নিঃসন্তান দম্পতিরা সুলভে চিকিৎসাসেবা পাবেন

চমেক হাসপাতাল আই.ইউ.আই সেবা

নিজস্ব প্রতিবেদক »

স্বামী সান্তুনু দাস একটি বেসরকারি ব্যাংকে কাজ করেন। স্ত্রী রিকি হাওলাদার ঘরের কাজ সামলান। বিয়ের সাত বছর পার হলেও তাদের কোনো সন্তান হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক দেখাচ্ছেন। কিন্ত তেমন একটা সুফল আসছে না। সম্প্রতি নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ফের চিকিৎসক দেখান। সেখানে তাদের ইনট্রা ইউটেরাইন ইনসামিনেশন (আই.ইউ.আই) সেবা নেয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। তবে তার জন্য ২০-৩০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে।

চমেক হাসপাতালে আধুনিক আই.ইউ.আই সেবা চালুর কথা জানার পর সান্তুনু ও রিকি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। সান্তনু দাস বলেন, সামান্য বেতনে চাকরি করি। দুয়েক মাস হলো আই.ইউ.আই সেবাটি নেওয়ার জন্য টাকা জমাচ্ছিলাম। চিকিৎসক বললেন ৩০-৩৫ হাজার টাকাও লাগতে পারে। এখন চমেক হাসপাতালে যেহেতু হচ্ছে সেখানেই করাবো। কম টাকায় সেবা মিললে, এটি হবে আমাদের জন্য অত্যন্ত খুশির সংবাদ। আমাদের অর্থ বাঁচবে। সাধারণ রোগীরাও সেবা নিতে পারবেন। ’

ইনট্রা ইউটেরাইন ইনসামিনেশন (আই.ইউ.আই) কি
নিঃসন্তান দম্পতিদের সন্তান জন্মদানের একটি আধুনিক পদ্ধতি ইনট্রা ইউটেরাইন ইনসামিনেশন (আই.ইউ.আই)। এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে পুরুষের বীর্য থেকে গুণগত মানসম্পন্ন শুক্রাণু ল্যাবরেটরিতে বাছাই করে (স্পার্ম ওয়াশিং) স্ত্রীর গর্ভাশয়ে সরাসরি প্রবেশ করানো হয়। যাতে পরিভ্রমণ পথ সংক্ষিপ্ত হয়। সুস্থ-সবল শুক্রাণু সহজে ডিম্বাণুর কাছাকাছি আসে এবং গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ায়। এই পদ্ধতির সুবিধা হল, এতে জটিলতা কম, এমনকি খরচও কম। একই সাথে সন্তান জন্মদানের সম্ভাবনাও বেশি।

চট্টগ্রামে এই সেবাটি বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে পাওয়া যায়। তবে সরকারিভাবে কোনো হাসপাতালে আগে এই সেবাটি দেওয়া হতো না। চমেক হাসপাতালের গাইনি বিভাগে এবার এই সেবাটি চালু হলো। সাধারণ গরিব রোগীরা সেবাটি পাবেন।

গতকাল বুধবার (২৫ অক্টোবর) আই.ইউ.আই পদ্ধতিতে এ সেবার উদ্বোধন করেন চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় চমেকের অধ্যক্ষ ও হাসপাতালের গাইনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সাহেনা আকতারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আই.ইউ.আই হলো আর্টিফিশিয়াল রিপ্রোডাক্টিভ ট্রেনিং। যেটা টেস্টটিউবের থেকেও ছোট। পুরুষের বীর্য থেকে গুণগত মানসম্পন্ন শুক্রাণু ল্যাবরেটরিতে বাছাই করে (স্পার্ম ওয়াশিং) স্ত্রীর গর্ভাশয়ে সরাসরি প্রবেশ করানো হয়। এই প্রক্রিয়াটি করার জন্য একটি আলাদা মিডিয়ার দরকার পড়ে। শুধুমাত্র সেটা বাইরে থেকে একজন রোগীকে সংগ্রহ করতে হবে। যার দাম প্রায় ৩ হাজার টাকা। বাকি সেবা নিতে কোনো টাকা দিতে হবে না। তবে যখন রোগী বাড়বে তখন মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করে এই মিডিয়াটিও রোগীদের দেওয়া হবে। এখন মাত্র সেবা চালু হলো। দুয়েকজন রোগীর জন্যও তো মিডিয়া আনা যাবে না। রোগী যত বাড়বে তখন ব্যবস্থা করা যাবে।’

একজন নারী কখন এই সেবাটি নিতে পারবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এই পদ্ধতিটি নারীর পিরিয়ডের উপর নির্ভর করে। রোগীর পিরিয়ড হওয়ার ১৪ দিনে এই সেবাটি দেওয়া হয়। ’

চট্টগ্রামে সরকারিভাবে এটি প্রথম চালু হলো। বেসরকারিতে কয়েকটি হাসপাতালে দেওয়া হয় মাত্র। অন্যসব পদ্ধতি থেকে এটিতে সন্তান জন্মদানের সম্ভাবনা অনেক বেশি।’

উল্লেখ্য, চমেক হাসপাতালে গাইনি বিভাগে রিপ্রোডাক্টিভ এন্ডোক্রাইনোলজি ও ইনফার্টিলিটি ইউনিটের কার্যক্রম শুরু হয় ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি। প্রাথমিকভাবে আউটডোর সেবা, আলট্রাসনোগ্রাফি, স্যালাইন ইনফিউশন সনোগ্রাফি, ল্যাপরোস্ককপি, হিস্টারোস্কপি কার্যক্রম শুরু হয়। এর আওতায় এ পর্যন্ত ৪০১২ জন নিঃসন্তান দম্পত্তিকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে। তার মধ্যে ১৪৪ নারী গর্ভবতী হয়েছেন।