তিন প্রকল্পের আট খালে তিন চিত্র

সরেজমিন জলাবদ্ধতা প্রকল্প : সদরঘাট থেকে চাক্তাই

# উন্মুক্ত থাকছে সদরঘাট-১ ও ২
# জুনের মধ্যে স্লুইস গেট বসবে টেকপাড়া, কলাবাগিচা ও মরিয়ম বিবিতে
# বর্ষা শেষে স্লুইস গেট বসবে ফিরিঙ্গীবাজার, চাক্তাই ও রাজাখালীতে

ভূঁইয়া নজরুল <<

সদরঘাট থেকে চাক্তাই পর্যন্ত আট খালে তিন চিত্র। এদের মধ্যে কোনোটিতে বর্ষার আগে স্লুইস গেট লাগবে, কোথাও উন্মুক্ত থাকবে আবার কোথাও আগামী বর্ষার আগে স্লুইস গেইট যুক্ত করা হবে।
এই আটটি খাল (সদরঘাট-১, সদরঘাট-২, ফিরিঙ্গীবাজার, টেকপাড়া, কলাবাগিচা, মরিয়মবিবি, চাক্তাই ও রাজাখালী) দিয়ে নগরীর বিশাল অংশের পানি অপসারিত হয়ে থাকে।
সোমবার সদরঘাট থেকে চাক্তাই পর্যন্ত সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সদরঘাট-১ নম্বর খালের উভয় পাশে রিটেনিং দেয়ালের কাজ এখনো চলছে, খালের ভেতরে রয়েছে মাটির স্তূপ, খালের পানি প্রবাহিত হচ্ছে পাইপ দিয়ে। সদরঘাট-২ নম্বর খালেও একই চিত্র। এই দুই খালে কোনো স্লুইস গেটের কাজ চলছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মো. শাহ আলী বলেন, ‘এই দুটি খালের মাটি অপসারণ ও রিটেনিং দেয়ালের কাজ এপ্রিলের মধ্যে শেষ করতে পারবো। তারপর তা উন্মুক্ত করে দেবো।’

রাজাখালী খাল

কিন্তু এই দুই খালের মুখে স্লুইস গেটের কোনো কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না, তাহলে তো জোয়ারের পানি ঢুকবে। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই খাল দুটির মুখে স্লুইস গেট বসাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পের আওতায়। ওই প্রকল্পের আওতায় ২৩টি খালের মুখে স্লুইস গেট বসানো হবে।’
লে. কর্নেল শাহ আলীর উত্তরের প্রেক্ষিতে কথা হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন প্রকল্পের পরিচালক কর্নেল কবিরুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, ‘বিমান বন্দর এলাকায় ১৫ ও ১৭ নম্বর খালের মুখে স্লুইস গেট বসানো কাজ করছি। এছাড়া বাকি খালগুলোর মুখেও ডিজাইন চূড়ান্ত করে কাজ শুরু করবো। তবে এবছর সদরঘাট-১ ও সদরঘাট-২ খালে স্লুইস গেট বসানোর কাজ শেষ করা যাবে না।’
ফিরিঙ্গীবাজার খালের মুখে স্লুইস গেট বসানোর কাজ চলমান থাকলেও খালের ভেতর দিয়ে মাটির স্তূপ গেছে বহুদূর পর্যন্ত। একইসাথে কোতোয়ালী মোড় থেকেও এই খালের মুখে মাটির স্তূপ রয়েছে। এখনো রিটেনিং দেয়াল নির্মাণের কাজও শেষ হয়নি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে লে. কর্নেল মো. শাহ আলী বলেন, ‘এই খালটি একটু ধীরে চলছে। চলতি বর্ষায় বিকল্প উপায়ে পানি অপসারণ করবো। কারণ এই খালের উপর দিয়ে একটি রাস্তাও নির্মাণ করবো। তাই সময় লাগবে।’

সদরঘাট-২ নম্বর খালে

টেকপাড়া ও কলাবাগিচা খালে রিটেনিং দেয়াল ও স্লুইস গেটের কাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু এখনো খালের মাটি অপসারিত হয়নি। মরিয়ম বিবি খালেও স্লুইস গেটের কাঠামো বসানো হয়েছে কিন্তু রিটেনিং দেয়ালের কাজ শেষ হয়নি। এই দুই খাল প্রসঙ্গে লে. কর্নেল শাহ আলী বলেন, ‘মরিয়ম বিবি খালে রিটেনিং দেয়াল নির্মাণের কাজ পিছিয়ে রয়েছে। আশা করছি চলতি মাসে শেষ করা যাবে। আর তা করা গেলে এপ্রিলের মধ্যে খাল দুটি উন্মুক্ত করা যাবে। জুনের মধ্যে এসব খালের মুখে স্লুইস গেট বসানো হবে।’
এসব খাল পেরিয়ে গেলেই চোখে পড়বে বিশাল কর্মযজ্ঞ। চাক্তাই ও রাজাখালী খালের মুখে স্ল্ইুস গেট নির্মাণের কাজ চলছে। এই দুই খালে আবার নেভিগেশন চ্যানেলও থাকবে। অর্থাৎ নৌকা চলাচল করতে পারবে। কিন্তু আসন্ন বর্ষায় কিভাবে তা মোকাবেলা করা হবে জানতে চাইলে চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত ১২টি খালের মুখে স্লুইস গেট নির্মাণ ও চার লেন সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নির্বাহী প্রকৌশলী রাজীব দাশ বলেন, ‘বর্ষার আগেই খালের বাঁধ কেটে দেবো। এই সময়ের মধ্যে আমাদের স্লুইস গেট নির্মাণের কাঠামোর কাজ পুরোদমে শেষ হয়ে যাবে। বাকি থাকবে শুধু মেকানিক্যাল কাজ। অর্থাৎ স্লুইস গেট বসানো এবং পাম্প বসানোর কাজ। এগুলো বর্ষার পরে করবো।’
তিন প্রকল্পের সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কিছু খালের মুখে এবার স্লুইস গেট বসবে। কোনোটিতে স্লুইস গেটের কাঠামো নির্মাণ হয়েছে, তবে স্লুইস গেট বসবে বর্ষার পরে। আবার দুটি খালে এখনো স্লুইস গেটের কাজ শুরু হয়নি।

উল্লেখ্য, নগরীতে জলাবদ্ধতা নিরসনে তিনটি প্রকল্পের অনুমোদন রয়েছে। এরমধ্যে সিডিএ’র মেগা প্রকল্পের আওতায় সেনাবাহিনী নগরীর খালগুলো খনন ও সম্প্রসারণের কাজ করছে। চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত চারলেন সড়ক নির্মাণ ও ১২টি খালের মুখে স্লুইস গেট নির্মাণের একটি প্রকল্প রয়েছে। সর্বশেষ পতেঙ্গা থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত ২৩টি খালের মুখে স্লুইস গেট নির্মাণের একটি প্রকল্প রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের। এই তিন প্রকল্পের কাজ শেষ হলেই নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন হতে পারে।