পানি সংকটে রোগীদের দুর্ভোগ চরমে

বিআইটিআইডি

নিলা চাকমা »

সারা বাংলাদেশ মাত্র ১৩ টি বিশেষায়িত হাসপাতাল রয়েছে। তার মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ১২টি এবং চট্টগ্রামে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিকাল এন্ড ইনফেকসাস ডিজিসেস (বিআইটিআইডি) নামে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল রয়েছে। সেই বিশেয়ায়িত হাসপাতালে চলতি বছরের ৩০, ৩১ জুলাই এবং ১ আগস্টে রাতে টানা সাত থেকে আট ঘণ্টা ধরে পানি পায়নি রোগীরা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ডায়রিয়া রোগীরা। হাসপাতালের আশে পাশে খাল-নালা এবং দোকান থেকে পানি কিনে শৌচ কাজ সারছেন রোগীরা। সংকটটি নতুন নয় বরং দীর্ঘদিন থেকেই এ সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকসাস ডিজিসেস (বিআইটিআইডি) ২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করে। এখানে ১০০ শয্যা বিশেষায়িত হাসপাতালে রয়েছে একটি এনিম্যাল বাইট ক্লিনিক। প্রতিদিন ৪৫০-৫০০ জন রোগী আউটডোরে সেবা নিতে আসেন। তার মধ্যে ডায়রিয়া, জ্বর এবং বিভিন্ন পশু- পাখির কামড় খেয়ে রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসেন। তবে বর্তমানে জ্বর নিয়ে প্রতিদিনই ১০০ জনের উপরে আউটডোরে রোগী আসছেন। সেখানে জ্বরের রোগীদের মধ্যে ৪০ শতাংশই ডেঙ্গু শনাক্ত হচ্ছেন। গতকাল (৩ আগস্ট) দুপুর ১২ টা পর্যন্ত মোট ৫৯ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। ডায়রিয়া রোগী ছিলেন ১৯ জন।

সরেজমিন গতকাল (৩ আগস্ট) সকালে দেখা যায়, হাসপাতালে ডেঙ্গু, ডায়রিয়া, বিভিন্ন প্রাণীর কামড় খাওয়া রোগীদের এক সাথে সেবা দেওয়া হচ্ছে। তবে কোনটা কি রোগী বুঝার উপায় নেই। কেননা ডেঙ্গুর কোনো রোগীকে মশারি ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। হাসপাতালে চারপাশও ঝোপঝাড়ে সয়লাব। রোগীদের জন্য বিশুদ্ধ পানি রাখার জায়গাটিও অপরিচ্ছন্ন।

হাসপাতালের পানি সংকট নিয়ে কথা বলেছেন চন্দনা দেবি। তার মেয়ের ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ায় ৯ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তিনি বলেছেন, ‘প্রায় সময় পানি থাকে না। তবে গত ৩০, ৩১ জুলাই এবং ১ আগস্ট এই তিনদিন ছিলো ভয়ানক। সন্ধ্যার দিকে পানি চলে যায়। সারারাত পানি থাকে না। সকাল ৮টার দিকে আবার চলে আসে। ৩০ জুলাই রাত ১ টার দিকে আমার মেয়ে বাথরুমে যেতে চাইলে পানি নেই দেখে তাকে ঘুমিয়ে পড়তে বলি। কারো কাছে পানি পাইনি। হাসপাতালের পাশে একটি বিল্ডিং হচ্ছে। সেখানে ড্রামে পড়ে থাকা পানি নিয়ে আসি। পরে সেই পানি দিয়ে মেয়েকে বাথরুমে নিয়ে যাই। সকাল হতেই অনেক রোগী রিলিজ না নিয়েই চলে গেছে। কারণ হাসপাতালে পানি নেই। একটি হাসপাতালে পানি থাকে না এটা কেমন কথা।’

