বেড়িবাঁধে ভাঙন কেন তদন্ত হওয়া জরুরি

২৯৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার নবনির্মিত স্থায়ী বেড়িবাঁধ জলোচ্ছ্বাস ছাড়াই ভেঙে যাচ্ছে। বাঁশখালী উপজেলার বঙ্গোপসাগর ও সাঙ্গু নদীর পাড়ে ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প ২০১৫ সালের ১৯ মে একনেকে পাস হয়। ব্যয় ধরা হয় ২৫১ কোটি ২৯ লাখ টাকা। দফায় দফায় প্রকল্পটির সময় ও ব্যয় বেড়েছিল। সর্বশেষ ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের সময় ধরা হয়েছিল এবং ব্যয় বাড়ানো হয়েছিল ২৯৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার বাঁধের ঢাল সংরক্ষণ, ভাঙন রোধ ও পুনরাকৃতিকরণ, ৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ এবং ৫ দশমিক ৬ কিলোমিটার বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ করার কথা ছিল। যদিও কাজটি শেষ হয় ২০২২ সালে।
বাঁশখালীর খানখানাবাদ কদম রসুল গ্রামের বঙ্গোপসাগর ও সাঙ্গু নদীর মোহনায় প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধের পাশে পানি প্রবাহ হচ্ছে ১০০ থেকে ১৩০ ফুট গভীর হয়ে। প্রতিদিন নতুন এলাকায় ফাটল ধরছে। ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ দেওয়া হলেও সঙ্গে সঙ্গে সাগরের তলিয়ে যাচ্ছে সেসব।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে সুপ্রভাতের প্রতিবেদক জানিয়েছেন, বেড়িবাঁধের ঢালুতে পর্যাপ্ত ঘাস ও গাছ লাগানোর কথা থাকলেও তা লাগানো হয়নি। ব্লক নির্মাণে নি¤œমানের পাথর, ইট, সিমেন্ট ও বালু ব্যবহার করায় কাজ বুঝিয়ে দেয়ার আগেই অধিকাংশ সিসি ব্লক ভেঙে গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের নামে এক শ্রেণির মানুষ লুটপাট করার পরিণতিতে অল্প সময়ে বেড়িবাঁধে ফাটল ধরেছে এবং ভাঙছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ নিয়ে জনগণের মধ্যে ভালো ধারণা নেই। কারণ ওই সংস্থার অধিকাংশ কাজ মানসম্মত নয়। বিশেষ করে বেড়িবাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। ফলে প্রতিবছর বর্ষা এলে দেশের নানা প্রান্ত থেকে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার খবর পাওয়া যায় এবং প্রতিবারই বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়। বর্ষা এলে বাঁধ ভাঙবে বিষয়টি যেন খুব স্বাভাবিক হয়ে গেছে। তবে বাঁশখালীর বিষয়টি একটু ব্যতিক্রম। জলোচ্ছ্বাস, বন্যা বা বৃষ্টির প্রকোপ ছাড়াই এবার বাঁধ তলিয়ে গেল। কাজেই এর কারণ উদঘাটনের দরকার এবং দুর্নীতি হয়ে থাকলে সাজা হওয়া দরকার।