যতই দিন যাচ্ছে করোনার ভয়াবহ রূপ আতঙ্ক ছড়াচ্ছে দেশব্যাপী। গত সোমবার সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে, মারা গেছেন ১৬৪ জন। শনাক্ত হয়েছে প্রায় ১০ হাজার, শনাক্তের দিক থেকে এটিই সর্বোচ্চ। চট্টগ্রামে রোববার ২ জন নগরে ও ৪ জন উপজেলায় মারা গিয়েছেন, ঐদিন নতুন শনাক্ত ৩৬৯ জন, শনাক্তের হার ৩৪ শতাংশ। বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, করোনার শক্তিশালী ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের হার প্রায় ৭৮ শতাংশ। জেলাÑউপজেলায় স্বাস্থ্যসেবা অপ্রতুল হওয়ায় বিশেষত অক্সিজেন সংকটের কারণে এই কয়দিনে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। সাতক্ষীরা, বগুড়ার হাসপাতালে অক্সিজেন সংকটে রোগীর মৃত্যুর খবর পত্রÑপত্রিকায় এসেছে।
এদিকে জুন মাসের মাঝামাঝির তুলনায় ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ/তিনগুণ বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম অক্সিজেনের উৎপাদন ও সরবরাহে কোনো সংকট নেই উল্লেখ করে সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন, রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেলে সেটা চ্যালেঞ্জ হতে পারে। তাহলে অক্সিজেনের অভাবে রোগী মারা গেল কিভাবে? এটি কি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ঘাটতি নয়। বিশেষজ্ঞরা করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণের বর্ধিত হারকে উদ্বেগজনক বলেছেন, এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যসেবা ও অক্সিজেন সরবরাহের ব্যাপারটিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। সংসদে বিরোধীদলীয় সদস্যগণ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অব্যবস্থাপনা, প্রতিরোধে প্রস্তুতিহীনতার কঠোর সমালোচনা করেছেন। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৭ জেলায় সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট নেই, ৩৫টি জেলা সদরে আইসিইউ নেই, কিছু কিছু হাসপাতালে এসবের কাজ চলছে তবে ঢিমেতালে। বর্তমান পরিস্থিতিতে নজরদারি বাড়িয়ে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানির ব্যবস্থা করে আইসিইউ ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্টের কাজ শেষ করতে হবে। হাইফ্লো নাজাল কান্যুলার সংকট ও তীব্র। প্রায় দেড় বছরেও করোনার পরিস্থিতি প্রতিকারে স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশা কাটেনি।
স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, আক্রান্তদের ৫০ শতাংশই গ্রামের। অথচ গ্রামাঞ্চলে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নেই। রোগীরা ছুটছে জেলায়, রাজধানীর হাসপাতালগুলিতে। সরকারের স্বাস্থ্যসেবা ও সুযোগ ঢাকা কেন্দ্রিক, জেলাÑউপজেলার দিকে নজর না দেওয়ার পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে দেশবাসীকে। গ্রামাঞ্চলে ও শহরে জনগণকে সচেতনও উদ্বুদ্ধকরণে জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নিয়ে কাজ শুরু করা প্রয়োজন। করোনার বর্তমান পরিস্থিতিতে লকডাউন আরো ১ সপ্তাহ বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। আগের কঠোর বিধিনিষেধ বহাল থাকছে। এই সময়ে কাজ হারানো এবং গরিব বস্তিবাসীদের খাদ্য সহায়তা দিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। করোনা পরিস্থিতির অবনতিতে নগর ও উপজেলার হাসপাতালগুলিতে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো, অক্সিজেন সরবরাহ, আইসিইউ ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসুবিধা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য প্রশাসনকে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জাতীয়ভাবে প্রতিরোধ কমিটি গঠন বিবেচনা করতে হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে এমন কি স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের নানা দফতরের মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। জেলা-উপজেলা-গ্রামাঞ্চলের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
মতামত সম্পাদকীয়