নিজস্ব প্রতিবেদক »
গত দুই বছরের চট্টগ্রামে সরিষার আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৬ গুণের বেশি। যার ফলে দিন দিন ভোজ্য তেলে সরকারের নির্ধারিত লক্ষ্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই খাত। সাশ্রয়ী চাষাবাদ, দ্রুত ফল উৎপাদন এবং শারীরিক উপকারী হওয়ায় দিন দিন সরিষা খাতে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। সাথে সাথে কৃষকদের সরিষা চাষে আগ্রহী করে তুলতে প্রণোদনাসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচির আয়োজন করা হচ্ছে বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলা ডেপুটি ডিরেক্টর মোহাম্মদ আবদুচ ছোবহান।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, করোনা পরবর্তী সময় সব ধরনের জিনিসের পাশাপাশি ভোজ্য তেলের দামও অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে রমজানে তেলের দাম বেড়ে যায়। দেশের মোট চাহিদার ৭৫ শতাংশ ভোজ্য তেল বহির্বিশ্ব থেকে আমদানি করতে হয়। তাই ভোজ্য তেলে স্বনির্ভরতা বাড়াতে সরিষা আবাদের প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে মাত্র দুই বছরে সরিষা আবাদ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
জেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে চট্টগ্রামে মাত্র ৭০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়। পরবর্তী ২০২২-২৩ অর্থবছরে আবাদ বেড়ে ২ হাজার ৩৮৫ হেক্টর হয়। এ বছর প্রায় দ্বিগুণ সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৯৮৭ হেক্টর জমিতে। মাত্র ১ কেজি সরিষার বীজ দিয়ে ১ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করা যায়। আর প্রতিবিঘা জমিতে সরিষার ফলন হয় প্রায় ১১০-১২০ কেজি। আর প্রতি ৩ কেজি সরিষা থেকে ১ কেজি তেল পাওয়া যায়। সে হিসেবে এবার প্রায় ১২শ টন ভোজ্য তেল পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান জেলা কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
এদিকে অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ হওয়ায় সরিষা চাষে দিন দিন কৃষকদের মাঝে আগ্রহ বাড়ছে।
রাউজান উপজেলার সরিষা চাষি নুরুল ইসলাম জানান, তিন মাসের মধ্যে সরিষার ফলন পাওয়া যায়। আর প্রতিবছর কৃষি অফিস থেকেও বিনামূল্যে বীজ সার দেওয়া হয়। প্রায় ৮০ শতক জমিতে সরিষা আবাদ করেছি। আশা করি ফলনও ভালো হবে। ৮০ শতকে চাষে মাত্র ১০ হাজার টাকা খরচ হলেও প্রতি কেজি সরিষা জায়গা ভেদে ১২০-১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।
আনোয়ারা উপজেলার সরিষা চাষি সুমন জানান, আমি ২ কানি জমিতে সরিষার চাষ করেছি। দুই কানিতে আমার ৬ হাজার টাকা মত খরচ হয়েছে। গতবারও আমি ২ কানি চাষ করেছিলাম। ফলন ভালো হওয়াতে লাভবান হয়েছিলাম আশা করি এবারও লাভবান হবো। যেহেতু কৃষি অফিস থেকে বীজ, সার দেওয়া হয় সেহেতু সরিষা চাষে খরচ কম পড়ে।
চট্টগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর মোহাম্মদ আবদুচ ছোবহান জানান, সাধারণত নভেম্বরের শেষে এবং ডিসেম্বরে শুরুতে সরিষার আবাদ শুরু হয়। তারপর ফ্রেব্রুয়ারিতে ফসল তোলা হয়। দুই বছরের মধ্যে ভোজ্য তেলে উল্লেখযোগ্য স্বনির্ভরতা বৃদ্ধি করতে সরকার সরিষা আবাদে গুরুত্ব দিয়েছে। সে সুবাদে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সরিষার বীজ, সার বিতরণ করা হচ্ছে। চট্টগ্রামে এবছর ৩ হাজার ২’শত কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে সরিষার বীজ, সার বিতরণ করা হয়েছে। আমরা কৃষকদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের আয়োজন করছি। বিশেষ করে জেলার সমন্বয় সভায় প্রতিটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ইউএনওদের উপস্থিতিতে পরিষদের কৃষি খাতে বরাদ্দের অর্থ থেকে কৃষকদের বীজ, সার বিতরণের বিষয়ে প্রস্তাব করি। খুব অল্প সময়ে বাংলাদেশ ভোজ্য তেলে উল্লেখযোগ্য স্বনির্ভরতা অর্জন করবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।
এ মুহূর্তের সংবাদ