প্রিপেইড মিটার প্রকল্পে ধীরগতি

কেজিডিসিএল

শুভ্রজিৎ বড়ুয়া »

কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) প্রিপেইড মিটার স্থাপন প্রকল্পের মেয়াদ প্রায় শেষ দিকে। প্রায় আট মাস আগে গ্রাহকদের আবেদন আহ্বান করা হলেও তা অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। এখনো বাকি রয়েছে ঠিকাদার নিয়োগসহ জমা পড়া গ্রাহকদের আবেদন যাচাই-বাছাই ও প্রিপেইড মিটার বসানোর পূর্বে গ্রাহকদের লাইনের কাজ। ফলে গ্যাসের অপচয় রোধ, সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত করতে নেওয়া এ প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কেজিডিসিএল সূত্রে জানা যায়, ‘আবাসিক গ্রাহকদের জন্য প্রিপেইড মিটার স্থাপন প্রকল্প’ শিরোনামে ২০২১ এর ফেব্রুয়ারিতে প্রকল্পটি নেওয়া হয়। এ প্রকল্পে এক লাখ আবাসিক সংযোগে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কথা রয়েছে। ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে অনলাইনে প্রিপেইড মিটারের জন্য গ্রাহকদের আবেদন গ্রহণ কার্যক্রম শুরু হয়। কথা ছিলো এক (১) লাখ আবেদন গ্রহণ করা হবে। কিন্তু এখনো আবেদন জমা পড়েছে আনুমানিক ১৩ হাজার গ্রাহকের ৭৭ হাজার আবেদন। ২৪১ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয় ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত। কিন্তু পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের ক্ষেত্রে পুনঃদরপত্র আহ্বান করতে গিয়ে দীর্ঘসূত্রিতার সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কেজিডিসিএলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ২০২১ সালের ১৮ মে প্রকল্পটি প্রশাসনিক অনুমোদন পায়। এরপর পরামর্শক সংস্থা নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। তখন দরপত্র করা হলেও শর্ত পূরণ না করায় পরামর্শক সংস্থা নিয়োগের জন্য পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হয়। চলতি বছরের মে মাসে ডেভেলপমেন্ট টেকনিক্যাল কনসাল্টান্ট্যাস প্রাইভেট লিমিটেড (ডিটিসিএল) নামে একটি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করা হয়। পরামর্শক সংস্থাটি নতুন প্রকল্পের রিচার্জ সিস্টেম, সফটওয়্যার ম্যানেজমেন্টসহ আইটি বিষয়ক কাজের সমন্বয় করবে এবং মিটার ইন্সটলেশনের কারিগরি দিক নিয়ে পরামর্শ দেবে। এছাড়া ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান যথাযথ প্রক্রিয়ায় কাজ করছে কিনা, তা দেখভাল করবে। প্রকল্প হাতে নেওয়ার দেড় বছর পর ১৪ আগস্ট ঠিকাদার নিয়োগে পত্রিকায় দরপত্র আহ্বান করা হয়।

প্রিপেইড মিটারের জন্য আবেদন আহ্বানের প্রায় আট মাস শেষ হলেও কেন গ্রাহকদের পূর্ণ সাড়া মিলেনি প্রশ্নের উত্তরে সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম চৌধুরী জানান, অনেক গ্রাহক এখনো সচেতন নন। অনেকে গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে কাপড় শুকান। গ্যাস অপচয় করেন। অনেক গ্রাহক সচেতন না। এখনো প্রায় ১৩ হাজার গ্রাহক আনুমানিক ৭৭ হাজার চুলাতে প্রিপেইড মিটার বসানোর জন্য আবেদন করেছেন।

প্রিপেইড মিটার প্রকল্প কাজে ধীরগতি কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগে দেরী হওয়া, ঠিকাদারদের দরপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ না হওয়ার কারণেই মূলত প্রকল্পের কাজে গতি আসছে না।’

কাজ কবে নাগাদ শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগামী ২৩ নভেম্বর ঠিকাদার নিয়োগের দরপত্র জমা শেষ হবে। এরপর দরপত্র যাচাই-বাছাই করে ফেব্রুয়ারির দিকে ঠিকাদার নিয়োগের কাজ শেষ হবে। এরমধ্যে আবেদন যা পড়েছে তাও যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষ হবে। আশা করছি ফেব্রুয়ারি বা মার্চে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ শুরু হবে। তখনও অনেক গ্রাহক আবেদন করবেন বলে আশা করছি।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের প্রকল্পটি শেষ হবে কিনা জানতে চাইলে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মাজেদ বলেন, ‘আমাদের কাজগুলো গুছানো আছে। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে। এ লক্ষ্যে কাজও চলছে।’

প্রসঙ্গত, কর্ণফুলী গ্যাসের আবাসিক গ্রাহক মোট ৬ লাখ। এরমধ্যে জাইকার অর্থায়নে ২০১৫ সালে হাতে নেওয়া ২৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের অধীনে ৬০ হাজার সংযোগে প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হয়। প্রকল্পটির কাজ ২০১৯ সালে শেষ করা হয়।