হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চাপ

নিলা চাকমা »

ডেঙ্গু রোগীর চাপ বাড়ায় আলাদা ওর্য়াড চালু করে সেবা দেওয়া শুরু করেছে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল। মাত্র ৫৫ শয্যার ওই ওর্য়াডে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ইমারর্জেন্সি ওয়ানস্টেপ (ওসেক), মেডিসিন বিভাগের (১৩, ১৪ ও ১৬) ওয়ার্ডেও বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে হচ্ছে। চট্টগ্রামে ২১ সেপ্টেম্বর সর্বোচ্চ ২২৪ জন আক্রান্ত হয়ে রেকর্ড গড়েছে। মশক নিধনে চসিক ব্যর্থ বলেই হাসপাতালে বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে হচ্ছে দাবি বিশেষজ্ঞদের।

সরেজমিন গতকাল (২৫ সেপ্টেম্বর) চমেক হাসপাতালের ৮ম তলার ডেঙ্গু ওয়ার্ডে দেখা যায়, ৫৫ শয্যার ওয়ার্ডে একটিও খালি নেই। ইমারর্জেন্সি ওয়ান স্টেপ (ওসেক) ১০ জন রোগী, মেডিসিন বিভাগের ( ১৩, ১৪,ও ১৬) ওয়ার্ডে ৪০ জনের বেশি রোগী ভর্তি আছে। নাসিমা নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, আমার ছেলেকে নিয়ে ৪ তিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছি। ডেঙ্গু পজিটিভ ধরা পড়েছে। নানা টেস্ট দিচ্ছে। সেসব পরীক্ষা বাইরে থেকে করতে হচ্ছে, চলে যাচ্ছে বিরাট অংকের টাকা। তবে ওষুধ প্রায় সব পাচ্ছে বলে জানান তিনি।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৫০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ডে রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) রোগী ভর্তি ছিল ৭০ জনের বেশি। বাড়তি ২০ জনকে মেঝেতে বেড বিছিয়ে সেবা দেওয়া হয়। একই চিত্র বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিসেস (বিআইটিআইডিতে) গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৫ জনের বেশি রোগী ভর্তি হয়।

এক প্রশ্নে আগামী মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগী বাড়তে পারে বলে জানালেন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা কীটতত্ত্ববিদ এনতেজার ফেরদৌস। তিনি বলেন, যদি বেশি পরিমাণে বৃষ্টি হতো তাহলে মশার বংশ বৃদ্ধি কমতো। এখন কড়া রোদ উঠেছে। কিন্ত গত ৪-৫ দিন আগেও ছিল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। এ গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিই যথেষ্ট মশার বংশবৃদ্ধির জন্য। সর্বশেষ বৃষ্টির পর টানা ৩ সপ্তাহ বংশবৃদ্ধি ঘটবে। বৃষ্টি যদি আর না হয় আগামী মাস পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বে। এরপরে তা কমতে পারে। তবে বৃষ্টি হলে তা আবার বাড়বে।

এ দিকে ২৪ ঘণ্টায় ১৪৭ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরে মোট ৯ হাজার ২৩ জন আক্রান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে মারা গেছেন ৭২ জন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৭ জন এবং মারা গেছেন ৩ জন, ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত ২২ জন, মার্চে ১২ জন, এপ্রিলে ১৮, মে ৫৩, জুনে আক্রান্ত ২৮৩ ও মৃত্যু ৬ জন, জুলাইয়ে আক্রান্ত ২ হাজার ৩১১ ও ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আগস্টে আক্রান্ত ৩ হাজার ১১ জন, মৃত্যু ১৮ জন এবং সেপ্টেম্বরে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত ৩ হাজার ২৩৬ জন। চলতি মাসের ২৩ দিনে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।

মশা নিধনে চসিকের তৎপরতা আরও বাড়ানোর কথা উল্লেখ করে চমেক হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেডিসিন বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, ‘হাসপাতালে বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। নিয়মিত তদারকি করলে মশা অনেক কমে যেত’।

বিআইটিআইডি’র ক্লিনিক্যাল ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘আমরা সাধারণ মানুষরা মনে করি শুধুমাত্র ড্রেন, টবে, ছাদের জমানো পানিতে মশা জন্মায়, তা কিন্ত নয়; ১০ মিলিমিটার পানিতেও মশা জন্মায়। পুরো এলাকায় একটি এডিস মশা বংশবৃদ্ধি ঘটিয়ে সকলকে আক্রান্ত করতে পরে। কাজেই নিয়মিত ওষুধ ছিটানো, তদারকি চালিয়ে যেতে হবে। একই সঙ্গে জনগণকেও সচেতন হতে হবে’।

প্রসঙ্গটি নিয়ে চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা আবুল হাসেম বলেন, ‘প্রায় সব এলাকায় আমরা তদারকি বাড়িয়েছি। যেখানে পানি জমে আছে সেখানে ট্যাবলেট নিয়মিত দেওয়া হচ্ছে। কোনো ওয়ার্ড নয়, পুরো শহরকে ৫টা জোনে ভাগ করে মশক নিধন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আমাদের ১০টা টিমে ৪টি ফগার মেশিন নিয়ে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি। শুধু কর্তৃপক্ষ নয়, সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে’।