পণ্যের দাম জনমানুষের হাতের নাগালে আনতে হবে: নওফেল

চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা উদ্বোধন

নিজস্ব প্রতিবেদক »
নগরের পলোগ্রাউন্ড মাঠে মাসব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজন করে চিটাগং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি। ৩১তম এ মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। মেলা উদ্বোধন করতে আসা বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ‘বাজারের বর্তমান যে অবস্থা সেটি নিয়ন্ত্রণে আনা জরুরি। বাজারের জিনিসপত্রের দাম জনমানুষের হাতের নাগালে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা চাই দ্রব্যমূল্যের স্থিতিশীলতা।’
বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরের রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ড মাঠে আয়োজিত চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার (সিআইটিএফ) উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীর মুনাফা যেমন প্রয়োজন তেমনি ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতাও দরকার। এ মেলা সব ব্যবসায়ীর পণ্য পরিচয়, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান অর্জনে সহায়ক হবে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের লক্ষ্য। সামনে রমজান, সংযমের মাস। ভোগের বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। আমরা ব্যবসায়ী নেতাদের প্রতি আস্থাশীল।’
উদ্বোধকের বক্তব্যে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, ‘আমি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক মাস একদিন। আমি বাণিজ্যিক রাজধানীতে আসা দরকার ভেবে চট্টগ্রামে আসার প্রয়োজনীতা অনুভব করছিলাম। সরকার প্রধান বলেছেন, দ্রব্যমূল্য যেন সহনীয় থাকে। আজকে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের দাম সহনীয় রাখার ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা আমাকে কথা দিয়েছেন। তারা বলেছেন রমজানে প্রয়োজনীয় জিনিসের সংকট হবে না। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে কাজ করছি আমরা।’
আগামী বাণিজ্যমেলায় মন্ত্রণালয়ের একটি স্টল রাখার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ‘এ বছর হস্তশিল্পকে বর্ষপণ্য ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। একটি গ্রাম একটি পণ্য, এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করবো। প্রতিটি উপজেলার যেসব পণ্য জনপ্রিয়, সেসব পণ্যকে উৎসাহিত করতে হবে। একটি পণ্য বা একটি খাদ্য নির্বাচন করে আমরা চাই আগামী বাণিজ্য মেলায় আমাদের একটি স্টল রাখতে। পরবর্তীতে এসব পণ্যগুলো দেশ-বিদেশে বাজারজাত করা হবে।’
চেম্বার প্রেসিডেন্ট ওমর হাজ্জাজের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এম এ লতিফ ও ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার ডা. রাজীব রঞ্জন।
এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘আমি এখানে আসলে আবেগাপ্লুত হয়ে যাই। দীর্ঘ ১৫ বছর এখানে দায়িত্ব পালন করেছি। এখানে মেলার আয়োজন করেছি। এ অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে এসে কেমন যেন বিব্রত লাগছে। এবার ৩১তম মেলা। এ মেলার এখন পূর্ণ যৌবন। কিন্তু এ মেলার কোনো স্থায়ী ভেন্যু নাই। এটি নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। আমি এবং আমাদের সংসদ সদস্য এম এ লতিফসহ একসাথে একটি স্থায়ী ভেন্যুর ব্যবস্থা করবো।
সংসদ সদস্য এম এ লতিফ বলেন, ‘মেলা না হলেও খেলাও হবে না। সবকিছুর জন্য অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা মানে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ নয়। আমাদের যেসব পণ্য আছে, সেগুলো প্রদর্শন করা, সেগুলোকে রপ্তানি উপযোগী করা। স্বাধীনতার পর আমাদের রপ্তানিযোগ্য পণ্য ছিলো ৪৩টি। ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সাড়ে ৩ হাজার বাংলাদেশি আইটেম রপ্তানি ঝুড়িতে যুক্ত হয়েছে। আজ নদীর তলদেশে গাড়ি চলছে। অথচ কর্ণফুলী সেতুর জন্য ১২ বছর আন্দোলন করতে হয়েছিল। আমাদের দ্বিতীয় প্রজন্মের হাতেই দেশ উন্নত হবে।’
ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার ডা. রাজীব রঞ্জন বলেন, আমি চট্টগ্রাম চেম্বারকে অভিনন্দন জানাই ট্রেড প্রমোশনাল এ মেলা আয়োজনের জন্য। এখন ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের সোনালি অধ্যায় চলছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। আমি আশাকরি এ শহরের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি আসবে।’
সভাপতির বক্তব্যে চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন, বেসরকারি খাতের বড় বাণিজ্য মেলা সিআইটিএফ। মেলার জন্য স্থায়ী ভেন্যু নেই চট্টগ্রামে। বাণিজ্যিক নগরী হিসেবে আন্তর্জাতিক মেলা আয়োজনের জন্য স্থায়ী ভেন্যু থাকা উচিত ছিল। আশা করি, এ বিষয়টি সকলে বিবেচনা করবেন। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর, সীতাকুণ্ড শিল্পাঞ্চল, নদীর ওপারের শিল্পাঞ্চলের সবাই গ্যাস, পানির সংকটে ভুগছে। পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ জাহাজে আসা এলএনজি নির্ভর। তাই দুর্যোগের সময় গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। তাই গ্যাস রিজার্ভার নির্মাণ করা যেতে পারে।
সভা শেষে ফিতা কেটে ও বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। পরবর্তীতে সিআইটিএফের চেয়ারম্যান ও চেম্বারের পরিচালক একেএম আকতার হোসেন উপস্থিত অতিথি ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান ও চিটাগং চেম্বারের পরিচালকদের নিয়ে মেলার বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন পরিদর্শন করেন। এবার মেলায় প্রবেশ টিকিটের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকা।