একটি সময়ে মরিচ, হলুদ, জিরাসহ নানাবিধ মসলা পাটায় পিষে রান্নার কাজে ব্যবহার করা হতো। তারপর মিলিং মেশিন আসার পর কলে এসব গুঁড়ো করে ব্যবহার করা হতো। এখন মানুষের হাতে সময় কম। তাছাড়া শহুরে জীবনে এমনকি অনেক গ্রামীণ এলাকাতেও এত ঝক্কিঝামেলা পোহানোর ফুরসত পাওয়া কঠিন। ফলে হাতের কাছে রেডিমেড পাওয়া গেলে তা দিয়েই প্রয়োজন মেটাতে হয়।
নাগরিক জীবনের এই চাহিদা পূরণের সুবিধা নিতে বাজারে অনেক ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান প্যাকেটজাত গুঁড়ো মসলা বাজারে এনেছে। আধুনিক ঝকঝকে প্যাকেটগুলো এখন পাড়ার মুদির দোকান থেকে সুপারসপে শোভা পায়। প্যাকেটজাত এসব পণ্যে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন থাকে। তাছাড়া কোম্পানি প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে নিজেদের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখার তাগিদে ন্যূনতম একটি মান বজায় রাখার চেষ্টা করে।
কিন্তু নিম্নবিত্ত ও বিত্তহীন পরিবারগুলো এসব মসলা কিনতে না পেরে সস্তার আশায় খোলা মসলা কেনে। আর এই সুযোগটা নেয় অসাধু ব্যবসায়ীরা। তারা মসলার নামে যতসব অখাদ্য গেলাচ্ছে অতি সাধারণ মানুষদের। বাজার এখন ভেজাল মসলায় সয়লাব। এত ভেজালের ভেতর আসল জিনিস পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। ভেজাল খেয়ে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে। এতে লিভার, কিডনির মতো অঙ্গ আক্রান্ত হচ্ছে।
ইটের গুঁড়াসহ নানা ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে এসব ভেজাল মশলা বাজারে দেদার বিক্রি করছে একশ্রেণির প্রতারক চক্র। নগরীর খাতুনগঞ্জ ও বাকলিয়া এলাকায় একটি সংঘবদ্ধ চক্র ভেজাল মশলা তৈরির সাথে জড়িত। পচা মরিচের সঙ্গে কাঠের গুঁড়াসহ নানা ধরনের ভেজাল যুক্ত করে আবার ঝাল হওয়ার জন্য ব্যবহার করে বিষাক্ত কেমিক্যাল।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দীন সুপ্রভাতকে বলেন, ‘মসলায় ভেজালের ঘটনা আজকে নতুন না। প্রতিবছর প্রশাসনের অভিযানে এসব ধরা পড়ে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী শুধু মসলা নয়, সব ধরনের খাদ্যে ভেজাল করে বেশি লাভ করতে চায়। আগে খাতুনগঞ্জ এলাকায় অনেকে ছিলো। কিন্তু এসব ব্যবসায়ীরা এখন নগরীর বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। এদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর না হলে ভেজাল খাদ্য নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।’
এদের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যে অভিযান পরিচালিত হয়। শুধু অর্থদণ্ড ও মুচলেকা নিয়ে এদের ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে আবার তারা একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।
গুরু পাপে লঘু শাস্তি দেওয়ায় এ ধরনের অপরাধ বন্ধ করা যাচ্ছে না। এমন একটি অভিযান পরিচালনার পর সাংবাদিকদের দেওয়া বক্তব্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আনিছুর রহমান বলেন, এই মিলে আরও একবার অভিযান চালানো হয়। গত ২০ জুন একই অপরাধে ওই মিল মালিককে জরিমানা এবং মিলটির কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। তখন মিল মালিক জরিমানা পরিশোধ করে এবং এ ধরনের কাজ পুনরায় না করার লিখিত প্রতিশ্রুতি দেয়ায় মিলটি খুলে দেয়া হয়। কিন্তু তারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করায় অভিযান চালিয়ে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
বিশ্বের কোনো উন্নত দেশে খাদ্য ও ওষুধে ভেজাল করে পার পাওয়ার উপায় নেই। ব্যতিক্রম বাংলাদেশে। ভেজাল করে যারা মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে তাদের শুধু জরিমানা করে ক্ষান্ত দিলে হবে না। তাদের আরও কঠিন থেকে কঠিনতম সাজা দেওয়া উচিত।
এ মুহূর্তের সংবাদ