মা ও শিশু উভয়ের চরম ঝুঁকি বাসায় ডেলিভারি

পরিবার কল্যাণ সেবা ও প্রচার সপ্তাহের উদ্বোধন

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আবু রায়হান দোলন বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরলস প্রচেষ্টায় পরিবার কল্যাণসেবা অনেকদুর এগিয়ে গেছে। মা ও শিশু স্বাস্থসেবা নিশ্চিতকরণ, বাল্যবিবাহ রোধ, গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদেরকে পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবা দিচ্ছে। বাসায় ডেলিভারি করলে মা ও শিশু উভয়ের চরম ঝুঁকি থাকে। তাই মা ও শিশুকে নিরাপদ রাখতে প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারির কোন বিকল্প নেই। নগরীর পূর্ব বাকলিয়া ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রে আয়োজিত পরিবার কল্যাণ সেবা ও প্রচার সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সেবা ও প্রচার সপ্তাহের এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে-‘ সময়মতো নিলে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি, শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্যের হবে উন্নতি’। পরিবার কল্যাণ সেবা ও প্রচার সপ্তাহের উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি। এডিসি (শিক্ষা ও আইসিটি) বলেন, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ সারা বছরই সেবা দিয়ে থাকে। যারা পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণ করছেন না, কিংবা অন্য পদ্ধতি গ্রহণ করছেন তাদেরে মা-শিশুর স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে সঠিক পরামর্শ দিতে সরকার সারাদেশে এ কর্মসূচী গ্রহণ করেছে।
যারা পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সেবা নিতে আসছেন তাদেরকে এই প্রচার সপ্তাহে আরও বেশি উৎসাহিত করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সেবা নিতে টাকার বিনিময়ে টিকেট নিতে হয়, কিন্তু পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সেবা নিতে টিকেটের প্রয়োজন হয়না। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে ভূমিকা তা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনা বড় কথা নয়, এখানে এসে কতজন সেবা পাচ্ছে তা মুখ্য বিষয়।
মা-শিশুর জীবনের ঝুঁকি এড়াতে প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারির বিষয়ে প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রাখতে হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ গড়তে হলে সুস্থ মা ও সন্তান অত্যন্ত জরুরী।
পরিবার পরিকল্পনা চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আবুল কালামের সভাপতিত্বে ও পূর্ব বাকলিয়া ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের সহকারী সার্জন ডা. প্রতিমা রানী ত্রিপুরার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আবু রায়হান দোলন। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিবার পরিকল্পনা চট্টগ্রাম রিজিওনাল কনসালট্যান্ট ও সহকারী পরিচালক ডা. ছেহেলী নার্গিস।
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা পরিবার পরিকল্পনা চট্টগ্রাম ও পূর্ব বাকলিয়া ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
পরিবার পরিকল্পনা চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মো. আবুল কালাম জানান, টেইসই উন্নয়ন লক্ষ্য অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যু ৭০’র নীচে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে।
অপরদিকে বাংলাদেশ আইসিপিডি ২৫ এর অংশগ্রহণকারী দেশ হিসেবে তিন শূন্য মাতৃমৃত্যু, শূন্য নারীর প্রতি সহিংসতা, শূন্য অপূর্ণ চাহিদা পূরণে অঙ্গীকারবদ্ধ। এ তিন শূন্য পূরণে সবচেয়ে বড় বাধা বাল্যবিয়ে। বাংলাদেশে বিবাহের আইনগত বয়স মেয়েদের ১৮ আর ছেলেদের ২১ হলেও বিডিএইচএস ২০১৭-১৮ রিপোর্ট অনুসারে বাংলাদেশে ২০-২৪ বছর বয়সী নারীদের ৫৯% বিয়ে ১৮ বছর বয়সের আগে হয়ে যায় এবং ১৫-১৯ বছরের কিশোরীদের ২৮% গর্ভবতী হয়, ফলে তারা নানাবিধ অনাকাঙ্খিত স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হয়।
এ বিষয়গুলোকে সামনে রেখে চট্টগ্রামের প্রতিটি উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে বিভিন্ন সমাবেশ, মা সমাবেশের মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি, কিশোর-কিশোরী সমাবেশের মাধ্যমে প্রত্যন্ত গ্রামে কিশোরীদের বাল্যবিবাহ সম্পর্কে সচেতন করাসহ পরিবার পরিকল্পনা স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন পদ্বতির সেবা এ বিশেষ এ সেবা সপ্তাহে প্রদান করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিপুল সংখ্যক মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সেবা সপ্তাহের উদ্বোধন ও বিভিন্ন সেবা ক্যাম্প শুরু হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি