রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ছাড়া বিকল্প কিছু নেই

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংসতা থেকে প্রাণ বাঁচাতে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গা নারী-শিশু পুরুষের ঢল নেমেছিল বাংলাদেশে। পরের কয়েক মাসে অন্তত সাত লাখ রোহিঙ্গা নাফ নদী পেরিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল বাংলাদেশে। তখন স্থানীয় অধিবাসীসহ অনেকে আশ্রয় দেওয়ার বিরোধিতা করে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল যে, রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত সমাধান হবে না। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আশঙ্কা সত্যিতে পরিণত হয়েছে।
তবে এরমধ্যে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ কখনো দ্বিপক্ষীয়, কখনো চীনের মধ্যস্থতায় ত্রিপক্ষীয় আলোচনা চালিয়ে গেছে। কিন্তু মিয়ানমার সরকার ও রোহিঙ্গাদের অনীহার কারণে তারিখ ঘোষণার পরও দুই দফায় প্রত্যাবাসনের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। ২০২১ সালে মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়াটি আরও জটিলতার মধ্যে পড়ে যায়।
এই অনিশ্চিত প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক অর্থসহায়তাও কমে আসছে। চলতি বছর তাদের জন্য যে সহায়তা সংগ্রহের কথা, তার মধ্যে মাত্র ২৮ দশমিক ৯ শতাংশ পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) বাংলাদেশে আশ্রিত নতুন ও পুরানো মিলিয়ে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার মানবিক সেবায় আর্থিক সহায়তা এবং তাদের সংকট সমাধানে রাজনৈতিক সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আবারও আহ্বান জানিয়েছে।
মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর পশ্চিমা দেশ ও জোট এখন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টিকে সরিয়ে রেখে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশটির গণতান্ত্রিক উত্তরণে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের প্রত্যাবাসনের পরীক্ষামূলক প্রক্রিয়া শ্লথ হয়ে পড়েছে।
এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায় বাংলাদেশ। রাখাইনে ফেরার এই তালিকায় আছে ৭১৭৬ রোহিঙ্গা। প্রতিদিন ৩০০ জনকে মিয়ানমারের মংডুতে প্রাথমিক শিবিরে রাখার কথা।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম গত বুধবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের পরীক্ষামূলক প্রত্যাবাসনে কারও বাধা সৃষ্টি করা উচিত নয়। এ ধরনের পরীক্ষামূলক প্রত্যাবাসন বড় আকারে প্রত্যাবাসনের আগে সমস্যাগুলো বুঝতে সহায়তা করবে।’
আমরাও প্রত্যাশা করব যে করেই হোক প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটা শুরু করা জরুরি। কারণ রোহিঙ্গারা নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থায় মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে।