দাম বেশি পাওয়ায় আমনের ভালো সংগ্রহ

সুপ্রভাত ডেস্ক »

ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর আমন মৌসুমে সরকারিভাবে ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযানে আগ্রহ দেখাচ্ছেন কৃষক ও মিল মালিকরা। গত একমাসে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আমন সংগ্রহ হয়েছে। হাতে রয়েছে আরও দুইমাস। ফলে এ বছর আমন সংগ্রহ আগের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এ পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে লক্ষ্যমাত্রাও বাড়াচ্ছে খাদ্য অধিদপ্তর। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এ লক্ষ্যমাত্রা বেড়ে ৭ লাখ টন থেকে ৯ লাখ টন হতে পারে। খবর জাগোনিউজ।
খাদ্য অধিদপ্তর বলছে, গত ২৩ নভেম্বর থেকে সরকারিভাবে সারাদেশে আমন ধান ও চাল সংগ্রহ শুরু হয়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত একমাসে দুই লাখ ৩০ হাজার টন ধান-চাল সংগ্রহ হয়েছে। যেখানে মৌসুমের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা ৭ লাখ টন।
গত ৮ অক্টোবর সরকারের এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় চলতি বছর আমন ধানের সরকারি ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। প্রতি কেজি আমন ধান ৩০ টাকা, প্রতি কেজি আমন সেদ্ধ চাল ৪৪ টাকা এবং আমন আতপ চালের দাম ৪৩ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হয়।
এরপর গত ২১ নভেম্বর খাদ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এ বছর আমন মৌসুমে দুই লাখ টন আমন ধান, চার লাখ টন সেদ্ধ চাল এবং এক লাখ টন আতপ চাল কেনা হবে। চলতি বছরের ২৩ নভেম্বর শুরু হয়ে সরকারের এই ধান-চাল সংগ্রহের কার্যক্রম চলবে আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
এ বছর (২০২৩-২৪ মৌসুম) সাড়ে ৫ লাখ টন সেদ্ধ চাল এবং দেড় লাখ টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নেয় সরকার। চলতি আমন মৌসুমে দুই লাখ টন ধান কেনা হচ্ছে ৩০ টাকা কেজি দরে। গত আমন মৌসুমের তুলনায় এবার ধানের দাম কেজিতে ৪ টাকা ও চালে কেজিপ্রতি ২ টাকা দাম বাড়ায় সরকার। আমন মৌসুমে ধান-চালের সরকার নির্ধারিত এ দাম গত বোরো মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহের দামের সমান।
খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (সংগ্রহ) মনিরুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, কৃষকরা এবার উৎসাহিত হয়েছেন। যে কারণে খাদ্য মন্ত্রণালয় ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা আরও ২ লাখ টন বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। আশা করছি, চলতি আমন মৌসুমে বর্ধিত লক্ষ্যমাত্রাও পুরোপুরি পূরণ হবে।
চলতি আমন মৌসুমে চালকল মালিকদের সঙ্গে ধান-চাল সংগ্রহের চুক্তি সম্পাদনের সর্বশেষ তারিখ ছিল গত ৭ ডিসেম্বর। ওই চুক্তির নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে চুক্তিকৃত সেদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা তিন লাখ ৯৪ হাজার ৯৮৯ টন। তবে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ১ লাখ ৮১ হাজার ২৩১ টন সেদ্ধ চাল ও ৩ হাজার ৫১৩ টন আতপ চাল সংগ্রহ করেছেন চালকল মালিকরা। খাদ্য মন্ত্রণালয় মনে করছে, পাক্ষিক ছাঁটাই ক্ষমতা অনুযায়ী চুক্তিকৃত চাল ১০ দিনের মধ্যে গুদামে সরবরাহ করা সম্ভব ছিল। সেজন্য সম্প্রতি চুক্তিবদ্ধ মিলমালিকদের দ্রুত চাল সরবরাহের তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট চুক্তিবদ্ধ মিলারদের ব্যাখ্যা তলব ও মিল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছে খাদ্য অধিদপ্তর।
দেশে চাল উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে বোরো। বছরে মোট উৎপাদিত চালের ৫৫ শতাংশ আসে বোরো থেকে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২৩ এর তথ্যানুযায়ী, গত পাঁচ বছরে বোরোর উৎপাদন বছরে যখন ১ কোটি ৯৫ লাখ টন থেকে ২ কোটি ৯ লাখ টনের মধ্যে সীমাবদ্ধ, তখন দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা আমন উৎপাদনের পরিমাণ বছরে ১ কোটি ৩৯ লাখ ৯৪ হাজার টন থেকে ১ কোটি ৪৯ লাখ ৫৮ হাজার টনের মধ্যে রয়েছে। অন্যদিকে তৃতীয় অবস্থানে থাকা আউশের বার্ষিক উৎপাদনের পরিমাণ সীমাবদ্ধ ছিল ২৭ লাখ থেকে ৩২ লাখ ৪৫ হাজার টনের মধ্যে। সে কারণে সরকার ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানে বোরোর পর আমনের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে।