মানুষের কষ্ট লাঘবে প্রাণপণ চেষ্টা চলছে

আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা

সুপ্রভাত ডেস্ক »

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা কাজ করে যাচ্ছি, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। জানি একটু দুঃসময় যাচ্ছে। মানুষের যে কষ্ট, সেই কষ্ট লাঘবে প্রাণপণ চেষ্টা হচ্ছে।’ এ সময় দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দেশের বিত্তশালীদের প্রতি আহ্বানও জানান প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। খবর বাংলাট্রিবিউনের।

দেশের মানুষের জন্য আওয়ামী লীগ একটা বিরাট পরিবর্তন নিয়ে এসেছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে জনগণ লাভবান হয়, জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন সেটা প্রমাণিত সত্য। নৌকা মার্কায় জনগণ ভোট দিয়েছে বলেই আজকে মানুষের পরিবর্তন এসেছে। আওয়ামী লীগ থাকলে ভাগ্যের পরিবর্তন হবে।’

বাংলাদেশ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র রয়েছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ‘জানি চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র আছে। বাংলাদেশটাকে নিয়ে আর যেন কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে।’

আওয়ামী লীগের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে দলটির সভাপতি বলেন, ‘১৯৮১ সালে বাংলাদেশ ঘুরে যা দেখেছি তার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। এই পরিবর্তনটা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না এলে কোনোদিনই হতো না। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা হয়েছে জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য এবং সেবা করার জন্য। এটাই আওয়ামী লীগের কাজ। জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি। ২০২৬ সালে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাবো। আমাদের উৎপাদন বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে হবে। সাক্ষরতা বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে হবে। অর্থনৈতিকভাবে আমাদের আরও সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।’

সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে দেশবাসীকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করে আমরা কাজ করে যাচ্ছি, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। জানি একটু দুঃসময় যাচ্ছে। মানুষের যে কষ্ট সেই কষ্ট লাঘবে প্রাণপণ চেষ্টা হচ্ছে।’ দেশের বিত্তশালীদের প্রতিবেশী দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানোরও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘কোনও মানুষ অস্বাস্থ্যকরভাবে থাকবে না। সবাইকে ঘরবাড়ি করে সুন্দরভাবে বাঁচার ব্যবস্থা আমরা করে দেবো। এটাই আজকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আওয়ামী লীগের প্রতিজ্ঞা।’

১৯৮১ সালে দেশে ফেরার প্রসঙ্গ টেনে ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘আমি ছোট ছোট বাচ্চাদের মাতৃস্নেহ বঞ্চিত করে বাংলাদেশে ফিরে আসি। দেশে ফিরে কাউকে পাইনি। পেয়েছি শুধু সারি সারি লাশ। একটা প্রতিজ্ঞা করে এসেছিলাম যে এই হত্যা করে বাংলাদেশের মানুষের অধিকার বঞ্চিত করবে সেটা যেন না পারে। মুক্তিযুদ্ধের অর্জন করে যে সম্মান পেয়েছিল সেই সম্মান আবার ফিরিয়ে দিতে। শোষিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে উন্নত জীবন দেওয়ার জন্য। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণ করতেই হবে সেই প্রতিজ্ঞা নিয়েই ফিরে এসেছি।’

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিজেকে জনগণের সেবক হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

২০০১ সালের নির্বাচনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার ওপর প্রচ- চাপ ছিল গ্যাস বিক্রি করতে হবে। আমি বলেছিলাম, এই গ্যাস জনগণের। আমার পক্ষে বাংলাদেশের সম্পদ ক্ষমতার লোভে বিক্রি করে ক্ষমতায় থাকবো, সেই বাপের মেয়ে আমি নই। আমরা চাইনি কিন্তু মুচলেকা দিয়েছিল খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়া মুচলেকা দিলো, গ্যাস দেবে।’

বিএনপি সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বাংলাভাই সৃষ্টি করে, দুর্নীতি সন্ত্রাস করে ওই বিএনপি সন্ত্রাসের দল ভেবেছিল ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করবে। কিন্তু বাংলার মানুষকে তারা চেনেনি। জনগণের সম্পদ বেচবে। আর জনগণের অর্থসম্পদ কেড়ে নিয়ে লুটপাট করবে। লুটের টাকার জোরে ক্ষমতায় থাকে, এটা দেশের মানুষ মেনে নেয়নি।’

মানুষের খাদ্যাভ্যাস উন্নত হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এক সময় মানুষ নুনভাত, ডালভাতের কথা বলতো। আমরা মানুষকে এমন পর্যায়ে আনতে পারছি এখন নুনভাত, ডালভাত নয়, মানুষ মাংস পাচ্ছে না সেটাই কথা আসছে। নুনভাত, ডালভাত থেকে মাংস ভাতে উঠে আসছে। চাহিদাটা বাড়াতে পেরেছি। আর চাহিদা যখন বাড়াতে পারছি সেটা পূর্ণ করতেও পারবো।’

সরকারের সেক্টরভিত্তিক উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিএনপির আমলের মুদ্রাস্ফীতি ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছিলাম। করোনা ও ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের কারণে কিছুটা বেড়েছে। এখন ৮ শতাংশের উপরে। আমরা মুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিচ্ছি। আমরা বাজেটকে বিএনপির আমলের তুলনায় ১০ গুণ বৃদ্ধি করেছি। জিডিপি ১২ গুণ বৃদ্ধি করতে পেরেছি। এডিবি ১৩ গুণ, রফতানি আয় ৫ গুণ, রেমিট্যান্স ৬ গুণ বাড়িয়েছি। রাজস্ব আয় ৩৭ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ কোটি টাকার ওপরে বাড়াতে সক্ষম হয়েছি। বৈদেশিক ‍মুদ্রার রিজার্ভ ৫ মাসের বেশি আমদানির সক্ষমতা রয়েছে। কিছু জিনিসের দাম বেড়েছে। কিছু মানুষ মজুত করে। এই মজুতের স্বভাবটা সবাইকে বদলাতে হবে।’

বিদ্যুতের লোডশেডিং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি ও সংকটের কারণে মাঝে আমাদের কয়লাভিত্তিক কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ ছিল। কিছু লোডশেডিং করতে হয়। আবার কয়লা আসা শুরু করেছে, আর লোডশেডিং থাকবে না। তবে মাঝে মাঝে লোডশেডিং দিয়ে একটু মানুষকে বুঝিয়ে দেওয়া উচিত, কী ছিল আর কোথায় আছে।’

বিএনপি শিক্ষার ক্ষেত্র পিছিয়ে নিয়ে গিয়েছিল এমনটা জানিয়ে করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাক্ষরতার হার ৬৫ থেকে কমিয়ে আবার ৪৫ ভাগে নেমে আসে। আমরা ৪৫ থেকে ৬৫-তে উঠিয়ে এনেছিলাম। বিএনপি এসে কমিয়েছে। অবশ্য কমাবে, কারণ খালেদা জিয়া তো ম্যাট্রিক পাস করতে পারেনি। উর্দু আর অঙ্ক ছাড়া, উর্দু তো তার পেয়ারে বাত হ্যায়। আর এদিকে অঙ্ক তো টাকা গণনায় লাগে। সে হলো ম্যাট্রিক ফেল, তার স্বামী ছিল ম্যাট্রিক পাস, আর তার ছেলে যে কী পাস তা বোধহয় এখনও কেউ বলতে পারে না। তারা হয়তো ভেবেছিল তারা যখন পাস করেনি, তো কেউ করবে না। তাই কমাও। এজন্য আবার ৪৫ শতাংশে। তবে আমরা আবার ৭৫ ভাগে উন্নীত করেছি।’

দেশবাসীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘কারও এক ইঞ্চি জমিও যেন খালি না থাকে। যে যেখানে যা পারেন উৎপাদন করেন, ফসল ফলান। নিজেরা খাবেন, বিক্রি করবেন; অর্থ পাবেন। বিদেশে আমরা রফতানি করতে পারবো। আমি বলার আগে নিজেরটা শুরু করে দিয়েছি। আমার গণভবন এখন মোটামুটি একটা কৃষিপণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্র হিসেবে.. গণভবনেও করছি গ্রামের জমিও পরিষ্কার করে চাষ করছি। আমাদের সংগঠনের নেতাকর্মীরাও যার যার এলাকায় কাজ শুরু করেছে। এখন আর কোরবানির জন্য ভারতের গরু আনতে হয় না। আমাদের দেশেই গরু উৎপাদিত হচ্ছে, এতে চাহিদাও মিটে যাচ্ছে।’