নিজস্ব প্রতিবেদক »
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, কোনো চুক্তির মধ্য দিয়ে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়নি। স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ অবদান এবং সহযোগিতা অবিস্মরণীয়। দুর্দিনে পাশে থেকে বন্ধুত্বের প্রমাণ দিয়েছে ভারত। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যদি এক কোটিরও বেশি বাঙালিকে আশ্রয় না দিতেন, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ না দিতেন, প্রবাসী সরকার গঠনের সুযোগ করে না দিতেন, তাহলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য আরও অনেক বেশি রক্ত দিতে হতো। তাই বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু ও ইন্দিরা গান্ধী ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে এস রহমান হলে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ১০৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মেয়র এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র রেজাউল বলেন, ‘একাত্তরে একটি দুর্ধর্ষ সেনাবাহিনী ঢাল, তলোয়ার, অস্ত্রবিহীন বাঙালির উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। কিন্তু আমাদের মনোবল শক্ত ছিল। আমাদের দূরদর্শী, সাহসী নেতা ছিলেন। পাকিস্তানিরা আমাদের বলত ভীতু বাঙালি। অস্ত্র চালাতে পারি না। তাই সেনাবাহিনীতে আমাদের নেওয়া হতো না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সেই ভীতু বাঙালি সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে চরম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। বাঙালির হাজার বছরের লালিত স্বপ্ন স্বাধীনতা বাস্তবায়ন করেছে সেই নেতা। নয় মাসে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল পশ্চিম পাকিস্তানের কথিত সেই ভীতু বাঙালি।’
ভারতের অবদানের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘তখন আমাদের খুবই দুঃসময়। খাওয়া ছিল না, পরা ছিল না। হত্যা করা হচ্ছিল। তখন আমরা আশ্রয় নিয়েছিলাম সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে। শুধু মুক্তিযোদ্ধারা নয়, বরং সাধারণ মানুষও আশ্রয় নিয়েছিল সেখানে। শরণার্থীদের ঠাঁই দিয়ে সেদিন বাঙালির সেই চেতনাকে শাণিত করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।’
তিনি আরো বলেন, শুধু স্বাধীনতা যুদ্ধে সহযোগিতা নয় স্বাধীনতার পর পাকিস্তানের কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করতে ইন্দিরা গান্ধী ভূমিকা রেখেছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে ভারতের সহকারী হাই কমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জী বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে স্বাধীনতাকামী বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। শুরু করেছিল নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। কোটি মানুষ প্রাণের ভয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে আশ্রয় নেয়। ইন্দিরা গান্ধী সরকার সেদিন তাদের খাদ্য ও আশ্রয় দেয়, জীবনের নিরাপত্তা দেয়। ভারতের কোলকাতায় অস্থায়ী সরকারের কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ করে দেন ইন্দিরা গান্ধী। সেখান থেকে বিশ্বে কাছে নিজেদের চাওয়ার কথা, অসহায়ত্বের কথা, পাকিস্তানের অন্যায় আক্রমণের কথা তুলে ধরে বাংলাদেশ।’
বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইন্দিরা গান্ধী দিল্লিতে বাংলাদেশের পক্ষে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অব বাংলাদেশ’ নামে ৩ দিনের এক ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স আয়োজন করেছিলেন। এতে ২৪টি দেশের ১৫০ জন দূত অংশগ্রহণ করেন। এ সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে সারা বিশ্বকে আহ্বান জানান ইন্দিরা গান্ধী। তাছাড়া ৭১ সালের ১৩ মে বুদাপেস্টে বিশ্বশান্তি কংগ্রেসের সম্মেলনে ভারতীয় প্রতিনিধিদের মাধ্যমে বাংলাদেশের কথা বলান ইন্দিরা গান্ধী। এই সম্মেলনে ৮০ দেশের ৭শ’ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। এভাবে বিশ্ব জনমত বাংলাদেশের পক্ষে এসেছিল। বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য ৮ আগস্ট বিভিন্ন দেশে চিঠি পাঠান তিনি। এভাবে সংকট মোকাবেলায় ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেন।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রেস ক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস। সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদের সঞ্চালনায় এতে আরো বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাশেম, প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি সালাউদ্দিন মো. রেজা, বিএফইউজের সহসভাপতি শহীদুল আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহসিন কাজী ও সিইউজের সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম।