নিজস্ব প্রতিনিধি, হাটহাজারী »
রাউজানে দুবাই প্রবাসী মোহাম্মদ সরোয়ার চৌধুরীর বাড়িতে তার ‘বাবাকে ছুরির মুখে জিম্মি করে’ ৭০ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থ লুটে নেয় ডাকাত দলের একটি চক্র।
এ ঘটনার ২৩ দিন পর ওই ডাকাত চক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭। একই সঙ্গে গ্রেফতার করা হয় তাদের লুটে নেওয়া স্বর্ণালংকারগুলোর ক্রেতা এক জুয়েলারি দোকানিকে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের দিকে র্যাব-৭ এর পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, সোমবার রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো, মুসা, সাইদুল ইসলাম প্রকাশ সাইফুল, খোরশেদুল আলম, সাজ্জাদ হোসেন, মো. বাপ্পি, সজল শীল, মো. ইদ্রিস প্রকাশ কাজল এবং জুয়েলারি দোকানি বিপ্লব চন্দ্র সাহা। এসময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৪৬ ভরি স্বর্ণালংকার এবং স্বর্ণবিক্রির ৩০ লাখ ১ হাজার ৬শ’ টাকা।
নগরীর চান্দগাঁও ক্যাম্পে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ বলেন, মোহাম্মদ সরোয়ার চৌধুরী একজন প্রবাসী এবং রেমিট্যান্স যোদ্ধা। তিনি ২৭ অক্টোবর দুবাই থেকে বাংলাদেশে আসেন। পরের দিন ২৮ অক্টোবর দিবাগত রাতে সরোয়ার তার মামাতো বোনের বিয়ে উপলক্ষে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মামার বাড়ি যান। ওই সময় ঘরে তার বৃদ্ধ বাবা ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। সেই সুযোগে রাতে একদল ডাকাত সরোয়ারের পাকা ঘরের পিছনের লোহার জানালার গ্রিল কেটে ঘরে প্রবেশ করে এবং তার বৃদ্ধা বাবাকে কম্বল দিয়ে চেপে ধরে চোখ-মুখ ও হাত-পা বেঁধে গলায় ছুরি ধরে হত্যার ভয় দেখিয়ে আলমারির চাবি নিয়ে নেয়। এসময় আলমারিতে থাকা সরোয়ারের স্ত্রীর, মা-বোন ও আত্মীয়স্বজনদের আমানত হিসেবে রাখা মোট ৭০ ভরি স্বর্ণ নিয়ে যায় ডাকাতরা। এছাড়াও ওই চক্রের সদস্যরা সরোয়ারের মামাতো বোনের বিয়ের জন্য ঘরে রাখা ৫ লাখ টাকা, ৫টি মোবাইল সেট ও ১টি ট্যাব নিয়ে যায়।
র্যাবের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৯ নভেম্বর এ ঘটনায় মোহাম্মদ সরোয়ার চৌধুরী বাদি হয়ে রাউজান থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি ডাকাতি মামলা দায়ের করেন। পাশাপাশি বিষয়টি র্যাব-৭ কে অবহিত করা হয়। সেই থেকে মূল আসামিদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার ও গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রেখে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অবস্থান শনাক্ত করে। পরে সোমবার বিকেলে দক্ষিণ গহিরা সিবের ঘাট এলাকার একটি বাড়ি থেকে মো. মুসা নামে এক ডাকাতকে গ্রেফতার করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মুসার দেওয়া তথ্য মতে একই দিনে উপজেলার গহিরার উত্তর-পূর্ব কোতোয়ালী ঘোনার দলই নগরস্থ একটি বাড়ি থেকে ডাকাত দলের আরেক সদস্য সাইদুল ইসলাম প্রকাশ সাইফুলকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের দু’জনের দেয়া তথ্যমতে রাউজান ও হাটহাজারী থানার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ডাকাত দলের আরও ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতিকাজে ব্যবহৃত গ্রিল কাটার, ছোরা, টর্চ-লাইটসহ মোট ৪৬ ভরি স্বর্ণালংকার এবং স্বর্ণবিক্রির ৩০ লাখ ১ হাজার ৬শ’ টাকা উদ্ধার করা হয়। একইসঙ্গে ডাকাতি হওয়া স্বর্ণালংকার কেনা জুয়েলারির দোকানিকেও গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব জানায়, গ্রেফতারকৃতরা ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকার করেছে। একইসঙ্গে তাদের কাছ থেকে ডাকাতি হওয়া স্বর্ণালংকারগুলো কেনার কথাও স্বীকার করেছে জুয়েলারি দোকানি বিপ্লব চন্দ্র সাহা। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।