দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা ও কর্ণফুলীর ওপার সংলগ্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী ও নানা প্রয়োজনে দিনে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ কর্ণফুলী পারাপার করেন। কিন্তু এই নৌ-যাত্রা অশেষ দুর্ভোগ, কষ্ট, ঝুঁকি নিয়ে আসে তাদের জন্য। মানুষের ব্যস্ততার, কর্তব্যবোধের এই সুযোগ নিতে থাকেন নৌকার মাঝি, ঘাটের ইজারাদার। নদী পারাপারে ইঞ্জিনচালিত বোটগুলি ঝুঁকি সত্ত্বেও অতিরিক্ত যাত্রী বহন করে। যাত্রীসাধারণেরও উপায় থাকে না এই অবস্থা মেনে নেওয়া ছাড়া। কাঠের নৌকাগুলিরও একই অবস্থা। অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই, বাড়তি ভাড়া-এসব মেনে নিয়ে মানুষ ঝুঁকিকেই নিত্য সাধারণ বিষয় হিসেবে ধরে নেন। এ ধরণের যাত্রায় দুর্ঘটনাও ঘটে। কর্ণফুলীতে নৌকাডুবি, যাত্রীদের সলিল সমাধির খবর মাঝে মাঝেই পত্র-পত্রিকায় আসে। গত মঙ্গলবার ১২নম্বর ঘাটে যাত্রীবাহী নৌকা ডুবে এক যুবকের প্রাণহানি ঘটে।
আমাদের আনোয়ারা প্রতিনিধির পাঠানো এতদসংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে কর্ণফুলীর ওপারে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার শহরমুখি মানুষ, বিদেশ যাত্রী, মেরিন একাডেমির শিক্ষার্থী, কাফকো, সিইউএফএল, কোরিয়ান ইপিজেডসহ নানা বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের লোকজন চট্টগ্রাম শহরে ঢোকেন নৌ-পথে। তারা দিনের কাজ দিনে সেরে আবার গ্রামে ফিরে যান। এই বিপুল সংখ্যক মানুষ যাতে নিরাপদে, যথাসময়ে কাজে আসতে পারেন তার ব্যবস্থা করা উচিত সরকারি প্রশাসনের। ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহনের পরিবর্তে আধুনিক আরামদায়ক নৌ-যানের ব্যবস্থা করতে পারলে এই পরিস্থিতির অবসান ঘটতে পারতো।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দু’দিকে ঘাটের প্রান্তে ওঠাও ঝুঁকিপূর্ণ, জোয়ারের সময় ছোট নৌকা বা বোটে অধিক যাত্রীবহন খুবই অনিরাপদ। ইজারাদাররা ঘাটে প্রয়োজনের তুলনায় নৌকা কম রাখে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয় যাত্রীদের। সময়ের প্রয়োজনে যাত্রীরা ঝুঁকি জেনেও নৌকায় ওঠেন, বাড়তি ভাড়াও চাপিয়ে দেয় ইজারাদাররা।
জানা গেছে, কর্ণফুলীর এসব ঘাটে ইজারাদার নিয়োগ দেয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। তারা তো রাজস্ব আদায় করে খালাস, কিন্তু জনগণের সমস্যা-সংকট দীর্ঘদিন ধরে জমা হয়ে আছে। তারা ভাড়া দিচ্ছে, তার মধ্যে ট্যাক্স ও আছে কিন্তু তারা সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে কোথায়? যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ কিংবা নির্বিঘœ পারাপার, আরামদায়ক ভ্রমণ এসব তাহলে দেখার দায়িত্ব কার? এ মানুষগুলিই তো শহর জীবন, অর্থনীতি সচল রাখছে, তাহলে চসিক কেন বিস্তারিত পরিকল্পনা নেবে না। ঘাটগুলির সংস্কার কিংবা চলাচলে সুবিধা করে দিতে ব্যবস্থা নিতে পারে। সামনে নগর ওপারেও বিস্তৃত হবে, এখন থেকেই পরিকল্পনা নেওয়া উচিত নয় কি?
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, ঘাটে যাত্রীদের হয়রানি, বাড়তি ভাড়া, অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই ও নানা অনিয়ম ঠেকাতে মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হলেও সুফল মেলেনি। অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা পুনরায় ফিরে আসে, যাত্রীরাও অনন্যেপায় হয়ে বিদ্যমান অনিয়মকে মেনে নিতে বাধ্য হন। আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার কী যুক্তিসংগত! আমরা আশা করি চসিক প্রশাসন এই নদী পারাপার সমস্যার দিকে মনোযোগ দেবে এবং বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
মতামত সম্পাদকীয়