শোক হয়ে উঠুক অপরিমেয় শক্তির আধার

প্রতিটি জাতিই কিছু ক্ষণজন্মা মানুষের জন্ম দেয়। এঁরাই জাতিকে সঠিক দিকনির্দেশনা দেন, নিজ মেধা ও ওজস্বিতার গুণে জাতিকে মুক্ত করেন, জাতির ভাগ্য বদলে দেন, জাতিকে মর্যাদার আসনে অভিষিক্ত করেন। এঁদের কেউ রাজনীতির ক্ষেত্রে, কেউ শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদান রেখে জাতিকে সমৃদ্ধ করেন।
মহাত্মা গান্ধী, জর্জ ওয়াশিংটন, উইনস্টন চার্চিল, মাও সে তুং, মহামতি লেনিন, ফিদেল কাস্ত্রো, চার্লস দি গল, ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট, চে গুয়েভারা, আব্রাহাম লিঙ্কন, নেলসন ম্যান্ডেলা এঁরা আজ শুধু নিজ দেশেই নয় বিশ্বের সবদেশেই সম্মানীয়, পূজনীয়।
বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামও আজ উচ্চারিত হয় এই বিশ্ববরেণ্য নেতাদের নামের সঙ্গে। কারণ তিনি তাঁর জাতিকে এনে দিয়েছিলেন স্বাধীনতার প্রথম স্বাদ। হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালি কখনো স্বাধীন জাতি হিসেবে নিজের পরিচয় দিতে পারেনি। সে জাতিকে তিনি স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন এবং সে স্বপ্ন পূরণের পথ নির্দিষ্টও করে দিয়েছিলেন। এ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর অবদান ও অনন্যতা বিশ্বের অন্য নেতাদের চেয়ে ভিন্ন এবং সেসঙ্গে অধিক মর্যাদাকর।
বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় মনে রাখা দরকার তিনি জন্মেছিলেন একটি পরাধীন দেশে। ফলে তাঁকে দেশকে স্বাধীন করার মহৎ কাজের দায়িত্বটিও পালন করতে হয়েছিল এবং সে কাজটি তিনি সম্পাদন করেছিলেন খুব অল্প সময়েই। এত অল্পদিনের আন্দোলন-সংগ্রামে একটি দেশকে স্বাধীন করার নজিরও বিশ্বে নেই।
তিনি শুধু একজন জাতীয়তাবাদী নেতাই নন, একই সঙ্গে তিনি একজন বিপ্লবীও। তিনি যে রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আদর্শ ও চরিত্রের দিক দিয়েও তা ছিল অনন্য ও ব্যতিক্রমধর্মী। দ্বিজাতিতত্ত্ব বা সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ভাগ হওয়া ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে থেকে নতুন যে দেশটি স্বাধীন করলেন বঙ্গবন্ধু তা ছিল এ উপমহাদেশের রাজনীতির বড় ব্যতিক্রম, বড় পরিবর্তন।
একটি শান্তিবাদী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সবরকম চেষ্টা তিনি করেছিলেন। কিন্তু ঘাতকেরা তাঁকে সে সুযোগটি দেয়নি। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট তাঁকে হত্যা করা হয় নির্মমভাবে সপরিবারে। তারপর থেকে দীর্ঘ ২৮ বছর রাষ্ট্রটি তার নির্দিষ্ট পথে থাকেনি। আর বর্তমানে দেশে সততা ও আদর্শের যে আকাল হয়েছে তা এই বেদনাবিধুর ঘটনারই প্রতিক্রিয়া। রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত এই জাতির ঐক্যের প্রতীক হতে পারতেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দুঃখজনকভাবে সত্যি যে একটি শক্তি তাদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর অবদানকে অস্বীকার করতে চেয়েছে সবসময়।
এখন যদি এই পরিস্থিতি থেকে আমরা উত্তরণ ঘটাতে চাই তাহলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে পথিকৃত করা ছাড়া আর উপায়ান্তর নেই। দেশবিরোধী, জাতিবিরোধী যে কোনো চক্রান্তকে মোকাবেলা করতে শোককেই শক্তির অপরিমেয় আধার করে নিতে হবে।