দুর্বিষহ জীবনযাপন

দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে নেই মেঘ, নেই বৃষ্টি। বাতাসে আর্দ্রতা অস্বাভাবিক কম থাকায় গরম প্রকৃত তাপমাত্রার চেয়ে বেশি পোড়াচ্ছে মানুষকে। তীব্র গরম ও শুষ্ক বাতাস মিলেমিশে মানুষের কষ্ট আরও বেড়েছে।

এপ্রিল ও মে মাস এমনিতেই বছরের উষ্ণতম। এ সময় বাংলাদেশে সূর্য তাপ দেয় খাড়াভাবে। ফলে গরম থাকে বেশি। তবে এ সময়ে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাবে, যা সচরাচর দেখা যায় না ।

তীব্র তাপপ্রবাহের পর অতি তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। প্রচণ্ড রোদে বিপর্যস্ত নগর জীবন। তাপদাহ, সাথে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা। চট্টগ্রামে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। তীব্র গরমের মাঝে নগরীর অনেক এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, কোন এলাকায় যদি তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে তাহলে তাকে বলে তীব্র তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রা যখন ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে তাকে বলে মাঝারি তাপপ্রবাহ এবং তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলে সেটিকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলে।

দেশে যে পরিমাণ বন থাকার কথা, তা নেই। যতখানি ওপেন স্পেস থাকার কথা, তা আমরা রাখিনি। হিট যে এবজর্ব করবে সেই গ্রিন আইল্যান্ডগুলো নেই। শহরগুলো তামাটে হয়ে গেছে। ফলে আর্টিফিশিয়ালি আমরা হিটটা বাড়িয়ে দিচ্ছি।

নগরায়ণের কালচার এবং ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন সবকিছুতেই আমরা অ্যান্টি ক্লাইমেট করে ফেলেছি। আমাদের অপরিকল্পিত যে জীবনযাপন, ভূমি ব্যবহার, নগরায়ণ, অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট, ব্যবস্থাপনা এগুলো সবকিছুই দায়ী এই পরিবর্তনের জন্য।

যে ঘরটা স্বাভাবিক থাকার কথা, সেখানে সৌন্দর্যের নামে আমরা গ্লাস লাগিয়েছি। গ্লাস লাগিয়ে ভেতরটা গরম করে ফেলছি। আবার এসি লাগিয়ে সেটাকে ঠান্ডা করছি। এসির গরমটাকে আবার আমরা বাইরে দিচ্ছি। কাচ দিয়ে এত বিশাল মার্কেট করছি, সেটাকে ঠান্ডা করছি এসি দিয়ে। এখন এসির গরমটাকে আপনি কী করছেন? এসির এই গরমটা কোথায় যাচ্ছে? বাইরেই তো যাচ্ছে। আপনার-আমার গায়েই তো লাগছে।

চুলার পাশে থাকলে তো গরমবোধ হবেই। শহরটা তো একটা চুলা হয়ে গেছে। এই যে নগরে সারি সারি বিল্ডিংগুলো সব তো কংক্রিটের, কোথাও এক চিলতে সবুজ নেই।

গরমের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির বিষয়টি আমাদের জন্য নতুন উপলব্ধি হয়ে আসছে। দেখা যাচ্ছে, শিল্প অবকাঠামোর যে পরিমাণ উন্নতি হচ্ছে, তার একটি অংশ উল্টো অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ অবস্থায় ক্ষতি কমিয়ে আনতে পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নের ওপর জোর দিতে হবে। পাশাপাশি নগরীকে বাসযোগ্য করতে হলে ভূমির যথাযথ ব্যবহার ও পরিকল্পিত সবুজ নগরায়ণের পথে আমাদের হাঁটতে হবে। তা না হলে এই দুর্বিষহ জীবনযাপন থেকে কোনই পরিত্রান নাই।