সড়ক-মহাসড়কে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেবে কে

৫ আগস্ট অনলাইন ও টিভিতে এবং তার পরের দিন দেশের পত্রিকাগুলোতে গুরুত্বের সঙ্গে একটি দুর্ঘটনার ছবি ছাপা হয়েছে। ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে একটি দৈতাকৃতির কনটেইনারবাহী লরির নিচে চাপা পড়ে চিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে আছে একটি প্রাইভেট কার। ছবিটি দেখে যে কেউ আঁতকে উঠবেন। কারণ এমন দুর্ঘটনার পর জীবিত থাকার তো প্রশ্নই আসে না।
দুর্ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে গত ৫ আগস্ট সীতাকুণ্ড এলাকায়।
সেদিন একটি প্রাইভেটকারের ওপর ৪০ টনের ওজনের একটি কনটেইনার উলটে পড়লে প্রাইভেটকারের দুটি চাকা ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। এতে ধারণা করা হয়-প্রাইভেটকারের আরোহীরা কেউ বেঁচে নেই। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে পত্রিকায় বলা হয়েছে, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সীতাকুণ্ড উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ অতিক্রমকালে প্রাইভেটকারটির পাশ দিয়ে একটি কনটেইনারবাহী লরি যাচ্ছিল। হঠাৎ লরিটি সড়ক বিভাজকে ধাক্কা খায় এবং লরিসহ মালবাহী কনটেইনার ছিটকে পাশের প্রাইভেটকারের ওপর গিয়ে পড়ে। প্রায় ৪০ মিনিট পর ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ আসে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল ক্রেন দিয়ে কনটেইনারটি সরিয়ে প্রাইভেটকারের যাত্রীদের জীবিত উদ্ধার করে।
এই দুর্ঘটনায় সব যাত্রী প্রাণে বেঁচে গেছেন ভাগ্যক্রমে। এভাবে বেঁচে যাওয়াও খুব স্বাভাবিক নয়। এবার এরা বেঁচে গেলেও এ ধরনের দুর্ঘটনা এখন সড়ক-মহাসড়কে নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এর আগে কয়েকটি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাতে হয়েছে অনেককে। প্রশ্ন হলো, আমাদের সড়ক ব্যবস্থাপনায় প্রচুর জনবল আছে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায়ও প্রচুর জনবল আছে। এর মধ্যে মহাসড়কের নিরাপত্তা বিধানে হাইওয়ে পুলিশ নামে বিশেষ পুলিশও আছে। তারপরও আমাদের সড়কগুলো একেকটা মৃত্যুফাঁদ হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন সড়কে নানা ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে যোগ হলো কনটেইনার চাপা পড়া। সড়ক-মহাসড়কে চলতে গিয়ে আমরাও অনেক সময় দেখতে পাই লরির ওপর কনটেইনারের ‘লক’ ঠিকমতো লাগানো হয়নি। এ ধরনের লরির পাশ দিয়ে বা পিছু পিছু যেতে চরম নিরাপত্তাহীনতা বোধ করলেও আমাদের কিছুই করার থাকে না।
আমরা জানি যে কোনো কাজ করার প্রথম ধাপ হলো নিজের এবং আশেপাশের সবার জীবন রক্ষার যাবতীয় শর্ত পূরণ করা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমাদের দেশে এই চর্চা কেউ করে না। না মালিকপক্ষ, না শ্রমিক-কর্মচারী। যার ফলে দুর্ঘটনায় অধিকাংশ সময় শ্রমিকদের প্রাণহানী ঘটলেও এতে তাদের বোধোদয় হয় না। লরিতে কনটেইনার তোলার পর তা ঠিকমতো হয়েছে কিনা কিংবা কনটেইনারবাহী লরির চালক ও সহকারী তাদের দায়িত্ব যথাযথ পালন করছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব কার ওপর তা-ও তো আমরা জানি না। এটা বন্দর কর্তৃপক্ষ দেখবে নাকি ট্রাফিক পুলিশ না হাইওয়ে পুলিশ দেখবে তা-ও অজানা। তবে যাদের দেখার কথা তারা যে যথাযথভাবে দেখছে না তাতো বোঝাই যাচ্ছে।