নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার <<
কক্সবাজারের বিভিন্ন সাগর উপকূলের ঘাট থেকে লাখ লাখ টাকা খরচ করে জেলেরা ট্রলার নিয়ে সাগরে গেলেও তাদের জালে ধরা পড়ছে না কাক্সিক্ষত মাছ। অনেকেই খালি ট্রলার নিয়ে কূলে ফিরছেন। এ নিয়ে অনেক জেলে সাগরে মাছ ধরতে না গিয়ে উপকূলে মাছ ধরার ট্রলারগুলো নোঙর করে রেখেছেন।
জেলেদের দাবি, গত কয়েক মাস ধরে সাগরে মাছের আকাল চলছে। ফলে ট্রলারে খাবার শেষ হয়ে যাওয়ায় সামান্য মাছ নিয়ে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন ঘাটে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাছ সংকটে বাড়তি দামের পাশাপাশি লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁকখালী নদীর তীরে ট্রলার ফিরছে মাছ নিয়ে। তবে পরিমাণ একেবারেই কম। আবার অনেক জেলে ফিরেছেন খালি ট্রলার নিয়েই।
কূলে ফেরা এফবি ফারহান ট্রলারের মাঝি ইয়াকুব বলেন, গত বছর এই সময় সাগরে মাছ শিকারে গিয়ে ৫ হাজার ইলিশ পেয়েছিলাম। কিন্তু গত ১২ দিন সাগরে মাছ শিকার পেয়েছি মাত্র ৩০০টি ইলিশ। অবশেষে খাদ্য শেষ হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে ফিরতে হয়েছে ফিশারি ঘাটে।
আরেক জেলে ওমর সুলতান বলেন, ট্রলার মালিক ২ লাখ টাকা খরচ দিয়ে ১৬ জন জেলে দিয়ে সাগরে মাছ শিকারে পাঠিয়েছে। কিন্তু ১৪ দিন সাগরে জাল মেরে সাগরে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। অবশেষে স্বল্প পরিমাণ মাছ পেয়েছিলাম, যা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে এনে বিক্রি করেছি মাত্র ৪০ হাজার টাকা। ফলে ট্রলার মালিকের লোকসান হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এখন আর ট্রলার মালিক সাগরে পাঠাচ্ছেন না।
এদিকে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে সব সময় ভরা থাকে সামুদ্রিক মাছে। কিন্তু এখন অবতরণ কেন্দ্রে মাছের আকাল। ফলে মাছের দাম বাড়তি যে কারণে লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে দাবি মৎস্য ব্যবসায়ীদের।
মৎস্য ব্যবসায়ী লিয়াকত বলেন, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে মাছের অবতরণ কম হলে দাম বেড়ে যায়। এখন মাছের পরিমাণ কম তাই দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
আরেক ব্যবসায়ী শামসুল আলম বলেন, একে তো মাছের পরিমাণ কম। তার উপর কঠোর লকডাউন। সবমিলিয়ে মহা বিপদে রয়েছি।
মৎস্য ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এক কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকা, রিটা বিক্রি হচ্ছে ৪শ’ টাকা, সুরমা বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৫শ’ টাকা, চাপা বিক্রি হচ্ছে তশ’ টাকা ও টুনা বিক্রি হচ্ছে ২শ’ টাকায়। ফলে সব মাছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা দাম বাড়তি।
মোহাম্মদ একেরাম নামে এক জেলে জানালেন, আগামী মাসেই ৬৫ দিনের জন্য সাগরে মাছ আহরণ বন্ধ হবে। এখন এই অবস্থা চললে জীবন-জীবিকা নিয়ে কঠিন সমস্যায় পড়তে হবে।
সূত্র জানায়, গত বছর কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত অবতরণ হয়েছিল প্রায় ২ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন সামুদ্রিক মাছ। কিন্তু এ বছর অবতরণ হয়েছে ১ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন মাছ।
মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মার্কেটিং কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন জানালেন, রাজস্ব আদায় কম হওয়ার পাশাপাশি সাগরে মাছের আকাল চলায় জেলেদের মাছ শিকারে পাঠাচ্ছেন না অনেক ট্রলার মালিক।