রাজু কুমার দে, মিরসরাই »
অপরিকল্পিতভাবে বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণে মিরসরাইয়ে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী। ইতিমধ্যে গত কয়েক মাসে ৩টি মৃত হরিণ উদ্ধার করা করেছে বন বিভাগ। এছাড়া লোকালয়ে দেখা যাচ্ছে সাপ, বানরসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী। খাদ্য সংকটে পড়ে এসব বন্যপ্রাণী লোকালয়ে আসছে বলে জানান স্থানীয়রা।
জানা গেছে, ১২ মে পুলিশ ফাঁড়ির পাশে একটি মৃত হরিণ দেখতে পেয়ে বন বিভাগকে খবর দেয় স্থানীয়রা। পরে মিরসরাই রেঞ্জ কর্মকর্তা মৃত হরিণটি উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এর আগে ৪ মার্চ উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের মঘাদিয়া ঘোনা এলাকায় উপকূলীয় বেড়িবাঁধের ওপর থেকে দুটি মৃত হরিণ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া গত বছরের ৫ জুন মহামায়া বন বিট এলাকায় সরকারি বাগানে কর্মরত বিট অফিসের কর্মকর্তারা একটি মায়া হরিণ জবাই করে ঝুলিয়ে রাখা অবস্থায় দেখতে পান। পরে হরিণটি উদ্ধার করে উপজেলা রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।
স্থানীয়রা জানান, অপরিকল্পিতভাবে বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণে বিচরণক্ষেত্র হারিয়ে লোকালয়ে এসে মারা যাচ্ছে এসব হরিণ। শুধু তাই নয় বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় খাদ্য সংকটে পড়ে লোকালয়ে আসছে সাপ, বানরসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী। অনেক সময় স্থানীয়রা এসব বন্যপ্রাণী মেরে ফেলছে। ফলে বিলুপ্তের পথে বন্যপ্রাণীরা।
উপজেলার হিঙ্গুলী ইউনিয়নের পূর্ব হিঙ্গুলী গ্রামের বাসিন্দা নটবর দত্ত বলেন, আগে পূর্ব হিঙ্গুলী পাহাড়ে বাঘ, হরিণ, ভালুক, বানরসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী দেখা যেত। কিন্তু এসব বন্যপ্রাণী এখন প্রায় বিলুপ্ত। মাঝে মাঝে গুটি কয়েক বানর দেখা গেলেও অন্য বন্যপ্রাণীগুলোর দেখা মেলা ভার।
খৈয়াছরা ইউনিয়নের বাসিন্দা মোশাররফ হোসেন বলেন, পূর্ব খৈয়াছরা পাহাড়ে অনেক ধরণের বন্যপ্রাণী দেখা গেলেও এখন নেই। খৈয়াছরা ঝর্ণায় মানুষের অবাধ যাতায়াতে বন্যপ্রাণীগুলো ভয়ে চলে গেছে। তাই ঝর্ণা এলাকায় পর্যটক প্রবেশের ক্ষেত্রে একটি গাইড লাইন করে দেয়া দরকার। যাতে করে পর্যটকরা সংরক্ষিত বনাঞ্চলে যেতে না পারে। তিনি আরো বলেন, পাহাড়ে উচ্চস্বরে সাউন্ড সিস্টেম বাজিয়ে পিকনিক করার কারণেও বন্য প্রাণীরা বনাঞ্চল ছেড়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। লোকালয়ে ঢুকায় অনেকে তাদের হত্যা করছে।
ইছাখালী ইউনিয়নের পশ্চিম ইছাখালী গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার মিয়া বলেন, বনাঞ্চল ধ্বংস করে কেটে ফেলা হচ্ছে লাখ লাখ গাছ। তাই উপকূলীয় বন্যপ্রাণীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তারা জীবন বাঁচাতে লোকালয়ে ঢুকে হত্যার শিকার হচ্ছে।
জানতে চাইলে বারইয়াঢালা রেঞ্জ কর্মকর্তা এ.কে.এম আলতাফ হোসেন বলেন, বারইয়াঢালা জাতীয় উদ্যানে পর্যটক প্রবেশের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম বেঁধে দেয়া হলেও পর্যটকরা অধিকাংশ সময় এসব নির্দেশনা মেনে চলেন না। তবে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে পর্যটক প্রবেশের বিধি নিষেধ রয়েছে।
এ বিষয়ে উপকূলীয় বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল গফুর মোল্লা বলেন, সম্প্রতি উদ্ধার হওয়া মৃত হরিণটির মৃত্যুর কারণ উদঘাটনে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ে নিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। বনাঞ্চল যাতে ধ্বংস করা না হয় সেজন্য বনবিভাগ সতর্ক রয়েছে।


















































