে কাভার্ডভ্যানে অবৈধভাবে গ্যাস পরিবহনের সময় লিক

সাবেক এমপি নদভীর পিএস গ্রেপ্তার

সাবেক চেয়ারম্যানকে ধরে পুলিশে দিল বৈষম্যবিরোধীরা

টপ নিউজ

পাহাড় ও টিলায় নির্মাণ হচ্ছে বেসমেন্টসহ বহুতল ভবন

এ মুহূর্তের সংবাদ

মশাবাহিত রোগ বাড়ছে

এ মুহূর্তের সংবাদ

চমেক হাসপাতাল : হৃদরোগ চিকিৎসায় অবহেলা নয়