খাদ্যস্পর্শক বা মোড়ক হলো এমন উপকরণ যা ইতোমধ্যে খাদ্যের সংস্পর্শে আছে বা আসার সম্ভাবনা রয়েছে। যার সঙ্গে খাদ্যদ্রব্যের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। দেশে এখন নানা ধরনের তাৎক্ষণিকভাবে ভোগের উপযোগী খাদ্যদ্রব্যের বিরাট বাজার গড়ে উঠেছে। বিচিত্র সব নামের চটকদার, রঙদার ও স্বাদ-গন্ধের এই খাদ্যের আকর্ষণে রসনা সংবরণ সহজ কথা নয় সাধারণের। নগরে বন্দরে শহরতলি ও দূর মফস্বলের খাদ্যসামগ্রী বিক্রেতা বিপণিগুলোতে এ দৃশ্য এখন নিত্য নৈমিত্তিক। মানুষ এখানে প্রায় সারাদিনই ভিড় জমাচ্ছে। পরিবার থেকে দূরে থাকা বা অনুষ্ঠান-সমাগমের কারণে এসব খাদ্যগ্রহণে অনেকটা বাধ্য হচ্ছে মানুষ, ব্যাপারটা শুধু তা নয়। বরং একটু সচ্ছল বা আয়েশী মানুষেরা সপরিবার কিংবা যেকোনো অজুহাতে প্যাকেটজাত বা প্যাকেটবদ্ধ খাদ্যে ঝুঁকে পড়ছে। উপজেলাগুলোর সদরেও এ দৃশ্য এত আকছার যে, মনে হবে মানুষ বুঝি ঘরোয়া খাদ্যের বনেদি সংস্কৃতি থেকে ক্রমে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে বেশ পছন্দ করছে। এ সুযোগে খাদ্যব্যবসায় যুক্ত হচ্ছে কিছু অসাধু এবং খাদ্যবিজ্ঞানের সাথে দূরবর্তী সম্পর্কও নেই, এমন লোকজন। তারা যেমন-তেমন একটি ছাউনি এবং নামমাত্র আসবাবপত্র সাজিয়ে মনগড়া ‘রেসিপি’ বানিয়ে এ ধরনের খাদ্যের বিপণি বা দোকান খুলে বসছে। অথচ জনস্বাস্থ্যরক্ষার প্রধান দিকটাই হলো খাদ্যে সুষম ও উপযুক্ত প্রোটিন ও ক্যালোরির উপস্থিতি নিশ্চিত করা। দেশের প্রায় সর্বত্র বিষয়টি যে উপেক্ষিত হচ্ছে তার নানা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সমাজে পরিলক্ষিত হচ্ছে। বাড়ছে রোগবালাই। স্থূলতা, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপসহ নানাবিধ ব্যাধিতে মানুষ ধুঁকছে দেদার। এছাড়া হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে পার্সেলের মাধ্যমে খাদ্য সরবরাহের চলও আছে। এই পার্সেলের প্যাকেটগুলোতে ব্যবহার করা হয় পলিথিন। আবার পলিথিনের থলেটি ঢুকানো হয় একটি কাগজের প্যাকেটে। এখানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় পুরোনো সংবাদপত্রের কাগজ। যা ইতোপূর্বে বহুল ব্যবহারের মাধ্যমে জীবাণুযুক্ত হয়ে থাকার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যবিদেরা। অনেক দোকানদার আবার শুধু পুরোনো সংবাদপত্র মুড়িয়ে পরোটা বা নানরুটি জাতীয় খাদ্য ভোক্তর হাতে তুলে দিচ্ছে অবলীলায়। এভাবে চোখের সামনেই বেড়ে চলেছে স্বাস্থ্যহানির নানা ঘটনা। সেই সঙ্গে চলমান কোভিড-১৯ সংক্রমণের আশঙ্কাও কি এতে থাকছে না?
জনস্বাস্থ্যের এই বিষয়গুলোর দেখার জন্য সরকারের একটি বিভাগ রয়েছে। এটির নাম নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এই সংস্থাটি লোকবল ও সাংগঠনিক কাঠামোর দুর্বলতায় কাক্সিক্ষত দায়িত্ব পালন করতে পারছে না জানা যাচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সম্প্রতি সংবাদপত্রকে জানিয়েছেন, ‘আমাদের ৬০ ভাগ কাজ হলো গণসচেতনতা সৃষ্টি আর ৪০ ভাগ কাজ হলো এনফোর্সমেন্ট।’ তিনি জানাচ্ছেন, উপজেলা পর্যায়ে তাদের নিজস্ব লোকবল বলতে গেলে একেবারে শূন্যের কোটায়। ওখানে তাদের হয়ে বিষয়টি দেখেন সেনিটারি ইন্সপেকটর।’
কাজেই এদিকে যে প্রশাসনের গাফিলতি বা দেখভালের ঘাটতি রয়েছে তা অনস্বীকার্য। এই করোকালের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে এদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তীক্ষè নজর দেবার এটাই প্রকৃষ্ট সময়।
মতামত সম্পাদকীয়