নিজস্ব প্রতিবেদক »
যে নগরে ইঞ্জিনের শব্দ আর গাড়ির হর্নে নগরবাসীর কান নিপাত যায় সেই নগরজুড়ে রিকশার টিং টিং শব্দ। প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি সবকিছু দখলে নিয়েছে পায়ে টানা ত্রিচক্রযান। শহরের বুক চিড়ে বেপরোয়াভাবে ছুটছে রিকশা। যাত্রীর জন্য অপেক্ষা নেই, ভাড়া নিয়ে বাড়াবাড়ি নেই, মুখে মলিনতা নেই, দ্বিগুণ ভাড়া হাঁকাতে দ্বিধা নেই। তাই শারিরিক ও আর্থিক ভোগান্তিতে অফিসগামী ও অফিস ফেরত সাধারণ মানুষ।
লকডাউনের প্রথমদিনে গতকাল সোমবার সকাল থেকে নগরীর একে খান, হালিশহর, আগ্রাবাদ, জিইসি, বহদ্দার হাট, নতুন ব্রিজ, নিউ মার্কেট এলাকা এলাকা ঘুরে এই চিত্র দেখা যায়।
গণপরিবহন বন্ধ। কিন্তু ব্যাংকসহ সরকারি-বেসরকারি ও জরুরি সেবার অফিস খোলা রয়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছে কর্মীরা। দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় দাঁড়িয়েও পরিবহন পাননি তারা। গন্তব্যে যেতে অনেকেই পা দুটিকে সম্বল করেছে। গণপরিবহনমুক্ত সড়কে রিকশার আধিপত্য থাকলেও, যে পরিমাণ অফিসগামী যাত্রী সেই পরিমাণ রিকশা ছিল না। রিকশাওয়ালারা ভাড়াও হাঁকছেন অনেক বেশি।
নগরীর একে খান মোড় থেকে বিশ্বরোড মোড় ১০০ টাকা, হালিশহর মুজিব চত্বর থেকে আগ্রাবাদ মোড়ে হাঁকাচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। এনায়েত বাজার মোড় থেকে মেডিক্যাল গেইট যেতে চাচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। আন্দরকিল্লা মোড় থেকে বহদ্দার মোড় যেতে চায় ৮০ থেকে ১০০ টাকা। কিন্তু স্বাভাবিক ভাড়া যেখানে ৫০ টাকা। আবার যাত্রী দুইজন দেখলে নিতে অপরাগতা প্রকাশ করছে।
গতকাল অফিসে যেতে সকাল নয়টায় আলকরণ থেকে হেঁটে আন্দরকিল্লা পর্যন্ত এসেছেন মোরশেদ। অফিস বহদ্দারহাট। দেরি হওয়ার কারণে রিকশা ভাড়া করছিলেন। কিন্তু রিকশাওয়ালার দাম হাঁকানো শুনে চুপ হয়ে গেলেন।
তিনি সুপ্রভাতকে জানান, অনেকদূর হেঁটে এসেছি। বাসা অলকরণ। এখানে এসে ভেবেছিলাম দুই একটা গাড়ি থাকবে। গাড়ি না পেয়ে রিকশা দেখতেছিলাম। বহদ্দারহাটের ভাড়া জিজ্ঞাসা করতেই বললো ১০০ টাকা। কিন্তু এখান থেকে বহদ্দারহাট যেতে ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে যাওয়া যায়।
কদতলীর বাসিন্দা শারমিন কাজ করেন জিইসির মোড়ে একটি বেসরকারি সংস্থায়। প্রতিদিন লোকাল বাসে করে অফিস করেন তিনি। খরচ গড়ে প্রতিদিন ৪০ টাকা।
তিনি বলেন, অফিস খোলা। যেতেই হবে। বাসে করে অফিস চলে যেতাম। আজকে (গতকাল) প্রায় এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে তারপর রিকশা করে অফিসে গেলাম ৬০ টাকায়। ফেরার সময় কি হবে জানি না? ভাড়া যে শুধু বেশি লাগছে, তাই নয়; অফিসে যেতেও দেরি হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে বাড়তি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ মানতে নারাজ রিকশাওয়ালারা। তারা জানায়, ঝুঁকি মাথায় নিয়ে তারা বাইরে বের হয়েছেন। যাত্রীরা যেখানে বলছেন সেখানে যাচ্ছেন। তার জন্য তো কিছুটা বাড়তি ভাড়া দিতে হবে।
আমবাগান এলাকার রিকশাচালক আবদুস শুক্কর বলেন, আমরা রিকশাওয়ালারা দিন এনে দিনে খাই। জানলাম বৃহস্পতিবার থেকে রিকশা চালাতে পারবো না। এ তিনদিন রিকশা চালাবো। এই তিনদিনে সাতদিনের ইনকাম তুলতে হবে।