রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় আর কত প্রাণ যাবে

গত রোববার দুপুরের দিকে সীতাকুণ্ডের ফকিরহাট রেলক্রসিং এলাকায় সোনার বাংলা ট্রেনের সঙ্গে একটি পুলিশভ্যানের সংঘর্ষ হলে তিনজন পুলিশ কনস্টেবলের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনায় আহত দুইজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এসময় সিগন্যাল ছিল না, গেটম্যানও ছিলেন না। কোনোধরনের বাধা না পেয়ে পুলিশের গাড়িটি রেললাইনে উঠে যায় এবং স্টার্ট বন্ধ হয়ে পড়ে। একই সময়ে আসা ট্রেনের ধাক্কায় মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটে।
এভাবে অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক। মনে হয় একেকটা রেলক্রসিং যেন একেকটা মৃত্যুফাঁদ। সারাদেশে এ ধরনের মৃত্যুফাঁদ তথা রেলক্রসিং আছে দুই হাজার ৮৫৬টি। এর মধ্যে প্রায় এক হাজার ৩৬১টিরই কোনো অনুমোদন নেই। অন্যদিকে এক হাজার ৪৯৫টি বৈধ ক্রসিংয়ের মধ্যে আবার ৬৩২টির গেটম্যানই নেই। অবৈধ ক্রসিংয়ের বেশিরভাগ রাস্তাই স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) ও ইউনিয়ন পরিষদের। বিগত এক যুগে রেলওয়েতে এক লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও লেভেল ক্রসিংগুলো নিরাপদ করা হয়নি। যে কারণে একটি দুর্ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে আরেকটি দুর্ঘটনা ঘটছে। এমন রেলক্রসিংয়ে ছোট একটি সতর্কীকরণ নোটিশ টাঙিয়ে কর্তৃপক্ষ দায় সারে। যখনই দুর্ঘটনা ঘটে তখন একজনকে দায়ী করে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। সে তদন্ত কমিটির রিপোর্টের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো প্রমাণ নেই।
রেলপথের পাশে একটি নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে সাধারণ মানুষের প্রবেশ আইনত দণ্ডনীয়। রেলওয়ে অধ্যাদেশ ১৮৯০ অনুসারে বিনা অনুমতিতে রেলপথের ওপর দিয়ে হাঁটলে গ্রেফতারসহ দুই বছরের কারাদণ্ডের বিধান আছে। যেহেতু দেশে ট্রেন দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ অবৈধ ও অরক্ষিত রেলক্রসিং, সেহেতু এ নিয়ে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ সমস্যার সমাধানে তৎপর হবে। কিন্তু সে বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ উদাসীন।
জননিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অবৈধ লেভেল ক্রসিং বন্ধ করা জরুরি। সেসঙ্গে রেল ক্রসিং-ব্যবস্থা নিয়ে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। জনগণের নিরাপত্তা বিধান করা প্রথম কাজ। তবে দুর্ঘটনার জন্য সবসময় যে গেটম্যানরা দায়ী তা কিন্তু নয়। মানুষের দায়িত্বহীনতাও একটি বড় কারণ। ট্রেনের আগে পার হয়ে যাওয়া বা যাওয়ার সময় তাড়াহুড়ো করাও দুর্ঘটনার বড় কারণ। কাজেই মানুষকেও সচেতন হতে হবে। নিজের জীবনের নিরাপত্তার কথা নিজেকেই ভাবতে হবে।