মজলুম মানুষের প্রেরণার প্রতীক ইমাম হোসাইন (রা)

শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের তৃতীয় দিনে বক্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক »

প্রিয় নবীর (দ.) দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইন (রা) চাইলে ইয়াজিদের সঙ্গে আপস করে ক্ষমতার স্বাদ নিতে পারতেন। কিন্তু ইয়াজিদি স্বৈরতন্ত্র ও গণবিরোধী আপশাসন রুখে দিয়ে জনগণ ও গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন হযরত ইমাম হোসাইন (রা)। জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ প্লাজায় আহলে বায়তে রাসূল (দ) স্মরণে শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের গতকাল শনিবার তৃতীয় দিনে আলোচকরা এ কথা বলেন।

মাহফিলে আলোচকরা আরও বলেন, স্বৈরতন্ত্র ও জুলুমতন্ত্রের কবর রচিত হয়েছিল কারবালা ময়দানে। দ্বীনের ঝা-াকে বুলন্দ করে মজলুম মানুষের প্রেরণার প্রতীক হয়ে উঠেছেন হযরত ইমাম হোসাইন (রা)। যুগে যুগে তিনি নন্দিত ও স্মরণীয় হয়ে থাকবেন সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে নির্ভীক ভূমিকার কারণে। গতকাল মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক এবং পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান গবেষক আলহাজ সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

মাহফিলে শ্রীলংকা থেকে আগত আলোচক ড. আল্লামা শাহসূফি মুহাম্মদ এহসান ইকবাল আলকাদেরী বলেন, ৬১ হিজরিতে কারবালা ময়দানে সংঘটিত সত্য-মিথ্যার মধ্যে যুদ্ধে হযরত ইমাম হোসাইন (রা) ও আহলে বায়তে রাসূল (দ) চূড়ান্ত বিচারে বিজয়ের মুকুট ছিনিয়ে এনেছিল। তাঁরা দ্বীনের জন্য শাহাদাতের সুধা পান করে অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন।

সভাপতির বক্তব্যে আলহাজ সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, প্রিয় নবী (দ) বলেছেন, আমি আমার উম্মতের জন্য দুটি প্রিয় জিনিস রেখে যাচ্ছি। একটি হচ্ছে কুরআন মজিদ, অন্যটি তাঁর সুন্নাহ বা আহলে বায়তে রাসূল (দ)। যারা কুরআন মজিদ এবং আহলে বায়তকে আঁকড়ে ধরবে তারাই নাজাতপ্রাপ্ত। তাদের জন্য দুনিয়া আখিরাতে কোনো ভয় ও দুঃখ নেই। তিনি বলেন, মাতা পিতাকে সম্মান করবেন, তাঁদের আনুগত্য ও সেবা করবেন। মাতা পিতাকেও সন্তানদেরকে প্রাণ উজাড় করে ভালোবাসতে হবে। আদরে শাসনে সন্তানদের পরিচালিত করলে তারা আপনাদের চক্ষু শীতল করবে এ আশা করা যায়।

ইসলামি শরিয়তে মাযহাব মানার কারণ ও গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন ঢাকা মোহাম্মদপুর কাদেরিয়া তৈয়বিয়া কামিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আল্লামা আবুল কাশেম মুহাম্মদ ফজলুল হক। তিনি বলেন, চার মাযহাবই বিশুদ্ধ। যেকোনো একটি মেনে নিয়ে দ্বীনি জিন্দেগি গড়ে তুলতে হবে। তবে হানাফি মাযহাবের অনুসারীরাই আমাদের দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিন্তু বর্তমানে মাযহাব বিরোধী ফেতনা গর্জে উঠেছে। ইচ্ছাকৃতভাবে হানাফি মাযহাবের বিরুদ্ধে যারা বিষোদগারে লিপ্ত এই লামাযহাবিদের ব্যাপারে আমাদের সজাগ হতে হবে। ইসলামের দৃষ্টিতে শাহাদাত ও শহীদের মর্যাদা নিয়ে আলোচনা করেন হালিশহর মাদ্রাসায়ে তৈয়বিয়া সুন্নিয়া ফাযিল এর অধ্যক্ষ আল্লামা মুহাম্মদ বদিউল আলম রিজভি।

তিনি বলেন, শহীদগণ জীবিত। তাঁদের শান মর্যাদা অতুলনীয়। তাঁদের জানাজার নামাজও পড়তে হয় না। গোসলও দিতে হয় না। দ্বীনের জন্য জীবন উৎসর্গ করে যারা শাহাদাতের সুধা পান করেন তাঁদেরকে মৃত নয় জীবিত মনে করাই ইসলামী আকিদা। যা আমরা দৃঢ়ভাবে পোষণ করি।
ফলমন্ডি জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মুহাম্মদ ইউসূফ বাহার আহলে বায়তে রাসূলের (দ) শান মর্যাদা নিয়ে আলোচনা করেন।

মাহফিলে অতিথি ছিলেন আঞ্জুমান ট্রাস্টের সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, গাউসিয়া কমিটির চেয়ারম্যান পেয়ার মোহাম্মদ, অধ্যক্ষ আল্লামা রফিক উদ্দিন সিদ্দিকী, অধ্যক্ষ আল্লামা আহমদ হোসাইন আলকাদেরী। কুরআন মজিদ থেকে তেলাওয়াত করেন আন্তর্জাতিক ক্বারী আহমদ বিন ইউসূফ আল আজহারী। নাতে রাসুল (দ) পারিবেশন করেন মুহাম্মদ তউসিফ রেজা।

মাহফিল সঞ্চালনা করেন ড. জাফর উল্লাহ ও হাফেজ মাওলানা আহমদুল হক।

এতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহফিলের প্রধান সমন্বয়ক পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক আলহাজ মোহাম্মদ আলী হোসেন সোহাগ, মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের খোরশেদুর রহমান, সিরাজুল মুস্তফা, মুহাম্মদ সাইফুদ্দিন, জাফর আহমদ সওদাগর, প্রফেসর কামাল উদ্দিন আহমদ, আব্দুল হাই মাসুম, আলহাজ দিলশাদ আহমদ, ছাবের আহমদ চিশতী, ছালামত উল্লাহ, এস এম শফি, গাজী মুহাম্মদ ইদ্রিচ চেয়ারম্যান, আলহাজ মুহাম্মদ বদিউল আলম, আবু সাঈদ মুহাম্মদ হামেদ, মাহাবুবুল আলম, মনসুর সিকদার, আব্দুর রহমান, মাইনুদ্দীন মিঠু, ফরিদ মিয়া, শাহাব উদ্দিন, জহির উদ্দিন, খোরশেদ আালী চৌধুরী, নাজিব আশরাফ প্রমুখ।

মিলাদ কিয়াম শেষে মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ, দেশ ও বিশ^বাসীর শান্তি সমৃদ্ধি এবং যুদ্ধ সংঘাত হানাহনি থেকে বৈশি^ক শান্তি কামনায় মুনাজাত করা হয়।

আজ রোববার মাহফিলে মূল বক্তব্য রাখবেন আল্লামা মুফতি গিয়াস উদ্দিন তাহেরী। মাহফিলে ৬ষ্ঠ দিবস থেকে পর্দা সহকারে মহিলাদের মাহফিলে অংশগ্রহণের ব্যবস্থা থাকবে। বিজ্ঞপ্তি