সুপ্রভাত ডেস্ক »
মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সংঘর্ষের মধ্যে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তে মর্টার শেল এসে পড়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধি জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার রাতে প্রচণ্ড গোলাগুলির মধ্যে ১ নম্বর ওয়ার্ডের তেঁতইয়ারছড়ায় এসে তিনটি মর্টার শেল পড়ে বলে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাকারিয়া আজিজ জানান। এ ব্যাপারে চেষ্টা করেও পুলিশ ও বিজিবির বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর এমদাদুল ইসলাম ছবি দেখে বলেছেন, ‘অস্ত্রের যেসব অংশ দেখা যাচ্ছে এগুলো মর্টার শেলেরই ভাঙা অংশ। যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুপক্ষের অবস্থান উঁচু-নিচু এলাকায় হলে প্রতিপক্ষ এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করে। মূলত শত্রুপক্ষের দূরবর্তী সঠিক নিশানায় আঘাত হানতে যুদ্ধক্ষেত্রে মর্টার শেল ব্যবহার করা হয়।’ খবর বিডিনিউজ।
রাখাইনে সেনা ও বিদ্রোহীদের মধ্যে লড়াইয়ের প্রভাব পড়ছে সীমান্তের এপারের জনগোষ্ঠীর মধ্যেও। শনিবার সংঘর্ষের খবরের মধ্যে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের উলুবনিয়া এলাকার নুরুল ইসলামের বাড়িতে একটি গুলি এসে পড়লে আতঙ্ক তৈরি হয়।
গোলাগুলির ঘটনায় আতঙ্কে সোমবার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম এলাকায় কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘ছুটি’ দিয়ে দেওয়া হয়। তবে মঙ্গলবার স্কুলগুলো ফের খুলেছে। এই অবস্থার মধ্যেই বুধবার ঘুমধুম এলাকা পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার।
ঘুমধুম ইউনিয়নের তেঁতইয়ারছড়া এলাকার বাসিন্দা ফরিদুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে দিনেরাতে থেমে থেমে বিকট শব্দে গোলাগুলি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল দিনের বেলায় কম হলেও সন্ধ্যার পর ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে। গোলাগুলির শব্দে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে ঘর থেকে বের হয়ে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি শুরু করেন।
‘রাতে একপর্যায়ে মিয়ানমার থেকে ছোড়া তিনটি মর্টার শেল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে পড়ে। এর মধ্যে একটি আমার বসত ঘরের পাশে এবং অপর দুটি পশের এলাকায়। আমার ঘরের পাশে মর্টার শেলটি বিস্ফোরিত হলেও অপরগুলো হয়েছে কিনা জানি না।’
আতঙ্কিত ফরিদুল বলেন, ‘মর্টার শেলগুলো সকালে স্থানীয়রা বিজিবি সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করেছে।’
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ চৌধুরী বলেন, ‘রাতে তিনটি মর্টার শেল এসে পড়েছিল। এতে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। পরে বিষয়টি স্থানীয়রা বিজিবিকে জানায়। সকালে সেগুলো বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
এ ব্যাপারে কথা বলতে টেকনাফ-৩৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। রাতে বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহীনকে ফোন করা হলে তিনিও ধরেননি।
২০২২ সালের অগাস্টের শেষ ও সেপ্টেম্বরের শুরুতে মিয়ানমারের যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার থেকে বাংলাদেশের সীমানার ভেতর গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল। অনেক মানুষ আতঙ্কে সীমান্ত ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছিল। তখন দেশটির রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে এর প্রতিবাদ, নিন্দা ও উদ্বেগের কথা জানিয়েছিল ঢাকা।
এবারও লাগাতার সংঘর্ষের মধ্যে ‘সর্বোচ্চ সতর্ক’ থাকার নির্দেশ দিয়েছে বিজিবি। সম্প্রতি বিজিবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি পুরো মিয়ানমারে সংঘাতময় পরিস্থিতি চলছে। যার প্রভাব বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যেও এসে পড়েছে। প্রতিনিয়ত সেখানকার অস্থিতিশীল অবস্থা ও সংঘাতময় পরিস্থিতির খবর পাওয়া যাচ্ছে।’