ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-ের বিধান রেখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০০০’এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সংসদ অধিবেশন না থাকায় এটি রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়েছে। দেশব্যাপী অব্যাহত নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে জনগণ ও শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের মুখে ধর্ষণের শাস্তি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ধর্ষণের অপরাধে শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদ-ের বিধান ও দ্রুততম সময়ে বিচার ও রায় কার্যকর করার দাবি জানিয়ে আসছে বিভিন্ন সংগঠন। বাংলাদেশ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন’ ২০০০ অনুযায়ী ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদ- আর ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর মৃত্যু হলে বা দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-; পাশাপাশি উভয় ক্ষেত্রে অর্থদ-ের বিধানও রয়েছে। মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ৭দিন থেকে ১মাস এবং মামলা নিষ্পত্তির জন্য ১৮০ দিন (ছয় মাস) বেঁধে দেওয়া হলেও বাস্তবে ওই সময়ে প্রতিবেদন প্রদান কিংবা মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয় না। ধর্ষণের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দৃষ্টান্তও কম। সেই সাথে বেশিরভাগ মামলার বিচার নিষ্পন্ন হতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। মন্ত্রিসভায় খসড়াটি অনুমোদনের পর সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, পুরনো ধর্ষণ মামলাগুলো আগে এবং নতুন মামলাগুলো যত দ্রুত সম্ভব আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইনি প্রক্রিয়া দ্রুততম সময়ে শেষ করা এবং ধর্ষণ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন বলে অভিমত দিয়েছেন। আমাদের বিদ্যমান রাজনীতি, সমাজ কাঠামো, শিক্ষাদান পদ্ধতিতে ব্যাপক ত্রুটি রয়েছে। তদুপরি আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর আইনের কার্যকর প্রয়োগের ব্যাপারে শিথিলতা আছে। প্রভাবশালী ও ক্ষমতার সাথে সংশ্লিষ্ট নানা বলয়ের প্রশ্রয় পাওয়ার কারণে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। স¤্রাট, ডিকে শামিম ও সাহেদের মতো লোকদের উত্থান এভাবেই হয়েছে। বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করার মতো নারকীয় ঘটনার ১মাসেও থানার পুলিশ দুর্বৃত্তদের ধরলোনা অথচ সামাজিক মাধ্যমে জানাজানির পর আন্দোলনÑবিক্ষোভের মুখে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে তাদের দ্রুত গ্রেফতার করা হল কিভাবে! থানায় যে সকল অপরাধীর বিরুদ্ধে অভিযোগ বা মামলা আছে তাদের অনেকে রাজনৈতিক বা প্রভাবশালীদের আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে দাপটের সাথে ঘুরে বেড়ায়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব তার এলাকায় অপরাধের খবর থানাকে অবগত করা। সামাজিক ন্যায়, শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব তাদের ওপর অথচ তারা অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে অনেকে পালন করেন না।
আমরা মনে করি, আমাদের প্রচলিত রাজনীতি, আইন ব্যবস্থার সংস্কার সাধন জরুরি। নারীর প্রতি পরিবার, সমাজ ও প্রশাসনের আচরণগত দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় গলদ, অপরিপূর্ণতা দূর করে এর সংস্কারও সময়ের দাবি।
এটি দুর্ভাগ্যজনক যে, করোনার এই ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যেও নারী ও শিশু নির্যাতনের মতো জঘন্যতম অপরাধ সংঘঠিত হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধও গড়ে তোলা প্রয়োজন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দুর্বৃত্ত ও ধর্ষকদের ধরতে কোনরূপ শিথিলতা দেখাবে না বা লোভ, চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না-দেশবাসী তা দেখতে চায়।
মতামত সম্পাদকীয়