সংলাপে বসে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পথ খুঁজুন

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত

সুপ্রভাত ডেস্ক »

সংঘাত যে গণতন্ত্রের পথ নয়, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ’ নির্বাচনের পথ খুঁজতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে শর্তহীন সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে গিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে বৈঠক করার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এ কথা বলেন। খবর বিডিনিউজের।

ভোট সামনে রেখে তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি আর বিরোধী দলের হরতাল-অবরোধের মধ্যে এদিন আকস্মিকভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাত করতে যান মার্কিন রাষ্ট্রদূত।

ইসির জনসংযোগ শাখার কর্মকর্তারা জানায়, এ বৈঠক পূর্ব নির্ধারিত ছিল না। সকালে অফিসে এসে তারা জানতে পারেন, মার্কিন রাষ্টদূত কমিশনে এসেছেন।

সকাল ১০টা থেকে এক ঘণ্টার বেশি সময় বৈঠক করার পর সাংবাদিকদের সামনে এসে পিটার হাস বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী আমরা নির্বাচনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা চাই। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করা রাজনৈতিক দল, সরকার, ভোটার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম এবং অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব।’

তিনি বলেন, ভোটাধিকার প্রয়োগ, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ বা ইন্টারনেট ব্যবহারে বাধা দেওয়া, সহিংসতার মত বিষয়গুলো এবং গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে খর্ব করে– এরকম সবকিছুই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

গণতান্ত্রিক নির্বাচনে কোনো পক্ষের রাজনৈতিক সহিংসতার কোনো স্থান নেই। আমি আশা করি, সব পক্ষ শর্তহীনভাবে সংলাপে বসে সামনে দিকে এগোবে এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পথ খুঁজে নেবে।’

নির্বাচনের পরিবেশ দেখতে এ মাসের শুরুতে বাংলাদেশে আসা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) যৌথ প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলও যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গিয়ে ‘অংশগ্রহণমূলক ও সহিংসতামুক্ত’ নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অর্থবহ সংলাপের সুপারিশ করেছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তার বাংলাদেশ সফরে এসে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনকে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকারও এ বিষয়ে একমত।

এর প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘বিএনপি বলছে, তারা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চায়, সংসদ ডিজলভ করা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়, নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ চায়। আমরা তো এই শর্তযুক্ত সংলাপে রাজি হব না।

সংলাপের চিন্তা আমরা করব তখন যখন তারা (বিএনপি) এই চারটি শর্ত যদি তারা প্রত্যাহার করে নেয়। শর্তযুক্ত কোনো সংলাপের ব্যাপারে আমাদের কোনো চিন্তাভাবনা নেই। শর্ত তারা প্রত্যাহার করলে তখন দেখা যাবে।’

এর জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, সরকারের সঙ্গে ‘শর্তহীন সংলাপে’ বসতে তারা রাজি নন।
ইসির হাতে ‘বিকল্প নেই’

সংলাপের আহ্বানে সাড়া দেয়নি কোনো পক্ষ, বরং ভোটের দুই মাস বাকি থাকতে ফিরে এসেছে হরতাল-অবরোধ, পরিস্থিতি গড়াচ্ছে সহিংসতার দিকে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলছেন, পরিস্থিতি প্রতিকূল হলেও তাদের পক্ষে নিয়মের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। ভোটে অংশ নেবে কি নেবে না রাজনৈতিক দলগুলোর সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু ইসির হাতে সে ধরনের কোনো বিকল্প নেই। নির্ধারিত পদ্ধতিতে এবং নির্ধারিত সময়ে অবশ্যই নির্বাচন হবে।

মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের পর আলাদাভাবে সাংবাদিকদের সামনে আসেন সিইসি। তিনি জানান, তাদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি জানতে চেয়েছেন রাষ্ট্রদূত। বিরাজমান মতভেদ ও মতানৈক্য নিরসনে দলগুলোকে সংলাপে বসারও তাগিদ দিয়েছেন।

আমাদের তরফ থেকে স্পষ্ট করে বলেছি যে, ইসির হাতে কিন্তু কোনো অপশন নেই। ইসিকে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার মধ্যে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করতে হবে।

সিইসি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন অপশন থাকে। তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে, অংশগ্রহণ নাও করতে পারে। তিনশ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে, পাঁচটি আসনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে। দলগুলো এককভাবে ৩০০ আসনে কনটেস্ট করতে পারে বা অ্যালায়েন্সের মাধ্যমে অংশ নিতে পারে।

বিভিন্ন ধরনের অপশন ওপেন রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্যে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের জন্য ওই ধরনের কোনো অপশন ওপেন নেই। কাজেই আমরা দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাচ্ছি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য।

সিইসি বলেন, পরিস্থিতি প্রতিকূল হলেও ইসি করার কিছু নেই। তবে যত বেশি অনুকূল হবে, ইসির কাজ তত সহজ হবে।

আমরা এখনও প্রত্যাশা করব এবং শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশা করি- সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। কিন্তু প্রতিকূল হলে নির্বাচন করা হবে না- এ ধরনের মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং যেন জনগণের মধ্যে না থাকে। সেজন্য স্পস্ট করে বলতে চাই- নির্বাচন নির্ধারিত পদ্ধতিতে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অবশ্য অনুষ্ঠিত হবে। আমরা সে ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত কী মতামত দিয়েছেন, সে কথা তুলে ধরে সিইসি বলেন, রাস্তায় শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে সলিউশন হবে বলে আমি বা আমরা মনে করি না। উনিও বলেছেন, বিশ্বাস করেন- দলগুলোর মধ্যে সংলাপ হওয়া দরকারৃ। উনি এখনও আহ্বান করলেন সকলকে সংলাপের মাধ্যমে বিরাজমান মতভেদ, মতানৈক্য নিরসন করার জন্যে।

প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ আজ
নতুন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সঙ্গে বুধবার সৌজন্য সাক্ষাত করবেন সিইসি এবং চার নির্বাচন কমিশনার।

সেজন্য ইতোমধ্যে প্রধান বিচারপতির কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে জানিয়ে ইসির একান্ত সচিব রিয়াজউদ্দিন বলেন, ‘উনি প্রধান বিচারপতি হওয়ার পর এটা হবে ইসির সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ।’

এবার ইসি গঠনের সার্চ কমিটির প্রধান ছিলেন বিচাপতি ওবায়দুল হাসান। তবে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাতের সঙ্গে তফসিলের কোনো সম্পর্ক নেই জানিয়ে রিয়াজউদ্দিন বলেন, এটা শুধু সৌজন্য সাক্ষাৎ।

নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরিকল্পনা করেছে ইসি।সেই প্রস্তুতির বিষয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে অবহিত করতে ১ থেকে ৫ নভেম্বরের মধ্যে সাক্ষাতের সময় চেয়ে চিঠি দিয়েছে কমিশন।

রাষ্ট্রপতি চিকিৎসার জন্যে দেশের বাইরে রয়েছেন। বুধবার তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। রাষ্ট্রপতি এলেই সাক্ষাতের সময়সূচি চূড়ান্ত হতে পারে।
রেওয়াজ অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ইসি রাষ্ট্রপতিকে সব শেষ অগ্রগতি অবহিত করে।