সুপ্রভাত ডেস্ক »
চাল, আটা, ময়দা, ভোজ্যতেল, চিনি, মসুর ডাল, সিমেন্ট, রডসহ মোট ৯ পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেবে সরকার। এসব পণ্যের যৌক্তিক দাম কত হওয়া উচিত, তা ঠিক করা হবে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে। এখন থেকে অত্যাবশ্যকীয় কয়েকটি পণ্যের দাম প্রতি মাসে সরকারের তরফ থেকে নির্ধারণ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য, সরবরাহ ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকে রড, সিমেন্টের পাশাপাশি চাল, গম (আটা, ময়দা), ভোজ্যতেল (সয়াবিন,পাম), পরিশোধিত চিনি, মশুর ডাল, পেঁয়াজ ও ডিমের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। বাণিজ্যমন্ত্রী পরে বলেন, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন আমদানিকারক ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে প্রতি মাসে কিছু পণ্যের ‘যৌক্তিক’ দাম নির্ধারণ করে দেবে। ‘আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এ কাজ শুরু করা হবে। ট্যারিফ কমিশন, ব্যবসায়ী নেতাদের নিয়ে বসে নির্ধারিত কিছু পণ্যের দাম ঘোষণা করবে। খবর বিডিনিউজের।
‘এর চেয়ে বেশি যদি কেউ নেয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কেবল জরিমানা নয়, সোজাসুজি মামলাতে চলে যাব। আইনে তিন বছরের জেল বা কোথাও কোথাও আরও বেশি জেল-জরিমানা আছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দাম ঘোষণা করা হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে কতটুকু দেশে বাড়বে, সেটাও ঠিক করে দেওয়া হবে।’
বৈঠকে নয়টি পণ্যের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘পণ্যের সংখ্যা কোনো বিষয় নয়, অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাড়বে-কমবে। ট্যারিফ কমিশনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা সংশ্লিষ্ট মানুষজনকে নিয়ে এই দায়িত্ব পালন করবে।
‘আরও কোথাও যদি ডিউটি কমানোর প্রয়োজন হয়, সেটা আমরা করব। নিয়মিত মামলা করা শুরু করব। আমরা শক্ত অবস্থানে যেতে চাই। যারা সঠিকভাবে ব্যবসা করবে, তাদেরকে উৎসাহিত করব। অন্যায় করলে ব্যবস্থা নেব।’
কারসাজি করলে এখন আর কেবল জরিমানা করে হবে না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘দুই লাখ টাকা বাজার থেকে তুলে নিয়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে তারা বরং খুশিই হবে। ‘তাই শক্ত করে বলে দিয়েছি- এখন থেকে জরিমানার পাশাপাশি কোর্টে নিয়মিত মামলা করতে হবে। মামলা করেন, জেলে ঢুকায়ে দেন। আদালতে তাদের বিচার হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন ও পাম ওয়েলের মূল্য কিছুটা কমলেও ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।
‘সরকার এ বিষয়ে সতর্ক আছে, কিছুদিন পরপর এর মূল্য সমন্বয় করা হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সরকার ইতোমধ্যে চাল আমদানির ওপর থেকে ট্যাক্স তুলে নিয়েছে। জ্বালানি তেলের মূল্য কমানো হয়েছে।
‘প্রয়োজনে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। তবে ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষা এবং দেশীয় শিল্প সুরক্ষার নামে যাতে কেউ অনৈতিক সুযোগ নিতে না পারে, সেদিকেও নজর রাখা হবে। এ ক্ষেত্রে অনিয়ম পাওয়া গেলে কঠোর আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।’
বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড টেরিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন মফিজুল ইসলাম, ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশের (টিসিবি) চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আরিফুল হাসান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি) এ কে এম আলী আহাদ খান, এফবিসিসিআইয়ের প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, চট্রগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম সভায় উপস্থিত ছিলেন।