দীপন বিশ্বাস, কক্সবাজার »
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কাছাকাছি, শহর থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে তৈরি করা হয়েছে দেশের প্রথম আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন। অনেকটা ঝিনুকের আদলেই গড়ে তোলা হয়েছে স্টেশনের অবকাঠামো।
এখানে রয়েছে তারকা মানের হোটেল, শপিংমল, কনভেনশন সেন্টার, রেস্তোরাঁ, শিশু যতœকেন্দ্র, লাগেজ রাখার লকারসহ অত্যাধুনিক বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা। আক্ষরিক অর্থে ঝিনুক না হলেও সমুদ্র দর্শনে গিয়ে প্রথমই সামুদ্রিক আবহ পাওয়া যাবে গোটা স্টেশনে। স্টেশনে দেয়া হয়েছে বহুমাত্রিক রূপও।
চোখ ধাঁধানো আইকনিক স্টেশনে সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে চারপাশে ব্যবহার করা হয়েছে কাচ। ছাদের ওপর ব্যবহার করা হয়েছে অত্যাধুনিক স্টিল ক্যানোপি। ফলে দিনের বেলা কৃত্রিম আলোর ব্যবহারের প্রয়োজন পড়বে না স্টেশনে। এ ধরনের আধুনিক নির্মাণশৈলীর কারণেই একে বলা হচ্ছে গ্রিন স্টেশন।
রাজধানী থেকে রাতের ট্রেন ধরে সকালে কক্সবাজারে পৌঁছে পর্যটকেরা লাগেজ বা মালামাল স্টেশনের লকারে রাখতে পারবেন। সারাদিন সমুদ্র সৈকত বা পর্যটন স্পট ঘুরে রাতের ট্রেনে আবার ফিরতে পারবেন নিজ গন্তব্যে।
কক্সবাজারের আইকনিক রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার আবদুল জাবের মিলন বলেন, ‘স্টেশন ভবনটি এখন পুরোপুরি প্রস্তুুত। এসি থেকে শুরু করে সব কাজই শেষ, এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো -১৪টি চলন্ত সিঁড়ি, যা দেশের অন্য কোনো রেলওয়ে স্টেশনে নেই।’
আইকনিক স্টেশনটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২১৫ কোটি টাকা। এরই মধ্যে যোগ দিয়েছেন প্রথম স্টেশন মাস্টার গোলাম রাব্বানী। তাঁর নেতৃত্বে আছেন আরও দুই সহকারী স্টেশন মাস্টার, তিনজন কাউন্টার ম্যানেজার।
আইকনিক রেলওয়ে স্টেশনের প্রথম স্টেশন মাস্টার গোলাম রব্বানী বলেন, উদ্বোধনের পর পুরোপুরি চালু হলে এটির সুফল মিলবে। এরই মধ্যে প্রাথমিক অপারেশনের জনবল দেয়া হয়েছে। এটি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর স্টেশন, যা দেখে পর্যটকেরা আনন্দিত হবেন।’
সহকারী স্টেশন মাস্টার আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ইতিহাসের সাক্ষী হতে পেরে ভালো লাগছে। আরও কয়েকটি স্টেশনে কাজ করেছি। এ রকম স্টেশন নেই। আমরা মনে করছি, এই স্টেশনে সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা পাবে যাত্রীরা।’
রেল কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরু হলেই বন্দর নগরী থেকে আড়াই ঘণ্টায় আর ঢাকা থেকে সাড়ে সাত ঘণ্টায় পৌঁছানো যাবে সৈকতের নগরে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১০ সালে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমার সীমান্ত ঘুমধুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের প্রকল্প নেয়া হয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল কক্সবাজারে যাতায়াত সহজ করা। পাশাপাশি মিয়ানমারসহ ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে বাংলাদেশকে যুক্ত করা।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর পহেলা ডিসেম্বর ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু হবে বলে জানা গেছে।