নিজস্ব প্রতিবেদক »
কালাচার অ্যান্ড হেরিটেজ ঘোষিত চট্টগ্রামের সিআরবি’র প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে যারা হাসপাতাল নির্মাণের পক্ষ নেবেন, তারা চট্টগ্রামের তথা দেশের শক্র বলে মন্তব্য করেন সমাজ বিজ্ঞানী একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রফেসর ড. অনুপম সেন।
গতকাল সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে আয়োজিত নাগরিক সমাজ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন। সিআরবি থেকে প্রস্তবিত হাসপাতাল ও কলেজ নির্মাণ প্রকল্প অন্যত্র স্থানান্তরে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন নাগরিক সমাজ চট্টগ্রামের নেতৃবৃন্দ।
নাগরিক সমাজ চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. অনুপম সেনের সভাপতিত্বে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কো চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও রাজনীতিবিদ মফিজুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনুচ, নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দার, প্রফেসর মো. হোসাইন কবির, পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. ইদ্রিস আলী, যুগ্ম সদস্য সচিক কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল, নাট্য ব্যক্তিত্ব সাইফুল ইসলাম বাবু, অ্যাডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, বিএফইউজে যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী, আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসান, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, পরিবেশবিদ শরীফ চৌহানসহ অনেকেই। সঞ্চালনায় ছিলেন কবি ও সাংবাদিক শুকলাল দাশ।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সিআরবি চট্টগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মিত হলে পরিবেশ দূষণ ঘটবে এবং পুরো সিআরবি এলাকাটির প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক বলয় হুমকির মুখে পড়বে। এছাড়া সিআরবি এলাকায় যেহেতু বর্ষবরণসহ বছরব্যাপী নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়, এটির সংলগ্ন এলাকায় হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ নির্মিত হলে তা হাসপাতালের রোগী ও মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের পাঠদানেও তীব্র ব্যাঘাত ঘটানোর আশঙ্কা থাকবে। এক কথায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি সিআরবির অনুপম ও প্রশান্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইফেক্টিভ ক্রিয়েশন অন হিউম্যান অপিনিয়নের (ইকো) উদ্যোগে পরিচালিত গবেষণায় সিআরবিতে ১৯৭টি উদ্ভিদ প্রজাতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বড় গাছ ৭৪ প্রজাতির ও মাঝারি গাছ ৩৭ প্রজাতির, গুল্ম প্রজাতি ৬৭টি এবং লতা জাতীয় উদ্ভিদ ১৪ প্রজাতির। বিপন্ন প্রায় ৯টি প্রজাতির গাছও আছে এখানে।
বক্তারা বলেন, মানুষের চেতনা, নতুন প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গি উপেক্ষা করে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট করে কোনো উন্নয়ন হতে পারে না। সিআরবি আমাদের শৈশবের স্মৃতি ধন্য স্থান। সিআরবি রক্ষা করতে হবে চট্টগ্রামের স্বার্থে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিধন্য সিআরবি। ১৯৭১ এ স্বাধীনতা যুদ্ধে বহু মানুষ শহীদ হয়ছেন এখানে। শহীদের সমাধির উপর রক্তাক্ত স্বাধীনতার ইতিহাস ম্লান করতে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এখানে সাংস্কৃতিক বলয় গড়ে উঠেছে। আমরা মনে করি সুকৌশলে চট্টগ্রামের হৃৎপিণ্ড ধ্বংসের ষড়যন্ত্র হচ্ছে।
রেলওয়ে বলছে, এখানে হাসপাতাল হলে গাছ কাটা পড়বে না। অথচ হাসপাতাল নির্মাণের নির্ধারিত স্থানেই তিনশ’ গাছ আছে শতবর্ষী গাছসহ। প্রস্তাবিত স্থানটিতে রয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের প্রথম নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আব্দুর রব, শহীদ শেখ নজির আহাম্মদ, শহীদ এম এ মনোয়ার হোসেন, বিমল সিং, ফখরুল আলম, মো. সিরাজউদ্দিন, আলী নূর চৌধুরী, মহিউদ্দিন, নুরন্নবী চৌধুরী ও গঙ্গারামের স্মৃতিস্তম্ভ। শহীদ আবদুর রবের বাবার বাসা এখানে। সে বাসা থেকে তিনি যুদ্ধে যান। যুদ্ধের ইতিহাস মুছে দিতে এখানে বাণিজ্যিক হাসপাতাল হতে পারে না।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) ডিটেইলড এরিয়া প্লানে সিআরবিকে প্রোটেকটেড এরিয়া হিসেবে সংরক্ষণের নির্দেশ দেয়া হয়। সেই হিসেবে সিআরবিতে কমার্শিয়াল ব্যবহারের জন্য অনুমতি দেয়া যাবে না। ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানে এটি সংরক্ষণের জন্য রেলওয়ে, চউক, সিটি করপোরেশনসহ সেবাদানকারী সংস্থাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সিআরবিতে বেসরকারি ব্যবস্থাপনা বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ সংবিধান পরিপন্থী কাজের শামিল।
যারা হাসপাতাল নির্মাণের পক্ষে তারা চট্টগ্রামের শত্রু
সিআরবি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ড. অনুপম সেন