ভূঁইয়া নজরুল »
অবশেষে তিন নম্বর প্রস্তাবনাতেই সমাধান হলো আউটার রিং রোডের ফিডার রোড-২ নিয়ে চলা বিরোধের। এই রোড নিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ও চট্টগ্রাম ওয়াসার মধ্যে বিরোধ চলছিল দীর্ঘদিন ধরে। সিডিএ ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পের জায়গার উপর দিয়ে ফিডার রোড নির্মাণ করতে চাইলে ওয়াসা এতে বাধা দেয়। পরবর্তীতে ছয় সংস্থার (সিডিএ, সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা, বন্দর কর্তৃপক্ষ, রেলওয়ে, পুলিশ প্রশাসন) প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে বিরোধ মেটে উভয় সংস্থার।
স্যুয়ারেজ প্রকল্পের উত্তর প্রান্ত দিয়ে যাবে ফিডার রোড
সিডিএ’র আউটার রিং রোড নির্মাণ প্রায় শেষ পর্যায়ে। দ্বিতীয় দফায় প্রকল্প সংশোধনের মাধ্যমে ফিডার রোড-২ বাস্তবায়নে এগুচ্ছে সংস্থাটি। আর এই ফিডার রোড-২ নির্মিত না হলে আউটার রিং রোডের সাথে শহরের ট্রাফিক নেটওয়ার্ক হতো না। তাই সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার স্বার্থেই হালিশহর বড়পোল, শারীরিক শিক্ষা কলেজ, আনন্দবাজার হয়ে তা সাগরপাড়ের আউটার রিং রোডে যুক্ত হবে এই ফিডার রোড-২। কিন্তু এই আউটার রিং রোডে যুক্ত হওয়ার আগে হালিশহর আনন্দবাজার সাগরপাড়ের ১৬৫ একর জায়গায় স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট করার জন্য ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন রয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসার। এখন ওয়াসার প্রকল্পের ভেতর দিয়ে ফিডার রোডের জন্য জায়গা দিতে নারাজ ওয়াসা। একইভাবে এই স্থান ছাড়া অন্য কোনো স্থান দিয়ে ফিডার রোড নির্মাণ করাও সিডিএ’র জন্য ব্যয়বহুল এবং মানুষের বাড়িঘর অধিগ্রহণের আওতায় চলে আসতে পারে। তাই সিডিএও চাইছে ওয়াসার প্রকল্পের ভেতর দিয়ে ফিডার রোড নিয়ে যেতে।
পরবর্তীতে এই বিরোধ নিরসনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় সিডিএ, ওয়াসা, রেলওয়ে, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি করা হয়। সেই কমিটি পাঁচ মাস ধরে কাজ করার পর গতকাল অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় তৃতীয় প্রস্তাবনা অনুযায়ী ফিডার রোড নির্মাণে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কী ছিল তৃতীয় প্রস্তাবনায়
সমন্বয় সভায় তিনটি প্রস্তাবনা ছিল। প্রথম প্রস্তাবনা ছিল- স্যুয়ারেজ প্রকল্পের উপর দিয়ে সোজা রোডটি গিয়ে সাগরপাড়ে যুক্ত হবে। দ্বিতীয় প্রস্তাবনা ছিল- ফ্লাইওভারের মাধ্যমে স্যুয়ারেজ প্রকল্পের উপর দিয়ে গিয়ে সাগরপাড়ে যুক্ত হবে। এই দুই প্রস্তাবনার বাইরে তৃতীয় প্রস্তাবনা ছিল- স্যুয়ারেজ প্রকল্পের উত্তর প্রান্ত দিয়ে রোডটি নির্মাণ করে ওয়াসার প্রকল্পের পাশ দিয়ে গিয়ে আউটার রিং রোডে যুক্ত হবে। এতে ফিডার রোডটি একটু বাঁকা হলেও ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পের তেমন ক্ষতি হবে না। কারণ চট্টগ্রামের জন্য স্যুয়ারেজ প্রকল্প যেমন প্রয়োজন তেমনিভাবে ট্রাফিক নেটওয়ার্কের জন্য আউটার রোডের সাথে সংযোগও প্রয়োজন বলে জানান কারিগরি কমিটির সদস্যবৃন্দ। এবিষয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলী ও আউটার রিং রোড প্রকল্পের পরিচালক কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘গতকাল সমন্বয় সভায় আমরা ফিডার রোড-২ নিয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কমিটির তৃতীয় প্রস্তাবনাটি কার্যকর হয়। এতে ফিডার রোডটি প্রথমে ডান দিকে ও পরে সোজা সাগরের দিকে গিয়ে যুক্ত হবে।’
এতে কতটুকু জায়গা ওয়াসা থেকে নেওয়া হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাস্তার জন্য ১৫০ ফুট চওড়া ভূমি আমরা ওয়াসা থেকে নেবো। এজন্য কোনো ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে না। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় অনুমোদনের প্রয়োজন হবে। ওয়াসা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠালে সেখানে ভূমি হস্তান্তরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
তিনি আরো বলেন, এই পদ্ধতিতে ফিডার রোডটি আউটার রিং রোডের সাথে কীভাবে যুক্ত হবে সেবিষয়ে আমরা ডিজাইন চূড়ান্ত করবো।
এবিষয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও স্যুয়ারেজ প্রকল্পের পরিচালক আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত কারিগরি কমিটি স্যুয়ারেজ প্রকল্পের উত্তর প্রান্ত দিয়ে (প্রথমে ডান দিকে টার্ন এবং পরে বাম দিকে টার্ন নিয়ে) গিয়ে সাগরপাড়ে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে মত দিয়েছেন। চট্টগ্রামের উন্নয়নের স্বার্থে আমরাও মনে করি রোড যেমন প্রয়োজন তেমনিভাবে স্যুয়ারেজ প্রকল্পও প্রয়োজন।’
রাস্তার জন্য জায়গা দিলে ওয়াসার সুয়্যারেজ প্রকল্পে কোনো বাধা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘ সুয়্যারেজ প্রকল্পের জন্য আমাদের আরো জায়গা প্রয়োজন। ইতিমধ্যে আমরা মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন নিয়ে জেলা প্রশাসনে প্রায় ছয় একর জায়গা অধিগ্রহনের জন্য আবেদন করেছি। এখন সিডিএ হয়তো এক প্রান্ত থেকে আমাদের ( প্রথমের ডান দিকের বাঁক) জায়গা নিতে পারে কিন্তু পরবর্তীতে সোজা সাগরের দিকে যুক্ত হওয়ার দিকে অনেক ধানি জমি রয়েছে। সিডিএ চাইলে সেজায়গাগুলোও অধিগ্রহন করে ফিডার রোড বাস্তবায়ন করতে পারে। তারপরও জায়গা হস্তান্তরে সরকারি প্রক্রিয়া অনুরসরন করা হবে।’
উল্লেখ্য, পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা পর্যন্ত সাগরের পাঁড় ঘেঁষে ১৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ আউটার রিং রোড নির্মাণ করেছে সিডিএ। এই প্রকল্পের আওতায় তিনটি ফিডার রোড রয়েছে। প্রথম ফিডার রোডটি পতেঙ্গা ষ্টিলমিল নারিকেল তলা এলাকা দিয়ে রিং রোডে যুক্ত হবে। দ্বিতীয় ফিডার রোডটি বড়পোল মোড় থেকে হালিশহর আনন্দবাজার দিয়ে রিং রোডে যুক্ত হবে এবং তৃতীয় ফিডার রোডটি সাগরিকা স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে অলংকার মোড়ের সাথে যুক্ত হবে।