সুপ্রভাত ডেস্ক »
মন্ত্রীর ‘সুনাম ক্ষুণ্ণের’ অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় খালাস পেয়েছেন সাংবাদিক প্রবীর সিকদার।
ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেন বৃহস্পতিবার ছয় বছর আগের এই মামলার রায় ঘোষণা করেন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, যাদেরকে এ মামলায় ‘ভিকটিম’ বলা হয়েছে, তারা নিজেরা এ মামলা করেননি বা তাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন কেউ এ মামলার বাদী নন। এমনকি তারা এ মামলায় সাক্ষীও ছিলেন না। মামলা করেছেন দূরের একজন, যার এ অভিযোগে মামলা করার এখতিয়ার নেই।
রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় প্রবীর সিকদার বলেন, “আমি ন্যায়বিচার পেয়েছি। আমি একা হলেও ন্যায়ের জন্য লড়াই করব।”
একাত্তরে শহীদের সন্তান প্রবীর সিকদার উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ এবং দৈনিক বাংলা ৭১ নামের পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক। তিনি এর আগে সমকাল ও কালের কণ্ঠে কাজ করেছেন।
২০০১ সালে দৈনিক জনকণ্ঠের ফরিদপুর প্রতিনিধি থাকার সময় সন্ত্রাসীর হামলায় গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গু জীবন যাপন করছেন তিনি।
এই সাংবাদিকের অভিযোগ, একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর `সহযোগী’ মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন লেখার কারণে ‘তার ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা’ ওই হামলা চালায়।
ফেইসবুকে লেখার মাধ্যমে সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ‘সুনাম ক্ষুণ্ণের’ অভিযোগ এনে ২০১৫ সালের ১৬ অগাস্ট ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় প্রবীরের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় এ মামলা করেন এপিপি স্বপন পাল।
শহীদ পরিবারের সন্তান প্রবীর ওই বছর ১০ অগাস্ট এক ফেইসবুক পোস্টে নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘তার কিছু হলে’ খন্দকার মোশাররফ, বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসের এবং ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক যুদ্ধাপরাধী আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার এবং তার অনুসারী-সমর্থকরা দায়ী থাকবেন।
এরপর ১৬ অগাস্ট সন্ধ্যায় রাজধানীর ইন্দিরা রোডের কার্যালয় থেকে প্রবীরকে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ। রাতেই তাকে নেওয়া হয় ফরিদপুরে।
এরপর ফরিদপুরের এপিপি স্বপন পাল তার বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করলে সে সময় গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। তথ্য-প্রযুক্তি আইনের অপব্যবহার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয় বিভিন্ন মহল থেকে।
ওই মামলায় সাংবাদিক প্রবীরকে রিমান্ডেও পাঠিয়েছিল আদালত। তবে রিমান্ডের ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই জামিনে মুক্তি পান প্রবীর সিকদার।
তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. মনির হোসেন ২০১৬ সালের ১৬ মার্চ ফরিদপুরের আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র জমা দিলে বিচারক মামলাটি ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে পাঠান।
ওই বছর ৪ অগাস্ট ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক কে এম শামসুল আলম এ মামলায় অভিযোগ গঠন করেন।
রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ২২ মার্চ আদালত এ মামলার রায়ের পর্যায়ে আসে। দুই দফা তারিখ পরিবর্তনের পর বৃহস্পতিবার প্রবীর সিকদারকে খালাসের সিদ্ধান্ত দিল আদালত।
এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রবীরের আইনজীবী আমিনুল গণী টিটো বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রবীর সিকদার সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করে তার ন্যায় পেয়েছেন। এ রকম শূন্যতায় প্রবীর সিকদার একজন বাতিঘরের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।”