নিজস্ব প্রতিবেদক »
‘প্রধানমন্ত্রী পলোগ্রাউন্ড থেকে জনসভা শুরু করবেন। ৪ ডিসেম্বরের জনসভায় লোকে লোকারণ্য করব। যাতে পলোগ্রাউন্ড উপচে পড়ে। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চাইব। তখন তিনি নিজে ঘোষণা দিবেন সিআরবিতে হাসপাতাল হবে না।’
গতকাল শনিবার বিকেলে চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত সিআরবিতে হাসপাতাল না হওয়া প্রসঙ্গে আশ্বাস পেয়ে সমাপনী অনুষ্ঠান আয়োজন করে নাগরিক সমাজ চট্টগ্রাম। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করে সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন তার বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন।
সিআরবিকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সিআরবিতে হাসপাতাল করতে দিবো না। বঙ্গমাতার নামে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করব। আরেকটা সমস্যা জিয়া জাদুঘর সরাতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ করেছি, এটা চট্টগ্রাম মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘর হবে। জিয়া কোনো যুদ্ধ করে নাই। আমি সাক্ষী। ওর নামে জাদুঘর হতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধের জাদুঘর হবে। শিশু পার্ক এটা তুলে দিতে হবে। অপরিকল্পিতভাবে আউটার স্টেডিয়ামটা নষ্ট করে দিয়েছে। অবশ্যই এখানে কোনো হাসপাতাল হবে না। চট্টগ্রামের একটা লোক বেঁচে থাকতে এখানে হাসপাতাল হবে না। চেষ্টা করব ৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে এটা শোনার জন্য।’
সিআরবিতে হাসপাতাল না করার আন্দোলন নিয়ে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামবাসী ৪৮৩ দিন ধরে আন্দোলন করছেন। সংসদ সদস্য হিসেবে একটা উদ্যোগ নিয়েছিলাম। চট্টগ্রামের যত সংসদ সদস্য আমরা একটা দরখাস্ত লিখলাম রেলমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে। সকল এমপি-মন্ত্রী সিআরবিতে হাসপাতাল না করার সে দরখাস্তে স্বাক্ষর করেছেন। সে দরখাস্ত নিয়ে আমরা রেলমন্ত্রীর কাছে গেলাম। সঙ্গে মন্ত্রী হাছান মাহমুদ এবং নওফেলও ছিল। মানুষের যে দাবি এখানে হাসপাতাল না করার জন্য, যখন সকল মন্ত্রী এমপি একমত। প্রধানমন্ত্রীও একমত হবেন। রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন কথা দিয়েছেন এখানে হাসপাতাল হবে না।’
ডিসি হিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি ডিসিকে পাহাড়ের উপরে থাকার প্রয়োজন নেই। ডিসিরা যখন বদলি হয়ে ঢাকায় চলে যায়, তখন সাধারণ বাসায় থাকে। এই ডিসি হিলকে সম্পূর্ণভাবে পার্ক করতে চাই। তাদের জন্য অনেক বাংলো আছে, একটা দিয়ে দিলাম। এত বড় পাহাড় দরকার আছে? সেখানে পার্ক করতে পারি, হাঁটতে পারি। ডিসি এবং কমিশনারকে অন্য জায়গায় রাখতে পারি। ডিসি হিলে পার্ক করতে পারি।’
ড. অনুপম সেনের সভাপতিত্বে আয়োজিত নাগরিক সমাজ চট্টগ্রামের এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে না পারলেও মুঠোফোনে যুক্ত হয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘সিআরবিকে রক্ষা করার জন্য যারা আন্দোলন করেছেন তারা সবাই আছেন। আমরা রেলমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলাম। রেলমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়গুলো অবহিত করার পর তিনি বলেছেন, পরিবেশ প্রকৃতি নষ্ট করে কিছু হবে না। কেউ কেউ ভুলবশত পরিবেশের ক্ষতিকারক প্রকল্প নিয়ে ফেলে। তবে প্রধানমন্ত্রী সবসময় পরিবেশ প্রকৃতির প্রতি আন্তরিক।’
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘আমাদের নেত্রী বলেছেন প্রতিটি প্রকল্পে স্থানীয় যারা সুবিধাভোগী তাদের সঙ্গে অবশ্যই পরামর্শ করতে হবে। চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এই স্থানের পরিবর্তে প্রকল্প অন্য স্থানে করার যে দাবি তা সংগঠিত করে আন্দোলন পরিচালনা করেছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। গায়ের জোরে রেলওয়ে কিছু করেননি, তাই ধন্যবাদ। ইউনাইটেড গ্রুপকে বলতে চাই, ঢাকায় আপনাদের হাসপাতালে চট্টগ্রামের অনেক মানুষ যায় সেবা নিতে। চট্টগ্রামের মানুষের হৃদয়ে আঘাত করে তাদের হৃদয়ের চিকিৎসা করাটা নৈতিকভাবে সঠিক হবে না। জনগণের দাবিকে সম্মান জানাবেন এ প্রত্যাশা করি।’
সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক সমাজ চট্টগ্রামের আহ্বায়ক ড. অনুপম সেন বলেন, যখন জানতে পারলাম এখানে পিপিপিতে হাসপাতাল হচ্ছে, তখন সবাই মিলে সভা করে সিদ্ধান্ত নিলাম প্রয়োজনে আমৃত্যু আন্দোলন করব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সারাবিশ্ব পরিবেশ বিষয়ক শ্রেষ্ঠ নেতা হিসেবে বিবেচনা করে। হাসপাতাল অনেক জায়গায় হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, সিআরবির মত সুন্দর জায়গা খুব কম আছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে সরাসরি আবেদন প্রেরণ করলাম। সেদিনই আমি নিশ্চিত হয়েছিলাম, এখানে আর কোনোদিন হাসপাতাল হবে না। যিনি বিশ্বজুড়ে পরিবেশের জন্য আন্দোলন করছেন তিনি এ পরিবেশ নষ্ট হতে দিবেন না। তার নির্দেশেই সংসদীয় কমিটি হাসপাতালের জন্য অন্যত্র জায়গা খুঁজছে। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘আপনাদের আন্দোলনের ফসল হিসেবে এখান থেকে হাসপাতাল সরে গেছে। হাসপাতাল হবে না। মেয়র হিসেবে প্রস্তাবনা মালিকানা রেলের থাক। সিটি করপোরেশনকে দায়িত্ব দেওয়া হলে আমাদের অর্থায়নে এখানে বঙ্গমাতার নামে জাতীয় উদ্যান নান্দনিকভাবে করে দেব।’
নাগরিক সমাজ চট্টগ্রামের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল বলেন, আন্দোলনের শুরু থেকে শপথ নিয়েছিলাম সফল না হয়ে ঘরে ফিরব না।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের ভালোবাসেন। তাই আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে সিআরবিকে উন্মুক্ত করে দিয়েছেন।’
মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, চট্টলার দলমত নির্বিশেষে সকলে সমবেত হয়েছেন সিআরবিতে। আজ প্রমাণিত হয়েছে আমাদের ভালোবাসার কাছে সকল বাধা ভেঙে গেছে।
সাংবাদিক ঋত্বিক নয়নের সঞ্চালনায় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, জাসদ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন চৌধুরী বাবুল, সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান, ড. মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এএইচ এম জিয়া উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা কমিটির মহাসচিব মো ইউনুস, বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি।