দিনে ৬৩ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে বিপিসি!

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব

ভূঁইয়া নজরুল »

নভেম্বর মাসে যখন ডিজেলের দাম বাড়ানো হয় তখন দিনে ২০ কোটি টাকা সাশ্রয় হতো বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি)। কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে সেই সাশ্রয় লসের খাতায় গিয়ে প্রতিদিন ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে ৬৩ কোটি টাকা। দাম বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকায় কোথায় গিয়ে ঠেকবে এই আর্থিক ক্ষতি? এছাড়া জ্বালানি তেলের দাম কতদূর পর্যন্ত বাড়বে?

বর্ধিত জ্বালানি তেলের দাম নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ বলেন, ‘আগে যেখানে দিনে এক বা দুই সেন্ট করে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পেতো। এখন তা ১০ থেকে ১২ ডলার করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এতেই শঙ্কায় রয়েছি কোথায় গিয়ে ঠেকবে জ্বালানি তেলের মূল্য।’

তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমানে যে দামে তেল কিনতে হচ্ছে এতে আমাদের দিনে ক্ষতি হচ্ছে ৬৩ কোটি টাকা। এরমধ্যে ডিজেলে ৫৮ কোটি ও অকটেনে ৫ কোটি টাকা।’

সাধারণ মানুষ এখনো নভেম্বরে বর্ধিত তেলের মূল্যের ধাক্কা সামাল দিয়ে উঠতে পারেনি উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘তেলের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে আর কতো দুর্ভোগে নিয়ে যাবো? আবার প্রতিদিন যেভাবে ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে তা কতোদিন চালিয়ে নেয়া যাবে বলা যাচ্ছে না।’

কিভাবে নির্ধারণ হয় তেলের দাম?

বিপিসির কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিপিসি আন্তর্জাতিক বাজার (সিঙ্গাপুর) থেকে তেল আমদানী করে থাকে। আর এই তেলের দাম স্পট মার্কেটে প্রতিদিন পরিবর্তিত হয়। বিগত তিনদিনের দামের গড় করে পরবর্তী দিনের তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।

জানা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে ৩ জানুয়ারি প্রতি ব্যারেল ডিজেল বিক্রি হয়েছে ৮৭ দশমিক ৯৫ ডলার দামে। ৩ ফেব্রুয়ারি ১০৪ দশমিক ৪৭ ডলার প্রতি ব্যারেল। আর ৩ মার্চ এর দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩৪ মার্কিন ডলার। ৬ মার্চ আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেলের দাম ছিল ১৩৯ দশমিক ১৩ মার্কিন ডলার। একদিনের ব্যবধানে ৭ মার্চ সোমবার এসে সেই দাম ১৭ ডলার বেড়ে দাঁড়ায় ১৫৬ দশমিক ০৩ ডলার।

জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে গত ১৪ বছরে মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম এখন সর্বোচ্চ। ২০০৮ সালের জুলাই মাসে প্রতি ব্যারেল ডিজেলের দাম সর্বোচ্চ ১৭২ ডলার পর্যন্ত উঠেছিল।
তেল কি বেশি কিনে স্টক রাখা যায়?

বিপিসির পক্ষ থেকে আগামী এপ্রিল পর্যন্ত ডিজেল আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে যে হারে জ্বালানি পণ্যের দাম বাড়ছে, এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি মাসের মধ্যে প্রতি ব্যারেল ডিজেলের দাম ২০০ ডলারে পৌঁছাতে পারে। মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে জালানি তেলের দাম বাড়ছে। তাহলে কি এখন যে দরে রয়েছে সেই

দরে তেল স্টক করা যায়?

এই প্রশ্নের জবাবে বিপিসি চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ বলেন, ‘সেই সুযোগ নেই। আমরা দুই মাসের রানিং ক্যাপিটেল স্টক রাখতে পারি। দেশে যে পরিমাণ স্টোরেজ ট্যাংক রয়েছে এর চেয়ে বেশি তেল রাখার কোনো সুযোগ নেই। তাই চাইলেই আমরা বেশি তেল কিনে স্টক রাখতে পারি না।’

উল্লেখ্য, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেলের একটি চালান আমদানি করতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেনের (বিপিসি) খরচ হতো ১৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার অস্থির হয়ে ওঠায় এখন সেই চালান আমদানি করতে খরচ হচ্ছে প্রায় ৩৯ মিলিয়ন ডলার। দেশে জ্বালানি সরবরাহ নির্বিঘ্ন রাখতে বিপিসিকে প্রতি মাসে শুধুমাত্র ডিজেলের চারটি চালান আমদানি করতে হয়।

বিশ্ববাজারে যে হারে ডিজেলসহ অন্যান্য জ¦ালানি তেলের দাম বাড়ছে, এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের জ¦ালানি নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ার আশংকা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের শঙ্কা।