ইসলামের মৌলিক পাঁচটি ভিত্তির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হচ্ছে হজ। মূলত হজ মুসলমানের জন্য একটি ফরজ ইবাদত। হজকে কেন্দ্র করে একটি শ্রেণি থাকে আল্লাহর এই মেহমানদের খেদমত করে পুণ্য অর্জন করার আশায়। প্রতিবছরই গণমাধ্যমে ভেসে আসে হজযাত্রীদের কান্নার আওয়াজ। দিন দিন এ কান্না বাড়ছেই। হজযাত্রীদের এই কান্নার পেছনে মূল কারণ, একদিকে সরকারের দায়সারা ভাব, অন্যদিকে এজেন্সিগুলোর প্রতারণা।
সুপ্রভাতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এবছর সৌদি আরবে হজ করতে যাওয়া হাজিদের মিনা ও আরাফাতে অন্যের তাঁবু দখল করে নিজ কাফেলার হাজিদের গাদাগাদি করে থাকতে দেওয়া, যথাসময়ে হোটেল রুম না দেওয়া, নিম্নমানের হোটেল রুম ও খাবার পরিবেশন, বাসে গাদাগাদি করে নিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রামের একটি হজ কাফেলার বিরুদ্ধে। তাতে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে হাজিরা সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হয়েছেন।
মানুষ মনে করছে চরম অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত সরকারি হজমাধ্যম। দুর্ভোগ কিছুটা কমানোর আশায় হাজিরা ছুটে চলেন বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলোর কাছে। আর এজেন্সিগুলোও একে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগায়। হজ এজেন্সি মানেই যেন প্রতারণার লাইসেন্স! হজে যাওয়ার আগে এজেন্সিগুলো উন্নতমানের খাবার, আবাসন ও পরিবহনের ওয়াদা করলেও সৌদি আরবে পৌঁছলেই তাদের আচরণ হয়ে যায় সম্পূর্ণ বিপরীত। মক্কায় পৌঁছার পর বিভিন্নভাবে হাজিদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে থাকে। ওয়াদামতো না দিয়ে কম টাকায় বাড়ি, গাড়ি ভাড়া করে টাকা বাঁচানোর ফন্দি তাদের। তাই হাজিদের মুখে যাত্রার সময় হাসি থাকলেও হজে গিয়ে তা পরিণত হয় কান্নায়।
মালয়েশিয়ার হজ ব্যবস্থাপনা খুবই চমৎকার। হজের ব্যয় ও আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সেখানে খুবই সহজ, স্বচ্ছ ও হাজিদের অনুকূল। সেখানে আমাদের দেশের মতো এত হজ এজেন্সি নেই। হজ এজেন্সির সংখ্যাও ৩০-এর মতো। এজেন্সিগুলোর ওপর সরকারি কঠোর নজরদারি থাকায় সে দেশের হজ ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার নজির নেই। ভারত সরকার হজে প্রচুর পরিমাণ ভর্তুকি দিয়ে থাকে। বাংলাদেশ সরকারের কোনো ভর্তুকি দিতে হয় না।
শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এবং বেশিরভাগ মুসলমান বছরে একবার যান বলে এজেন্সিগুলোর অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন না। আমাদের হজযাত্রীদের একটি বড় অংশ গ্রামীণ বয়স্ক জনগোষ্ঠী। তাদের অনেকেই আবার স্বল্পশিক্ষিত। ফলে তাদের সঙ্গে প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া অপেক্ষাকৃত সহজ। নিবন্ধন থেকে ভিসা প্রাপ্তি পর্যন্ত প্রতিটি ধাপও তাদের জন্য জটিল। এর মধ্যেই অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান দীর্ঘকাল অর্থকড়ি সঞ্চয় করে হজ পালনের অপেক্ষায় থাকেন। এর সঙ্গে তাদের আবেগের ব্যাপারটি গভীরভাবে জড়িত।
হজ ব্যবস্থাপনায় চ্যালেঞ্জ নানামাত্রিক। প্রতিবছরই হজের খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার বর্ধিত ব্যয়ের সঙ্গে বাড়ছে না সেবার মান। প্রায় একই অনিয়ম ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন হজযাত্রীরা। এক্ষেত্রে প্রাইভেট ও সরকারি হজ অপারেটরে সেবার চিত্র মোটামুটি এক।
হাজিদের কান্না থামাতে সরকারের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। হজযাত্রীদের প্রত্যাশিত সেবাদানে বিশেষভাবে আন্তরিক ও যত্নবান হতে হবে। হজ করতে লোক পাঠানোর জন্য চুক্তিবদ্ধ হবার পর কোন হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে যদি অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা বা দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে, তাহলে ওই এজেন্সির নিবন্ধন বাতিলের পাশাপাশি সর্বোচ্চ অর্থ জরিমানার বিধান কার্যকর করা জরুরি।
এ মুহূর্তের সংবাদ