২৬ পাহাড়ে ৬৫৫৮ অবৈধ স্থাপনা

মামলায় আটকে আছে উচ্ছেদ অভিযান

সুপ্রভাত ডেস্ক

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের হালনাগাদ তালিকা অনুসারে বন্দরনগরীর সরকারি- বেসরকারি ২৬টি পাহাড়ে এখন অবৈধ স্থাপনার সংখ্যা ৬ হাজার ৫৫৮টি। এর মধ্যে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও বিভাগের মালিকানাধীন ১৬টি পাহাড়ে বসবাস করছে ৬ হাজার ১৭৫টি পরিবার। আর ব্যক্তি মালিকানাধীন ১০টি পাহাড়ে বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা ৩৮৩টি।
এ পরিস্থিতিতে নগরীর বায়েজিদ লিংক রোড ও সলিমপুর এলাকায় পাহাড় কাটা বন্ধে সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড স্থাপনের কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসনের হালনাগাদ তালিকা অনুসারে, ৬ হাজার ৫৫৮টি অবৈধ স্থাপনার মধ্যে ৫ হাজার ৩৩২টি স্থাপনাই রেলওয়ের জমিতে।
চট্টগ্রাম নগরীতে সবচেয়ে বেশি অবৈধ পরিবারের বসবাস ফয়’স লেক এলাকার ১, ২ ও ৩ নম্বর ঝিল পাহাড়ে। এখানে মোট ৪৪৭৬টি পরিবার থাকে। ওই পাহাড়ের মালিকও বাংলাদেশ রেলওয়ে।
এটিসহ বাংলাদেশ রেলওয়ের মালিকানাধীন সাতটি পাহাড়ে অবৈধ বসতি আছে। এরমধ্যে মতিঝর্ণা ও বাটালি হিল এলাকায় বসবাস ৪৩১টি পরিবারের। লেকসিটি আবাসিক এলাকা সংলগ্ন বিজয় নগর পাহাড়ে বসবাস ২৮৮টি পরিবারের।
রেলওয়ের মালিকানাধীন ষোলশহর স্টেশন সংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস ৭৪টি পরিবারের। নগরীর জাকির হোসেন সড়কে পরিবেশ অধিদপ্তর সংলগ্ন পাহাড়ে ৪৬টি, পলিটেকনিক হক স্টেশন সংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশে ১২টি এবং ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় ফৌজি ফ্লাওয়ার মিল সংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশে ৫টি পরিবারের বসবাস।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী বলেন, ‘পাহাড়ে অবৈধ বসতি উচ্ছেদে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করি। কিন্তু যেসব এলাকায় মামলা আছে সেখানে অভিযান চালানো যায় না।’ খবর বিডিনিউজ।
‘ফয়’স লেক ঝিল পাড় এলাকায় সবচেয়ে বেশি বসতি। সেখানকার বাসিন্দারা কয়েকটি রিট মামলা করেছেন। এগুলো নিষ্পত্তি না হলে সেখানে অভিযান চালানো যাচ্ছে না। বেশিরভাগ পাহাড়ে বসতি স্থাপনকারীর সংখ্যা নিয়মিত বাড়ে-কমে। উচ্ছেদ করা হলে চলে যায়। পরে আবার ফিরে আসে।’
এজন্য নিয়মিত নজরদারি করা হচ্ছে জানিয়ে সুজন চৌধুরী বলেন, ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশে পাহাড় কাটা ও বসতি স্থাপনা বন্ধে আমরাও রেলের পাহাড়গুলোতে সাইনবোর্ড দিচ্ছি।’
গণপূর্ত বিভাগের মালিকানাধীন মতিঝর্ণা ও বাটালি হিল অংশে পাহাড় দখল করে বসতি গড়েছে আরও ৮৮টি পরিবার। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের দুই পাহাড়ের মধ্যে কৈবল্যধাম হাউজিং এস্টেট সংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশে ১৪৬টি এবং ফিরোজ শাহ হাউজিং এস্টেট সংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশে ৪৯টি অবৈধ বসতি আছে।
