নিজস্ব প্রতিবেদক »
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) নগরের যানজট নিরসনে নির্মাণ করেছে বাকলিয়া এক্সেস রোড ও বায়েজিদ বাইপাস সড়ক। এ সড়কগুলো যানজট নিরসনের পাশাপাশি সাশ্রয় করবে গাড়ির চলাচলব্যয় ও সময়। এখন পরিবহন ব্যবস্থাপনায় জোর দেওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।
সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, নগরের সিরাজউদ্দৌলা রোড থেকে শাহ আমানত ব্রিজ সংযোগ সড়কটি বাকলিয়া এক্সেস রোড নামে পরিচিত এবং এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের বাইরের সীমানা দিয়ে লুপ রোড নির্মাণসহ ঢাকা ট্রাংক রোড হতে বায়েজিদ বোস্তামী রোড পর্যন্ত সংযোগ সড়কটি বায়েজিদ বাইপাস সড়ক নামে পরিচিত। সিডিএর ৪৫৮তম বোর্ড সভায় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট সড়ক দুইটির নতুন নামকরণ করা হয়। বাকলিয়া এক্সেস রোডের নাম জানে আলম দোভাষ সড়ক এবং বায়েজিদ বাইপাস সড়কের নাম বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সড়ক রাখা হয়।
এরমধ্যে নগরের সিরাজউদ্দৌলা সড়ক থেকে শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়ক পর্যন্ত ১ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের নতুন এ রাস্তা নির্মাণ প্রকল্প ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে হাতে নেয় সিডিএ। প্রকল্পের কাজ ২০১৭ সালে শেষ হলেও মামলা, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় কাজটি শেষ হতে দীর্ঘদিন সময় লাগে। ২২০ কোটি ৮৫ লাখ টাকায় এ প্রকল্পটি শেষ হয় চলতি বছরের অক্টোবরে।
প্রায় ছয় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সড়কটির কারণে নগরে কমেছে শিল্প-কারখানার গাড়ির চাপ। ১৯৯৭ সালে এ সড়কটি নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ১৯৯৯ সালে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। ২০০৪ সালে ৫৫ একর জমি অধিগ্রহণ করতে ৩৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ও করা হয়। কিন্তু এশিয়ান উইম্যান ইউনিভার্সিটির সঙ্গে ভূমি নিয়ে বিরোধের কারণে প্রকল্পটি বাতিল হয়ে যায়। পরে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর পুনরায় ১৭২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় ৬ কিলোমিটার চার লেন সড়কের নির্মাণ প্রকল্পটি নেওয়া হয়। প্রকল্পটি শেষ করতে ছয় দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ৩৫৩ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এ সড়কটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হলেও পরিবেশ অধিদফতরের করা একটি মামলার ফলাফলের অপেক্ষায় রয়েছে পাহাড় ব্যবস্থাপনার কাজ। এ কাজ শেষ হলে সড়কটি ব্যবস্থাপনার জন্য বুঝিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিডিএ প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী মো. কাজী বিন শামস বলেন, ‘আমরা চলতি বছরের ডিসেম্বরেই জানে আলম দোভাষ সড়ক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে দেবো। এই প্রকল্পটি পুরো শেষ। এ সড়কটির দুই পাশে ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। ৪টি বক্স কালভার্ট ও ১০টি ক্রস কালভার্ট বসানো হয়েছে। এছাড়া ২০০টি স্ট্রিট লাইট স্থাপন করা হয়েছে।’
শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সড়ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গাড়িগুলো সরাসরি উত্তর চট্টগ্রাম এবং বায়েজিদ শিল্প এলাকায় চলে যাচ্ছে। এ কারণে শহরের যানজট অনেকটা কমে গেছে। তবে এ সড়কে পরিবেশ অধিদফতরের একটা অবজেকশন আছে। ওই সড়কে অবজেকশনটা মিটমাট হওয়ার পর পাহাড়ের কিছু কাজ করতে হবে। তারপর আমরা কাজগুলো পুরোপুরি শেষ হয়েছে বলতে পারবো।’
নগরের সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়ন নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বেশ উন্নয়ন করা হয়েছে। এ সড়কগুলো নির্মাণ প্রসঙ্গে ভালো-মন্দ দুই ধরনের মন্তব্য আছে। ভালো মন্তব্যটি হলো- এই প্রকল্পগুলো নিঃসন্দেহে নগরের যানজট কমাতে সহায়ক হবে। কেননা এয়ারপোর্ট যাওয়ার গাড়িগুলো বন্দর এলাকার যানজট ঠেলে যেতে হবে না। এছাড়া ঢাকা থেকে যাওয়া গাড়িগুলো নগরের ভেতরে না ঢুকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় বাইপাস হয়ে চলে যেতে পারবে।’
তিনি বলেন, ‘আর মন্দ দিকগুলো হলো- ফৌজদারহাটের বাইপাস সড়কটি পরিবেশের বিষয়গুলো মাথায় রেখে করা দরকার ছিলো। এছাড়া নগরে যেসব পরিকল্পনা হয়েছে, তার অধিকাংশই ইউটিলিটি (উপযোগিতা) চিন্তা করে করা দরকার ছিলো। যা হোক, ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট নিয়ে আগে কাজ করার প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু করা হয়নি। এখন রাস্তার ফুটপাত, পার্কিংসহ বিভিন্ন পরিবহন ব্যবস্থাপনায় জোর দেওয়া দরকার। নতুবা এই প্রকল্পগুলোর মেইনটেনেন্স ব্যয় ইউটিলিটির তুলনায় বেশি হবে।’