নিজস্ব প্রতিবেদক »
বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সপ্তাহের ব্যবধানে আবারো বেড়েছে চাল, ডাল, আটা, ময়দার দাম। খুচরা বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে সর্বোচ্চ ৭ থেকে ৮ টাকা। সঙ্গে ডাল ও আটা-ময়দা কিনতে ক্রেতার বাড়তি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ৫ টাকা বেড়ে ১৭৫ টাকা ও ডিম হালি ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
করোনার ধাক্কা সামাল দিতে গিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন এমনিতেই সংকটে পড়েছে। সেই সঙ্গে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের কষ্ট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এদিকে সরকার প্রতি কেজি চিনি ও পাম তেলসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম নির্ধারণ করলেও তা অকার্যকর। সঙ্গে আলু, হলুদ-মরিচ ও আদার দাম আরেক দফা বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পণ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছে ক্রেতাগণ।
বৃহস্পতিবার নগরীর চাক্তাই খাতুনগঞ্জ ও শুক্রবার সকালে রিয়াজুদ্দিন বাজার ও বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার ঘুরে এমন তথ্য জানা গেছে।
সরকারি বিপণন প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সব ধরনের চালের দামই কেজিপ্রতি সাত টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। চালের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে খোলা ও বোতলজাত সয়াবিন তেল ও পাম তেলের দাম। বেড়েছে মাঝারি ও ছোট দানার মসুর ডালের দাম। পেঁয়াজের দামও কিছুটা বাড়তে দেখা যায়। আর ঘোষণা ছাড়াই চিনির দাম খুচরা বাজারে কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়েছে।
বিক্রেতারা বলছেন, চালের আমদানি কমে যাওয়ায় দাম বাড়তি। আর ক্রেতারা বাজার মনিটরিংয়ে জোর দিতে বলছেন।
বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারের মুন্না রাইস এজেন্সির মালিক ও খুচরা চাল বিক্রেতা আশরাফ আলম বলেন, চালের সরবরাহ পর্যপ্ত থাকার পরও দাম আবারও বেড়ে যাচ্ছে। যে সরু চাল গত সপ্তাহে ৭২ টাকায় বিক্রি করেছি তা বৃহস্পতিবার ৮০ টাকায় বিক্রি করছি। পাশাপাশি মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল কেজিতে ৪ টাকা বেড়ে ৫২-৫৪ টাকায় বিক্রি করছি। তিনি জানান, মিলাররা আবারও চালের দাম বাড়িয়েছে। যে কারণে পাইকারি বাজারে দাম বাড়ায় খুচরা বাজারে প্রভাব পড়েছে।
এদিকে ২২ সেপ্টেম্বর সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম ৮৪ টাকা ও প্রতি লিটার পাম তেলের (সুপার) দাম ১৩৩ টাকা নির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে, যা ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। তবে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকা। আর প্রতি লিটার পাম তেল বিক্রি হয়েছে ১৩৮ টাকা, যা খোদ সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক খুচরা বাজারের পণ্য মূল্যতালিকায় লক্ষ্য করা গেছে।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জের খুচরা ব্যবসায়ী মো. কামাল উদ্দিন বলেন, গত সপ্তাহে সরু মসুর ডাল ১৩০ টাকা বিক্রি করলেও এখন ১৩৫ টাকায় বিক্রি করছি। সঙ্গে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ৫৮ টাকা ছিল। খোলা ময়দা বিক্রি হয়েছে ৬২-৬৪ টাকা, যা গত সপ্তাহে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আলু বিক্রি হয়েছে ৩০-৩২ টাকা, যা আগে ২৫ টাকা ছিল। প্রতি কেজি আমদানি করা হলুদ ২০ টাকা বেড়ে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কেজিপ্রতি শুকনা মরিচ ১০ টাকা বেড়ে ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর প্রতি কেজি দেশি আদা ১২৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা গত সপ্তাহে ১১৫ টাকা ছিল।
বিক্রেতারা জানায়, গত সপ্তাহে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায় প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হলেও শুক্রবার ১৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি হালি ডিম কিনতে ক্রেতার ৪৫ থেকে ৫০ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে প্রতি পিস ডিমের দাম দাঁড়ায় ১২ থেকে ১২ টাকা ৫ পয়সা। তবে এক পিস ডিম কিনতে ক্রেতাকে ১৩ টাকা গুনতে হচ্ছে।
বহদ্দারহাট বাজারে এক ক্রেতা মাকসুদুর রহমান বলেন, বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়তি। প্রতি সপ্তাহে কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়ছে। একটি পণ্যের দাম কমলে অন্য আরেকটি পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। দেখার যেন কেউ নেই। আমরা ভোক্তারা প্রতিনিয়ত ঠকছি। প্রশাসনের নীরবতায় সুযোগ পাচ্ছে সিন্ডিকেটভুক্ত ব্যবসায়ীরা।
বোয়ালখালী থেকে খাতুনগঞ্জে আসা খুচরা মুদি ব্যবসায়ী আরমান আরী সরদার বলেন, প্রতি সপ্তাহে আসি বাজার করতে। এখানে এমন দাম নেওয়া হচ্ছে, গ্রামে গিয়ে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে কিভাবে বিক্রি করবো বুঝতে পারছি না। সবকিছুর দাম বাড়তি। এখানে প্রশাসনের বাজার তদারকিতে দুর্বল ব্যবস্থায় প্রমাণ হয় সাধারণ মানুষের পাশে কেউ নেই।
জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, বাজারে বেশকিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। আমরা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তদারকি জোরদার করেছি। কী কারণে পণ্যের দাম বেড়েছে, তা আমরা খতিয়ে দেখছি। অনিয়ম পেলে সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। অসাধুরা যাতে সুযোগ নিতে না পারে, সেজন্য প্রতিদিন বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।