সরকারের ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত জমিতেও আছে অবৈধ বসতি। এরমধ্যে আকবর শাহর বেলতলী পাহাড়ে ৮৯টি, উত্তর পাহাড়তলি মৌজার ১৫০ দাগের খাস খতিয়ানভুক্ত জয়ন্তিকা আবাসিক সংলগ্ন পাহাড়ে ২৮টি এবং বিএস দাগের ২১২ ও ২১৩ দাগের মুরগি ফার্ম হয়ে গার্ডেন ভিউ সোসাইটি সংলগ্ন এলাকায় ১২টি অবৈধ বসতি আছে।
আমিন জুট মিলের মালিকানাধীন মিল সংলগ্ন টাংকির পাহাড়ে ৬৫টি অবৈধ স্থাপনা আছে। পলিটেকনিক সংলগ্ন পাহাড়ের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে আছে ৪৩টি অবৈধ বসতি।
ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড়গুলোর মধ্যে লালখান বাজার জামেয়াতুল উলুম মাদ্রাসা সংলগ্ন পাহাড়ে ৩২৩টি অবৈধ স্থাপনা আছে। এছাড়া হারুন খান সাহেবের পাহাড়ে ১৪৪টি, মিয়ার পাহাড়ে ৪৯টি, এম আর সিদ্দিকীর পাহাড়ে ৪২টি, ফরেস্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউট সংলগ্ন মীর মোহাম্মদ হাসানের পাহাড়ে ৩৮টি, মধুশাহ পাহাড়ে ২৯টি, চিড়িয়াখানার পেছনের পাহাড়ে ২৮টি, নাগিন পাহাড়ে ২৫টি, নাছিয়া ঘোনা এলাকায় ১২টি, রৌফাবাদ ভেড়া ফকিরের পাহাড়ে ১১টি এবং জালালাবাদ সংলগ্ন পাহাড়ে ১১টি অবৈধ স্থাপনা আছে।
জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. উমর ফারুক বলেন, ‘পাহাড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আমরা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে থাকি। আজ লিংক রোড ও সলিমপুর অংশে পাহাড় কাটা বন্ধে সাইনবোর্ড স্থাপন করা হচ্ছে। ’
‘সুপ্রিম কোর্টে হাই কোর্ট বিভাগের একটি রিট পিটিশনের আদেশ মোতাবেক পাহাড় ও টিলা কর্তন বা মোচন বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। তাই সতর্ক করতে পাহাড় কাটা ও পাহাড়ের ক্ষতি সাধন করা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। এর ব্যত্যয় হলে আইন অনুসারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পাহাড় রক্ষায় আন্দোলকারী পিপল’স ভয়েস এর সভাপতি শরীফ চৌহান বলেন, ‘২০০৭ সালের ১১ জুন পাহাড় ধসে ১২৭ জনের মৃত্যুর পরই ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় ও অবৈধ বসতির তালিকা করা হয়েছে। এই তালিকা বারবার করা হয়।
পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় প্রতিবার নানা সুপারিশ নেওয়া হয়। কিন্তু সরকারি পাহাড়গুলোই এত বছরে দখলমুক্ত হয়নি। উল্টো সরকারি সংস্থা সিডিএ পাহাড় কেটে বায়েজিদ লিংক রোড নির্মাণ করে ওই এলাকার পাহাড়গুলোকে আরো ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে।’
মামলার কারণে উচ্ছেদ সম্ভব না হওয়ার বিষয়ে শরীফ চৌহান বলেন, ‘যখন পাহাড় শুরুতে কেটে দখল করা হয় তখন সরকারি সংস্থাগুলো নিরব থাকে। এরপর তারা উচ্ছেদে গেলে মামলা হয়। সেই মামলা বছরের পর বছর চলতে থাকে। এই ফাঁকে অবশিষ্ট পাহাড়ও কেটে ফেলা হয়।’
‘সরকারি সংস্থাগুলোর নিষ্ক্রিয়তা শুধু পাহাড় কেটে পরিবেশ ধ্বংসই ত্বরান্বিত করে না পাশাপাশি মানুষের জীবনকেও ঝঁকিপূর্ণ করে তোলে। সাইনবোর্ড দিয়ে পাহাড় কাটা থামানো যাবে না। প্রয়োজন ব্যবস্থা গ্রহণ।’