সুপ্রভাত ডেস্ক »
ইউক্রেনে হামলার পর আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞার জালে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ফেলছে। এ মুহূর্তে রাশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে নিষেধাজ্ঞা জর্জরিত দেশ।
কিন্তু এর পরও জার্মানি এবং ইউরোপের আরো কয়েকটি দেশের আপত্তির মুখে রুশ তেল ও গ্যাস এখনও এই নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে। কারণ রুশ জ্বালানির ওপর, বিশেষ করে গ্যাসের ওপর, তাদের নির্ভরতা।
বুধবারও জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎস বলেছেন, রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলে ইউরোপ অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়বে।
রুশ জ্বলানির ওপর ইউরোপের নির্ভরতা কমাতে এখন বড় ধরণের প্রতিশ্রুতি নিয়ে হাজির হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যে দেশটি রাশিয়াকে বিশ্ব অর্থনীতি থেকে পুরোপুরি একঘরে ফেলতে মরিয়া।
প্রেসিডেন্ট বাইডেনের উপস্থিতিতে ব্রাসেলসে শুক্রবার হওয়া এক চুক্তির আওতায় এ বছরের শেষ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অতিরিক্ত ১৫০০ কোটি ঘন মিটার এলএনজি বা তরলীকৃত গ্যাস সরবরাহ করবে।
বোঝাপড়া চূড়ান্ত হওয়ার পর এক সংবাদ সম্মেলনে ইউরোপ সফররত প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, এ বছর ইউরোপে গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে আমেরিকা সবরকম পদক্ষেপ নেবে।
সংবাদ সম্মেলনে হাজির ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেইন আমেরিকার এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নির্ভরতা শূন্যের কোটায় নামিয়ে
এ বছরের মধ্যে রুশ গ্যাসের ওপর নির্ভরতা দুই -তৃতীয়াংশ কমানোর টার্গেট নিয়েছে ইইউ।
কিন্তু রুশ জ্বালানির ও পর নির্ভরতা পুরোপুরি ঘোচানো কতটা সহজ হবে ইউরোপের জন্য? আমেরিকার ওপর কতটা ভরসা তারা করতে পারে?
বিবিসির সংবাদদাতা পল কারবি বলছেন, ইইউ-এর ২৭টি দেশকে তাদের গ্যাসের চাহিদা মেটাতে আমেরিকার বাইরে অন্যান্য উৎপাদনকারী দেশের দিকেও তাকাতে হবে।
গত বছরও ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার কাছ থেকে ১৫৫০০ কোটি ঘনমিটার গ্যাস কিনেছে যা তাদের মোট গ্যাস আমদানির ৪০ শতাংশ।
রুশ গ্যাসের ওপর জার্মানির নির্ভরতা অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি – প্রায় ৫৫ শতাংশ।
সেই তুলনায় ইইউ গত বছর তাদের চাহিদার মোট ২৫% কিনেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। চুক্তি অনুযায়ী এ বছর যদি আমেরিকা সত্যিই ইউরোপকে অতিরিক্ত ১৫০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস দিতে পারে তার পরও চাহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে অনেক ফারাক রয়ে যাবে।
ফলে, রাশিয়াকে পুরোপুরি বর্জন করতে হলে বা নির্ভরতা কমাতে হলে অন্য বিক্রেতার দিকে ইউরোপকে তাকাতে হবেই।
রাশিয়ার পাশাপাশি বিশ্বের অন্যতম প্রধান গ্যাস রপ্তানিকারক দেশ হলো কাতার। দোহার সরকার ইতোমধ্যেই ইউরোপকে জানিয়ে দিয়েছে তাদের ওপর যেন খুব বেশি ভরসা করা না হয় ।
তার ওপর রয়েছে, পল কারবি বলছেন, ইউরোপে এলএনজি টার্মিনালের অপ্রতুলতা। যেগুলো রয়েছে সেগুলো এমনিতেই চাপের মধ্যে রয়েছে। বাড়তি আমদানির চাপ তারা নিতে পারবেনা।
স্পেনের সক্ষমতা ইউরোপে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু সেখান থেকে অন্যান্য দেশে পাঠানোর মত যথেষ্ট পাইপলাইন সুবিধা নেই।
জার্মানি সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গ্যাস আমদানির ওপর খুব ভরসা করছে না। বরঞ্চ তারা নরওয়ের সাথে দেন-দরবার শুরু করেছে।
সূত্র : বিবিসি বাংলা