চন্দনা দেবির পাশে মল্লিকা বেগম নামে আরও এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘আমার মেয়ের ডায়রিয়া। পরশু রাতে হাসপাতালে পানি ছিলোনা। কারো কাছে পানি ছিলোনা, তখন একটি লাইট নিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে পড়ি। কোথাও পানি না পেয়ে স্থানীয় একজনের জমির নালা থেকে পানি আনতে হয়েছে। কি ভয়ংকর রাত গেলো সেদিন। এখানে সবাই পানি কিনে ব্যবহার করছে। আবার কেউ বাড়ি থেকে নিয়ে আসছেন। অনেক রোগী কষ্ট পাচ্ছে। কেই কিছু করছে না। আমরা এই সমস্যার দ্রুত সমাধান চাই’

পানির সংকট নিয়ে কথা বলেছেন বিআইটিআইডির পাশে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসা তত্ত্বাবধায়ক ডা. এস এম.নুরুল করিম। তিনি বলেন,‘শুধু বিআইটিআইডি রোগীরা নয়। আমাদের হাসপাতাল এবং পুরো এলাকায় পানি থাকে না। তবে বিআইটিআইডির ডায়রিয়া রোগীদের সীমাহীন কষ্ট হয়। বর্তমানে তাও কিছুটা পানি পাওয়া যাচ্ছে। গ্রীষ্মকালে টানা ৬-৭ দিন আমরা কেউ পানি পায় নি।’

বিআইটিআইডি’র ক্লিনিক্যাল ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মামুনর রশীদ বলেন, হাসপাতালের পানি সংকট দীর্ঘদিনের। গ্রীষ্মকালে তা আরও ভয়াবহ ছিলো। এখন একটু পানি পাওয়া যাচ্ছে। আমরা রোগীদের ভোগান্তিতে ফেলতে চাই না। পানির সমস্যা সমাধানে আমারা স্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের (এইচইডি) কাছে চিঠি দিয়েছি হাসপাতালে একটি ডিপ টিউবওয়েল স্থাপন করার জন্য। আশা করি শীঘ্রই এটি পাবো এবং পানি সমস্যা দূর হবে।

তবে এ প্রসঙ্গে ভিন্ন কথা বললেন স্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এইচইডি) চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মনি শর্মা। তিনি বলেন, ‘পানি সংকট দূর করার জন্য আমাদের কাছে চিঠি দিয়েছেন হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ। সেটা গত অর্থ বছরের শেষ দিকে। তবে চলতি অর্থ বছরে বিআইটিআইডি’র টিউবওয়েল স্থাপনের জন্য বাজেটে প্রস্তাবনা দিয়েছি। সেটা অনুমোদন পাওয়ার সাথে সাথে কাজ শুরু হবে। কিন্ত যে জায়গায় হাসপাতাল করা হয়েছে সেখানে সহজে টিউবওয়েল স্থাপন করা যায়না। প্রায় ১ হাজার ফুট গভীর করে নার্সিং কলেজে একটি টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে। সেখানের লবণাক্ততার জন্য পানি খাওয়া যায় না। তবে রোগীদের স্বার্থে আমরা দ্রত চেষ্টা চালিয়ে যাবো।’

চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, আমরাতো চেষ্টা করছি। এত দূরে পানির প্রেসার বৃদ্ধি করা কষ্টসাধ্য। আামদের পানি এখন ফৌজদারহাট পর্যন্ত যাচ্ছে। পানি দেওয়ার চেষ্টা করছি। যদি পানি না যায় তাহলে তারা আমাদের থেকে কিনতে পারে। দুই মাসের নিলে প্রায় ১৮ হাজার লিটার পানি পাবে। দামও তেমন না।

তিনি আরও বলেন, সেখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, নার্সিং কলেজ এক সাথে। তারা তো একসাথে পানি নিতে পারেন। একটি চিঠি দিয়ে কি পানি পাওয়া যায়? যখন ভবন বা হাসপাতালগুলো করা হয়েছে; গণপূর্ত বিভাগ নিশ্চয় পরামর্শ দিয়েছেন। তারা তো তেমন একটা ফোনও করেন না। তবে আমরা রোগীদের স্বার্থে পানি দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাবো।’