রেলে নাশকতা, এ কেমন আন্দোলন!

বিরামপুর রেলওয়ে স্টেশনে আনসার ও ভিডিপি সদস্য ইফতেখার রহমান বলেন, মঙ্গলবার রাতে সহকর্মীকে নিয়ে ১ নম্বর সিগন্যাল পয়েন্ট থেকে দক্ষিণে পাহারা দিচ্ছিলাম। তখন হঠাৎ করে রেললাইনের ওপর আগুন জ্বলতে দেখি। কাছে গিয়ে সেখানে রেললাইনের ওপর স্লিপারের সঙ্গে বাঁশ ও গাছের ডাল বাঁধা দেখতে পাই। সঙ্গে সঙ্গে গলা থেকে মাফলার খুলে ট্রেনের দিকে যেতে যেতে ওড়াতে থাকি। হাতে থাকা টর্চলাইট জ্বালিয়ে ট্রেনচালককে ট্রেন থামানোর সংকেত দিই। সংকেত দেখে চালক ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ২০০ গজ দূরে ট্রেন থামান। রেল লাইনে নাশকতা ঠেকাতে গত কয়েকদিন থেকেই রেললাইন পাহারা দিচ্ছিলেন আনসার সদস্য ইফতেখার রহমান। প্রতিদিনকার মতোই এক সহকর্মীকে নিয়ে পাহারায় ব্যস্ত ছিলেন তিনি। মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ১১টার দিকে দিনাজপুরের বিরামপুর পৌর শহরের পাহানপাড় এলাকার রেললাইনে এ ঘটনা ঘটে।
একইদিন নাশকতায় আগুনে পুড়ে মারা গেলেন মা-শিশুসহ চারজন। এরমধ্যে নাদিরা আক্তার পপি (৩৫) ও তার তিন বছরের শিশু সন্তান ইয়াসিন রয়েছে। মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁও রেলস্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে অবরোধকারীদের দেওয়া আগুনে ট্রেনের বগিতে আটকে পড়ে সন্তানকে বুকে জড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই পুড়ে অঙ্গার হয়ে যান পপি। অঙ্গার হয়ে যাওয়া মা ও শিশুকে আলিঙ্গনরত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। মর্মান্তিক এই দৃশ্য দেখে হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্সসহ আগত দর্শনার্থীরা হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। পরে চিকিৎসকদের চেষ্টায় মা ও শিশু ইয়াসিনকে আলাদা করা হয়। ঘটনার সংবাদ শুনে হাসপাতালে ছুটে আসেন স্বজনরা। কান্না ও আর্তনাদে হাসপাতালের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।
২৮ অক্টোবরের ঢাকায় সমাবেশ ভণ্ডুল হওয়ার পর বিএনপি ও সমমনারা যে হরতাল-অবরোধ পালন করে আসছে, তার মধ্যে রেলে পাঁচটি বড় ধরনের নাশকতার ঘটনা ঘটল। এসব ঘটনায় প্রাণ গেছে পাঁচজনের, রেলের কর্মীসহ আহত হয়েছেন অনেকে।
এর মধ্যে গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন, যাতে ৭ জানুয়ারি ভোটের তারিখ রাখা হয়েছে। এ ভোট বর্জন করে বিএনপি রাজপথের আন্দোলনেই থাকতে চাইছে। তবে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির শুরু থেকেই বাস, ট্রাক, রেলসহ বিভিন্ন পরিবহন ও স্থাপনায় নাশকতার খবর আসছে। এ পর্যন্ত পুরোপুরি পুড়ে গেছে রেলের সাতটি কোচ, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আটটি কোচ এবং একটি ইঞ্জিন। এছাড়া লাইনে আগুন দেওয়া, ফিসপ্লেট তুলে ফেলা, ককটেল বিস্ফোরণের বেশকিছু ঘটনার কথাও জানিয়েছে রেলওয়ে।
এ ধরনের আচরণকে কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আন্দোলন করা সব দলের অধিকার। কিন্তু আন্দোলনের নামে নিরীহ মানুষ পুড়িয়ে মারা, জাতীয় সম্পদ বিনষ্ট করা অত্যন্ত গর্হিত, নিন্দনীয় ও অমার্জনীয় অপরাধ। রাজনীতিচর্চার নামে এমন অপরাধ চলতে দেওয়া যায় না। ২০১৩ ও ১৪ সালেও একই ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজ করা হয়েছিল। বহু প্রাণ, বহু সম্পদহানি হয়েছে দেশের। এসব করে আন্দোলনকারীরা কিছুই অর্জন করতে পারেনি। একই আচরণ আবার করলে জনসমর্থন পাবে না তারা। কাজেই তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।